‘ছাগলকাণ্ডে ভাইরাল ইফাত আমার ছেলে নয়’
একের পর এক ফোন আসছে ড. মতিউর রহমানের মুঠোফোনে। একটি শেষ করার আগেই অপেক্ষমান আরেকটি ফোন। দিনভর এমন অগুনতি ফোন পেয়ে রীতিমতো হয়রান তিনি। সবার জিজ্ঞাসা স্যোশাল মিডিয়ায় এসব কি দেখছি! আত্মীয়-স্বজন থেকে বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকেই রয়েছেন এই ফোন কলারের তালিকায়।
পেশাগত জীবনে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা মোকাবিলা করেছেন। তবে তিন দশকের চাকরি জীবনে কখনো এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ড. মতিউর রহমান।
ঈদুল আজহায় ১৫ লাখ টাকার ছাগল নিয়ে ঘটা লঙ্কাকাণ্ডে স্যোশাল মিডিয়ায় তার সন্তানকে জড়িয়ে হাজারো আইডি থেকে নেতিবাচক নানা পোস্টে বাকরুদ্ধ বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমান। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইবুন্যালের প্রেসিডেন্ট।
বংশ মর্যাদা সম্পন্ন গরুর পর ঢাকার সাদিক এগ্রোর ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ছাগল নিয়ে ঈদের আগে বেশ চর্চা চলে ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায়। ধূসর বাদামি রঙের বিরল ‘বিটল’ প্রজাতির ছাগলটির ওজন ১৭৫ কিলোগ্রাম এবং উচ্চতা ৬২ ইঞ্চি। বিরল প্রজাতির এই ছাগলটি বাংলাদেশে একটিই আছে এমন দাবি সাদেক এগ্ৰোর।
সেই ছাগলের সাথে ছবি তুলে সেটি ১২ লাখ টাকায় কোরবানির জন্য কেনা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক তরুণের উচ্ছ্বসিত হয়ে পোস্ট দেয়ার পর তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা, সমালোচনা। উচ্ছ্বসিত ভঙিতে ইফাত বলেছিলেন, এরকম একটি খাসি কেনা আমার স্বপ্ন ছিল।
সেই পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্লেখ করেন আলোচিত ওই তরুণ, রাজস্ব কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমানের ছেলে। তারপর থেকেই ড. মতিউর রহমানকে নিয়ে শুরু হয় কাটাছেঁড়া। তার পেশাগত জীবনের ব্যবচ্ছেদও শুরু হয় ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সেখানে রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ছাড়াও সোনালী ব্যাংকের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা ড. মতিউর রহমানের দুর্নীতি নিয়েও বিভিন্ন রকমের নেতিবাচক পোস্ট দিতে দেখা গেছে নেটিজেনদের। তবে ড. মতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায় ভিন্ন তথ্য। তিনি এই বিষয়ে বিস্ময় জানিয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “এমন অপপ্রচার সত্যিই দুঃখজনক। আমি সাদিক এগ্রোর চেয়ারম্যান ইমরান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছেন, আলোচিত তরুণ প্রকৃতপক্ষে একটা টাউট। ১২ লাখ টাকায় ছাগলটি বিক্রির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। সেই তরুণ কেবলমাত্র এক লাখ টাকা দিয়ে ছাগলটি বুক করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পুরো টাকা পরিশোধ করে ছাগলটিকে ঈদের তিনদিনেও খামার থেকে বাড়িতে নিয়ে যাননি। ভাইরাল হওয়া ইফাতের ফেইসবুক প্রোফাইল লক পাওয়া গেছে। বন্ধ রয়েছে তার ব্যবহৃত ফোনটিও।
ড. মতিউর রহমান আরও বলেন, “ইফাত নামে আমার কোনো ছেলে নেই। এমনকি এই নামে আমার কোনো আত্মীয় বা পরিচিতও নন। আমার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলের নাম আহমেদ তৌফিকুর রহমান আর মেয়ের নাম ফারহানা রহমান। থাকে কানাডায়। আমার ছেলে অত্যন্ত ধার্মিক। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। বিদেশে পড়াশোনা করে এসেছে। ১ লাখ ডলারের চাকরি ছেড়ে এখন আমাদের সঙ্গে বসুন্ধরায় থাকে। ওর মতো সহজ সরল নিভৃতচারী সন্তানকে নিয়ে এই অহেতুক অপপ্রচার আমাদের পীড়িত করেছে। ছেলের জন্য আমার কষ্ট হয়। তবে ওর ঈমানের জোর দেখে আমরাও হতবাক।”
“এসব অপপ্রচারে উল্টো আমাদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেছে, যারা আমাদের বিরুদ্ধে সম্মান নষ্ট করার মিশনে নেমেছে, আমাদের হয়রানি করছে, আল্লাহ তাদের হেদায়েত করবেন।”
“একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। আমি এ বিষয়ে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহায়তা চেয়ে আইনি পদক্ষেপে যাচ্ছি”- যোগ করেন ড. মতিউর রহমান।
কারা আপনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মতিউর রহমান জানান, “ভ্যাট প্রশাসনে সরকারি রাজস্ব আহরণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। যেখানে কাজ করেছি সেখানেই লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করেছি। এসব কারণে একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। এনবিআরে আমার পেশাগত জীবনের বিভিন্ন ধাপে যখনই পদোন্নতি হয়েছে তখনই চক্রটি এভাবে অপপ্রচার করে আমাকে হয়রানি করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে বেনামী অভিযোগ দিয়ে আমাকে হেনস্তাও করেছে। এখন পর্যন্ত চারবার দুর্নীতি দমন কমিশন আমার সম্পদের অনুসন্ধান করেছে। কিন্তু তারা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত কোনো সম্পদ পায়নি।”
একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার বিষয়টিও কি অপপ্রচার? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মতিউর রহমান বলেন, “এটাও সাংঘাতিক ধরনের অপপ্রচার। পেশাগত জীবনে মাথা উঁচু করে চাকরি করেছি। কখনো দুর্নীতির সঙ্গে আপস করিনি। কেউ যদি দুর্নীতির ন্যূনতম কোন প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে যা শাস্তি দেবেন তাই মাথা পেতে নেব।”
ড. মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি ছিলেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বর্তমানে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।