কোল পাওয়ারের এমডির পদত্যাগ ও মেঘনার সঙ্গে চুক্তি বাতিলে মানববন্ধন
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হকের পদত্যাগ ও মেঘনার সঙ্গে সম্পাদিত কয়লা চুক্তি বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। আজ বৃহস্পতিবার কাজী নজরুল ইসলামী সরণিতে অবস্থিত কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির অফিসের সামনে দুপুর ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে তিন শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে ফিরোজ কবীর বলেন, বিগত সরকারের দোসররা পরিকল্পিতভাবে সরকারের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। অবিলম্বে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট কোম্পানি মেঘনার সাথে কয়লার টেন্ডারচুক্তি বাতিল করতে হবে। কোল পাওয়ার জেনারেশনের এমডি নাজমুল হককে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। চুক্তি বাতিল ও এমডির পদত্যাগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
ফিরোজ কবীর ঘোষণা দেন যে, আগামী সোমবারের মধ্যে মেঘনা গ্রুপের সাথে সম্পাদিত দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করতে হবে। কোল পাওয়ারের এমডিকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। তা না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের ক্ষমা নাই।
মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মেঘনা গ্রুপের কোম্পানি ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং ভারতের আদিত্য বিড়লা গ্লোবাল ট্রেডিং কম্পানি পিটিইর (সিঙ্গাপুরের রেজিস্টার্ড) কনসোর্টিয়ামকে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানকে বাজারমূল্যের চেয়ে বাড়তি দরে কয়লা ক্রয়ের কার্যাদেশ দেওয়ায় এক বছরে সরকারের গচ্চা যাবে ৯১৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর দায় কোল পাওয়ার জেনারেশনের এমডি নাজমুল হকের। মেঘনা গ্রুপ ও ভারতীয় কোম্পানির সাথে অসম চুক্তি বাতিল এবং কোল পাওয়ারের এমডির পদত্যাগের দাবিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা মানববন্ধনে মিলিত হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তরা জানান, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (সিপিজিসিবিএল) কক্সবাজারের মাতারবাড়ির বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা কেনার লক্ষ্যে দরপত্র দলিলসমূহ মূল্যায়নের জন্য কোল পাওয়ারের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হককে আহ্বায়ক করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি মেঘনা গ্রুপ ও আদিত্য বিড়লার প্রস্তাবিত দর মূল্যায়ন করে বর্তমান বাজার দর থেকে অনেক বেশি বলে উক্ত প্রস্তাবিত দর গ্রহণযোগ্য নয় বলে বোর্ডের কাছে সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে মূল্যায়ন কমিটিকে ফ্যাসিবাদী সরকারের বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত দর্পণ মূল্যায়ন করতে বলা হলে কমিটি একই রিপোর্ট সুপারিশ করেন।
বক্তারা জানান, পরবর্তীতে সরকারের প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হলে তড়িঘড়ি করে পূর্বের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বাদ দিয়ে নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও বোর্ড পরিচালকবৃন্দ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার প্লান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম, ব্যারিস্টার মইন গনি ও জনাবা মনোয়ারা হাকিম আলীর সুপারিশের প্রেক্ষিতে নাজমুল হককে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়, শুধু কয়লা একটি নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দেওয়ার জন্য। নাজমুল হককে বলা হয়, পরবর্তীতে উনাকে পার্মানেন্টলি ব্যবস্থা পরিচালক করে দেওয়া হবে। বোর্ড মিটিংয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের সার্কুলার দেওয়ার কথা থাকলেও অদ্যবধি কোন সার্কুলার দেওয়া হয়নি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির কাছ থেকে বেশি দামে কয়লা এর জন্য।
পরবর্তীতে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হক পরিচালক ফ্যাসিবাদ সরকারের পূর্বের বোর্ড মেম্বারদেরকে খুশি করার জন্য প্রায় কোটি কোটি টাকা বেশি দিয়ে ম্যাগনাও আদিত্য বিল্লার সাথে কুল পাওয়ারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগোচরে চুক্তি সম্পাদন করে। এতে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসর ডিজিএম এইচআর নীতিশ দত্ত, ডিজে এম ফিন্যান্স ফজলুল করিম, কোল পাওয়ারের কোম্পানি সচিব মেরাজ গং। আর এই কাজে প্রচুর অর্থ অবৈধভাবে গ্রহণ করে ভাগ বাটোয়ারা করে নিজেদের মধ্যে। একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু এই অসম চুক্তির নেপথ্যে ভূমিকা পালন করেন।