‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফোনে বললেন, আমার সর্বনাশ করে ফেলেছে’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. সামন্ত লাল সেন লন্ডন থেকে আমাকে ফোন দিলেন। উনি তখন লন্ডন ছিলেন। বললেন, আমার তো সর্বনাশ করে ফেলছে। আমার ফেসবুক আইডিটা তারা ফেইক করে, এগুলো করতেছে।
আজ শনিবার (২৫ মে) রাজধানীর মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবিপ্রধান হারুন এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনের বিষয়বস্তু ছিল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্তলাল সেনের পরিচয়ে খোলা হয় ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও তা ব্যবহার করে প্রতারণা করা।
হারুন অর রশীদ বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রোফাইল থেকে হেয়ার টনিকসহ রূপচর্চার বিভিন্ন হারবাল পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নাম ব্যবহারের কারণে মানুষ বিশ্বাস করে এসব পণ্যের অর্ডার করে। এ ব্যাপারে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে হারবাল সামগ্রী বিক্রির রমরমা বাণিজ্যে জড়িত একজন ভিয়েতনামী নাগরিকসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—ভিয়েতনামী নাগরিক ট্রান-আনহ-থো ওরফে মিস্টার টনি ও নুরুল আমিন ওরফে ইয়ামিন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার রাতে গুলশান এলাকায় ডিবি সাইবার ক্রাইম বিভাগের (দক্ষিণ) একটি অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন, চারটি ল্যাপটপ ও প্রতারণার ব্যবহৃত বিভিন্ন চাইনিজ ও ভিয়েতনামি পণ্য উদ্ধার করা হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভুয়া ফেসবুক আইডি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। এক পর্যায়ে আমরা দেখতে পাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নাম-ছবি ব্যবহার করে হেয়ার টনিক এবং চুলের ট্রিটমেন্টসহ বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করা হচ্ছে।’
এর সূত্র ধরে ডিবি গুলশানে অভিজাত এলাকায় একটি ‘ইউনিক শিপিং এজেন্সি’ নামে কোম্পানির সন্ধান পায়। যারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ দেশের বিভিন্ন সেলিব্রেটি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম-ছবি ব্যবহার করে ভিয়েতনাম ও চীন থেকে আমদানি করা নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করে আসছে।
প্রতারণার বিষয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, টনি ও নুরুল আমিন প্রতারণা চক্রের মূল এজেন্ট। তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বিভিন্ন সেলিব্রেটিদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক পেইজ খুলে বিজ্ঞাপন দেয়। এই ভুয়া ফেসবুক পেইজগুলো ভিয়েতনাম থেকে মি. ডং নামে একজন পরিচালনা করেন।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, আর সেই চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে দেশের সাধারণ মানুষ পেইজে অর্ডার করে। এরপর ভিয়েতনামে থাকা এই চক্রের মার্কেটিং গ্রুপ থেকে ‘ইউনিক শিপিং এজেন্সি’ নামের কোম্পানিতে বাংলাদেশে কর্মরত ব্যক্তিদের কাছে তথ্য পাঠানো হয়। সেখান থেকে ভুয়া নামে রেজিস্ট্রেশন করা নাম্বার থেকে গ্রাহককে ফোন করে অর্ডার নিশ্চিত করে কুরিয়ারে পণ্য পৌঁছে দেয়।
এসব নিম্নমানের পণ্য ভিয়েতনাম-চীন থেকে আনা হলেও বাংলাদেশে বিপণনের কোনো বৈধতা নেই। সাধারণ মানুষকে এসব বিজ্ঞাপণ দেখে পণ্য কেনা থেকে সতর্ক থাকতে বলেন মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।