ফাইয়াজের রিমান্ড বাতিল, শিশু আইনে সুরক্ষার নির্দেশ
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা মামলায় ১৭ বছরের কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের রিমান্ড বাতিল করা হয়েছে মর্মে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। আজ রোববার (২৮ জুলাই) কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটের শুনানিতে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ তথ্য জানায়।
পরে আদালত ১৭ বছরের ফাইয়াজকে শিশু আইন অনুযায়ী সুরক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে শিশুটিকে বাবা-মায়ের হেফাজতে দিতে বলেন আদালত। আদালত আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে।
জন্ম নিবন্ধন অনুসারে, হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সে। সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় মাতুয়াইল হাসপাতালের বিপরীত পাশে এক পুলিশ সদস্যকে মেরে ঝুলিয়ে রাখার মামলায় ১৭ জন আসামির মধ্যে ১৬ নম্বর আসামি এ শিক্ষার্থী।
পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে লাশ গুম ও এই কাজে সহায়তাসহ তার মোটরসাইকেল চুরির মামলায় আসামি হিসেবে গত ২৭ জুলাই ঢাকার নিম্ন আদালতে হাজির করা হয় ফাইয়াজকে। মামলার এজাহারে ফাইয়াজের বয়স দেখানো হয়েছে ১৯ বছর।
ফাইয়াজের আইনজীবী ইশতিয়াক হোসেন বলেন, জন্ম নিবন্ধন ও এসএসসির সার্টিফিকেট অনুসারে ফাইয়াজের বয়স ১৭ বছর ৩ মাস ৮ দিন। যাত্রাবাড়ী থানার এ মামলায় আদালতে ফাইয়াজের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আমরা বয়সের কারণে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করি এবং এ মামলাটি শিশু আদালতে প্রেরণের অনুরোধ করি। তবে আদালত অপারগতা প্রকাশ করেন।
আইনজীবী আরও বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত রিমান্ড না দিয়ে মামলাটি নথিভুক্ত রেখে বয়স প্রমাণের অন্যান্য পদ্ধতি অনুসরণ করে তাকে শিশু কারাগারে প্রেরণের অনুরোধ করি। আদালত এ বিষয়েও অপারগতা প্রকাশ করে ৭ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। আমি মনে করি, ফাইয়াজের সাতদিনের রিমান্ড একটি বিতর্কিত আদেশ।
মামলায় ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানাসহ সাত জনকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয় আদালত। ওই সাতজনের মধ্যে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের বয়স এখনো ১৮ হয়নি বলে তার আইনজীবীর ভাষ্য।
ফাইয়াজের আরেক আইনজীবী মো. মুজাহিদুল ইসলাম শনিবার আদালতে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চেয়েছিলেন। ফাইয়াজকে ‘শিশু’ দাবি করে রিমান্ডে না পাঠানোর আর্জি জানিয়েছিলেন। এর আগে শুনানি শেষে মহানগর হাকিম শান্তা আক্তার জামিন নাকচ করে ফাইয়াজকেও রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন।
আইনজীবী মুজাহিদুল বলেন, “কোনো মামলাতেই শিশুকে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাকে আসামিও বলা যায় না। বলতে হয়, আইনের সঙ্গে সংঘাতে আসা শিশু।”
এই প্রেক্ষাপটে শিশু আইনের ২১ ধারা অনুযায়ী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে শিশু ঘোষণা করে তাকে শিশু আইনের যাবতীয় আইনগত সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য রোববার যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার এখতিয়ারাধীন ঢাকার-৩ নম্বর শিশু আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী মুজাহিদুল। শুনানিতে ফাইয়াজের জন্মনিবন্ধন সনদ এবং ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের অনলাইন কপি দাখিল করে এ আইনজীবী বলেন, তার জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। সে অনুযায়ী তার বয়স ১৭ বছর ৩ মাস ৮ দিন।
শিশু আদালতে দাখিল করা লিখিত আবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের শিশু আইনের ২০ ধারায় বলা হয়েছে, “আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন, আদালতের রায় বা আদেশে ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, অপরাধ সংঘটনের তারিখই হইবে শিশুর বয়স নির্ধারণের জন্য প্রাসঙ্গিক তারিখ।