কবি-লেখক সমাজের প্রতিবাদ কর্মসূচি
কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হত্যা, গ্রেপ্তার ও নিপীড়নের প্রতিবাদে ও রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন কবি-সাহিত্যিকরা। বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
আজ শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সামনে এ মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। এ সময় গণহত্যা ও দেশব্যাপী চলমান পরিস্থিতির তীব্র নিন্দা জানানো হয়। কবি-সাহিত্যিকরা বলেন, দেশের পরিস্থিতি দেখে আমরা হতবাক। কোনোভাবেই এটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র মনে হচ্ছে না। ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। পুরো দেশের মানুষ আজ অদৃশ্য কারাগারে বন্দি। চলমান সব ঘটনা একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনীর নিপীড়নের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গবেষক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, কবি কাজল শাহনেওয়াজ, কবি টোকন ঠাকুর, আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি বকুল আশরাফ, কথাসাহিত্যিক আশরাফ জুয়েল, কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন, কথাসাহিত্যিক মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সরোজ মেহেদী, কথাসাহিত্যিক কিঙ্কর আহসান, ফটোসাংবাদিক সুদীপ্ত সালাম, কবি জব্বার আল নাঈম, লেখক ও সাংবাদিক আবিদ আজম, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, কবি পলিয়ার ওয়াহিদ, কবি ও গবেষক ইমরান মাহফুজ, কবি নকিব মুকশি এবং কথাসাহিত্যিক নিমগ্ন দুপুর প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সংহতি প্রকাশ করেন লেখক ফরিদুল ইসলাম নির্জন, কবি আল হাফিজ, পথিক রানা, ফারুক আহমেদ খান, সাম্য শাহ্, নাহিদ যাযাবর, রাকিব লিখন, মোস্তফা মাহাথির, রাফসান গালিব, সালমান হাবিব, তানিয়া সুলতানা, হালিমা মুক্তা, মানজুলুল হক, রাব্বি আহমেদ, তানজিনা ফেরদৌস, সীমান্ত আকরাম, ফারজানা ববি, রাসেল আহমেদ, জুবায়ের ইবনে কামাল ও রিয়াজ ইনসান।
নিজ বক্তব্যে শহীদুল্লাহ ফরায়েজী বলেন, গণহত্যা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে একজন লেখক বেঁচে থাকলে প্রতিবাদ চলবে প্রতিমূহূর্তে। অন্যায়ের প্রতিবাদে মারা গেলে সেটাই হবে আমাদের বেঁচে থাকা।
কবি টোকন ঠাকুর বলেন, একাত্তরের পরে এমন ঘটনা মানুষ দেখেনি। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যা ঘটল, তাতে আমরা স্তব্ধ। এর মাঝে আমরা কোনো হত্যার বিচার চাই না, কার কাছে চাইব? শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের একাত্মতা পোষণ করি। এখন আমাদের কথা বলতে হবে। হত্যার নিন্দা করি কবি লেখক সমাজ।
ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, স্বাধীন দেশে এমন নির্মমতা মেনে নেওয়া যায় না। নানানভাবে আমরা দেখেছি স্বজনহারা মানুষ নিস্তব্ধ। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন আবু সাঈদদের পিতা-মাতারা। নিজের সামনে প্রাণ যাওয়া সন্তানের পরিবার বাকরুদ্ধ। হাসপাতালের বিছানায় কাতর অনেকে। মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করা মানুষ ভুলে যাচ্ছে জীবনের স্বাদ। এইভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। এর একটা সমাধান চাই আমরা।
কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন বলেন, যে চেতনায় স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলাম, যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নাগরিক অধিকার নিয়ে থাকতে চেয়েছিলাম, তা ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে, গেছে। এখন আমরা এমন এক স্বাধীন, গণতান্ত্রিক দেশে বাস করি যেখানে বলতে ভয়, লিখতে ভয়, দাবি জানাতে ভয় পাই। তাদের সমালোচনা করা যাবে না। এ কেমন স্বাধীনতা? এমনতো চলতে পারে না। ছাত্ররা তাদের ন্যয়সঙ্গত দাবি করতে পারবে না? এইজন্য গুলি করবে? এ কেমন দেশ? মানবিক মানুষ হিসেবে হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
আশরাফ জুয়েল বলেন, একাত্তরের পাক হানাদার সরকারের দোসরদের সঙ্গে, এই গণধিকৃত সরকারের দলদাসদের নীতিগত কোন পার্থক্য নেই।
নিমগ্ন দুপুর বলেন, আপনার বাচ্চাকে রাষ্ট্রযন্ত্র হত্যা করে যদি বিনিময়ে একটা চেক ধরিয়ে দেয়, তাহলে আপনি নেবেন? এই গণহত্যাকারী, নাটকবাজ ও মিথ্যাবাদী সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
কথাসাহিত্যিক কিঙ্কর আহসান, গণগ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেই হবে। যেখানে লড়াইটা ন্যায়ের, বেঁচে থাকার সেখানে অধিকারের জন্য পথে নামতে হবে। আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই। আমরা শুধু চাই ন্যায়বিচার, শান্তি আর স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে। এইটুকুন আমাদের একজন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই প্রাপ্য।
ইমরান মাহফুজ বলেন, সাধারণ একটি বিষয়কে অহেতুক দীর্ঘ করে হত্যার দিকে নিয়ে গেছে সরকার। আজও যা করছে তা অপ্রত্যাশিত। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করি। কিন্তু হত্যার বিচার চাই না, বিচার কার কাছে চাইব? আমরা বিক্ষুব্ধ কবি লেখক সমাজ। অন্যদিকে, যারা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে না তারা লেখক না।
কর্মসূচির অন্যতম সমন্বয়ক লেখক ও সাংবাদিক আবিদ আজম বলেন, জাতির পতাকা আজ খামছে ধরেছে সেই পুরনো শুকুন। তাই শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাজপথে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি আমরা।