টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা যুবকের জন্মনিবন্ধন, ইউপি সচিব গ্রেপ্তার
ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে রোহিঙ্গা যুবকের জন্মনিবন্ধন তৈরির অভিযোগে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোম্পানীগঞ্জ-মুরাদনগর সড়কের নিমাইকান্দি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ইসমাইল কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার গুনাইনন্দী গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজেশ বড়ুয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে এক রোহিঙ্গা যুবককে জন্ম নিবন্ধন তৈরি করার কথা স্বীকার করেছেন ইউপি সচিব ইসমাইল। তাকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
যেভাবে সামনে আসে রোহিঙ্গা যুবককে জন্মনিবন্ধনের বিষয়টি
চলতি বছর জানুয়ারিতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসে মো. ইয়াছিন (১৯)। সে মিয়ানমারের বলিবাজার এলাকার সৈয়দ হোসেনের ছেলে। বাংলাদেশে আসার পর কক্সবাজার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-৯ থাকতো সে। গেলো ১৫ ফেব্রুয়ারি পাসপোর্ট তৈরির জন্য মুরাদনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘোড়াশাল গ্রামের ভুয়া পরিচয়ে জন্মনিবন্ধন বানিয়ে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যায় মো. ইয়াছিন। এ সময় পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা যুবক ইয়াছিনকে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। গোয়েন্দা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রোহিঙ্গা যুবক ইয়াছিন জানায়, তার চাচাতো ভাই উসমান কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন মদিনা ট্রাভেলসের হাসান মাহমুদ ও মোশাররফ নামে ২ দালালের কাছে পাসপোর্ট করার চুক্তি করে। পরে চুক্তি অনুযায়ী, হাসান মাহমুদ ও মোশাররফ কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার পশ্চিম ঘোড়াশাল গ্রামের ভুয়া ঠিকানায় রোহিঙ্গা যুবক ইয়াছিনের সকল কাগজপত্র তৈরি করে দেয়।
এই ঘটনায় সে সময় কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করে গোয়েন্দা পুলিশ। রোহিঙ্গা যুবক কীভাবে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করেছেন এ বিষয়টির তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তে ইউপি সচিব ইসমাইল হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পায় গোয়েন্দারা। তথ্য অনুসন্ধানের পর গতকাল বৃহস্পতিবার ইউপি সচিব ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
নাম না প্রকাশের শর্তে মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা জানায়, বৈধভাবে অনেকেই জন্মনিবন্ধন বানাতে পারে না। তবে পর্যাপ্ত টাকা হলে ইউপি সচিব যে কারো যে কোন অসংগতিপূর্ণ ঠিকানার জন্মনিবন্ধন বানিয়ে দিতে পারতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন কাজে সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান কাজী তুফরীজ এটনের জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান কাজী তুফরীজ এটন বলেন, রোহিঙ্গা যুবককে জন্মবিন্ধন বানানোর ঘটনা ঠিক না। আইডি হ্যাকড হয়েছে। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।
মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত সরকারি মামলায় ইউপি সচিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের সেবা চালু রাখার জন্য ভারপ্রাপ্ত হিসেবে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।