আতঙ্ক পরিণত হলো আনন্দে, লাঠিসোটা ফেলে দিলেন জনতা
ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট। দুপুর ১২টা। তখনও শাহবাগ মোড়ে সর্বোচ্চ ৫০০ জন আন্দোলনকারীর অবস্থান। সবার চোখে-মুখে আতঙ্ক। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে সাঁজোয়াযানসহ সেনা সদস্যদের অবস্থান। শাহবাগের দিকে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি, গণমাধ্যমকর্মী বা তাঁদের স্টিকারযুক্ত গাড়িও না।
পরিবাগ মোড়ের গলির মধ্য দিয়ে শাহবাগ মোড়ে পৌঁছায় আমরা। খন সেখানে সর্বোচ্চ ৫০০ জন আন্দোলনকারীর অবস্থান। এর ঠিক মিনিট পাঁচেক পর ওই গলি দিয়ে বের হয়ে অন্তত ১০০ আন্দোলনকারী শাহবাগ মোড়ে পৌঁছে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংখ্যা। সেই সংখ্যা গিয়ে ঠেকে হাজার দুয়েকে।
সময় দুপুর দেড়টা। হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটি বিশাল মিছিলে। স্লোগানে স্লোগানে মিছিলটি ওই পথ দিয়েই এলো, যে পথ এতোক্ষণ সেনাবাহিনীর সদস্যরা আটকে রেখেছিলেন।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষের লম্বা মিছিল। এ যেন জনস্রোত! তাকিয়ে মিছিলেন শেষটা দেখার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। এই শুরু! এভাবে বিক্ষুব্ধ মানুষ হুড়োহুড়ি করে ঢুকতে থাকে শাহবাগের দিকে। অধিকাংশের হাতে লাঠিসোঁটা।
সে সময় এক সেনা সদস্যকে মাইকে বলতে শোনা গেল, ‘আমরা আপনাদের গুলি করতে এখানে দাঁড়াইনি। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব। আপনারাও আমাদের সহযোগিতা করবেন। আপনারা কেউ ভাঙচুর করবেন না। আমরা আপনাদের পাশে আছি।’
সময় দুপুর ২টা। একইভাবে হাজার হাজার আন্দোলনকারী যাচ্ছে শাহবাগের দিকে। শাহবাগের আকাশ-বাতাস তখন স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত। এমন এক সময় ওই সেনা সদস্য আবার মাইকে ঘোষণা দিতে থাকেন, ‘আপনাদের হাতে থাকা সব লাঠিসোটা এখানে রেখে যান। আমরা আপনাদের নিরাপত্তা দেব। আপনারা চিন্তা করবেন না।’
সেনা সদস্যের এ ঘোষণা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেন। অধিকাংশ আন্দোলনকারী একে একে লাঠিসোটা রাখা শুরু করেন ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে। ওই সেনা সদস্য মাইকে ঘোষণা দিতে থাকেন, ‘লাঠিসোটা রেখে ভেতরে যান সবাই।’
একটু বাদে সেখানেও যেন জনস্রোত বয়ে যায়। যার হাতে যে ধরনের লাঠি ছিল, সবাই রেখে ভেতরে যেতে থাকেন। সেনাবাহিনীর প্রশংসা করতে লাগলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাখা লাঠিতে লাঠিতে ভরে ওঠে ওই মোড়।
পৌনে ৩টা। তখনও মানুষের চোখে-মুখে আতঙ্ক। এ সময় অন্তত ১০ জন আন্দোলনকারী এ প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করছে? সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়েছে?’ এরপর ৩টা ১০ মিনিটের দিকে মোটামুটি আন্দোলনকারী নিশ্চিত হয়ে যান, ক্ষমতা ছেড়ে দেশের বাইরে পালিয়েছেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে লাখ লাখ আন্দোলনকারী সামিল হয়েছেন শাহবাগ ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় এলাকায়।
এরপর থেকে ওই লাখ লাখ আন্দোলনকারী যাত্রা শুরু করেন গণভবনের অভিমুখে। বিশাল মিছিল। এ মিছিল শেষ হয়েছে গণভবনে গিয়ে। এমন দৃশ্য দেখা মেলা ভার। এরপর গণভবনমুখী এ যাত্রা চলতে থাকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত।