শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সফল খামারি হুমায়ুন
হুমায়ুন কবিরের ডান হাত অচল। পা-ও তেমন কাজ করে না। এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় থেমে যাননি তিনি। নিজের ইচ্ছেশক্তিকে পুঁজি করে এগিয়ে যাচ্ছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি একটি গরুর খামার গড়ে তুলেছেন।
কুমিল্লা নগরী থেকে ১০ কিলেমিটার দূরে বুড়িচং উপজেলার মিথিলাপুর গ্রামে হুমায়ুন কবিরের এই গরুর খামার।
হুমায়ুন কবিরের পারিবারিক সূত্র জানায়, তিনি প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এরপর যোগ দেন বহুজাতিক একটি কোম্পানিতে। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ডান হাত ও পা অকেজো হয়ে যায় তাঁর। ফিরে আসেন গ্রামের বাড়ি মিথিলাপুরে। ভাই ও বন্ধুদের সহযোগিতায় গড়ে তোলেন সমন্বিত খামার। তাঁকে সহযোগিতা করেন বিদেশফেরত ছোট ভাই সাইদুল কবীর মুন্না।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গরুর জন্য বড় জমিতে চাষ করা হয় বিদেশি ঘাস। ঘাস এনে গরুকে দেওয়া হচ্ছে। ঘাস কাটা, খড় কাটা, খৈল ভূষি দেওয়া ও পরিচ্ছন্নতায় সহযোগিতা করেন সাইদুল কবীর মুন্না। খামারে থাকা কালু ও সোনা দেখতে তেলতেলে। অপরিচিত কাউকে দেখলে তেড়ে আসে। হুমায়ুন কবিরকে দেখে তারা শান্ত হয়। তিনিও গলা এবং মাথা চুলকে দিয়ে তাদের আদর করেন।
সাইদুল কবীর মুন্না বলেন, ‘আমরা গরুকে ঘাস, খড়, খৈল ও ভূষি ছাড়া কৃত্রিম কিছু খাওয়াই না। কোরবানির পশুটি যেন বিনা দ্বিধায় ক্রেতারা ক্রয় করতে পারেন, সেভাবে পরিচর্যা করছি।’
হুমায়ুন কবির বলেন, ১১টি গরুর মধ্যে ৯টি বিক্রি হয়ে গেছে। আর আছে দুটি। সোনা মিয়া ও কালু মিয়া। এগুলো শাহিওয়াল জাতের। সোনার দাম তিন লাখ এবং কালুর দাম আড়াই লাখ টাকা। আমাদের খামার থেকে গরু কেনায় কোনো ঝামেলা নেই। অনেক ক্রেতার গরু রাখার জায়গা থাকে না। ক্রেতার ইচ্ছে অনুযায়ী গরু বিনা খরচে আমাদের খামারে রাখা যাবে। খরচ ছাড়া পরিবহণের মাধ্যমে গরু বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ছাড়া বাসায় নেওয়ার পর কয়েক বেলা গরুর খাবার বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে।
আলোকিত বজ্রপুর সংগঠনের সংগঠক রফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, হুমায়ুন কবির শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও সমন্বিত খামার গড়ে তুলেছেন। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন। তার মতো অন্য শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বেকার তরুণরাও উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন।
বুড়িচংয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায় বলেন, ‘হুমায়ুন কবির একজন পরিশ্রমী উদ্যোক্তা। তাঁর গরুসহ সমন্বিত কৃষি খামারটি পরিদর্শন করেছি। এ রকম আরও উদ্যোক্তা তৈরিতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।’