উপদেষ্টারা কে, কোথায় ছিলেন?
বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শপথ নিয়েছেন। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকার পতনের তিন দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে বঙ্গভবনে ড. ইউনূসকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আজ শুক্রবার (৯ আগস্ট) দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। ড. ইউনূসের হাতে ২৭টি মন্ত্রণালয় রাখা হয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এছাড়া অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ড. আসিফ নজরুল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ; ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আদিলুর রহমান খান শিল্প মন্ত্রণালয়, এএফ হাসান আরিফ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, শারমিন এস মুরশিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, নূরজাহান বেগম স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মো. নাহিদ ইসলাম ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
জেনে নিন ১৬ উপদেষ্টার পরিচিতি
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ
অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নবম গভর্নর। ড. ফখরুদ্দীন আহমদ দায়িত্ব ত্যাগের পর তিনি ২০০৫ সালের ১ মে গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব লাভ করেন এবং ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর (দরিশ্রীরামপুর) গ্রামে তাঁর জন্ম। তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৬৩ সালে এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) পাস করেন এবং ১৯৬৯ সালে একই বিষয়ে এমএ পাস করেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) ক্যাডারে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে কানাডার হ্যামিল্টন শহরে অবস্থিত ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
ড. আসিফ নজরুল
ড. আসিফ নজরুল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছে। আসিফ নজরুলের জন্ম ১২ জানুয়ারি ১৯৬৬। তিনি একাধারে লেখক, ঔপন্যাসিক, রাজনীতি-বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক।
আসিফ নজরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে ১৯৮৬ সালে স্নাতক ও ১৯৮৭ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ১৯৯৯ সালে সোয়াস (স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ) ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে তার পিএইচডি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে জার্মানির বন শহরের ইনভায়রনমেন্টাল ল’ সেন্টার থেকে তিনি পোস্ট ডক্টরেট ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে একজন কমনওয়েলথ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পূর্বে ১৯৯১ সালে আসিফ নজরুল একটি বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক পত্রিকা বিচিত্রায় কাজ করতেন। তিনি কিছু সময় বাংলাদেশ সরকারের একজন সরকারি কর্মকর্তা (ম্যাজিস্ট্রেট) হিসেবে কাজ করেছেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে। এম সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সালে। তিনি একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার (২০০৭-২০১২)। এর আগে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাখাওয়াত ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭২ সালে দেশের স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ২০০৭ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনে কমিশনার হিসাবে নিযুক্ত হন এবং ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
আদিলুর রহমান খান
আদিলুর রহমান খানকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আদিলুর রহমান খানের জন্ম ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২। একজন মানবাধিকার কর্মী এবং মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলাদেশের একজন আইনজীবী এবং সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। আদিলুর রহমান ও সুশীল সমাজের অন্যান্য সদস্যরা ১০ অক্টোবর, ১৯৯৪ সালে মানবাধিকার সংস্থা অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামী সরকার কর্তৃক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন।
২০১৩ সালে হেফাজত-ই-ইসলাম বাংলাদেশ ২০১৩ সালের শাপলা স্কোয়ার বিক্ষোভের সময় নেতা-কর্মীদের অপসারণের অভিযানে নিহতের সংখ্যা সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তি ছড়ানোর’ জন্য খানের বিরুদ্ধে ঢাকায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
আদিলুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে ‘ভ্রিজ ইউনিভার্সিটি ব্রাসেলস’ থেকে ২০১৪ সালে তিনি রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। একই বছর তিনি মানবাধিকারের জন্য গোয়াংজু পুরস্কারও জিতেছিলেন; এই পুরস্কারটি কোরিয়া এবং বিদেশে ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেয় যারা তাদের কাজের মাধ্যমে মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং শান্তির প্রচার ও অগ্রগতিতে অবদান রাখেন।
এ এফ হাসান আরিফ
এএফ হাসান আরিফকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ বাংলাদেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ১৯৪১ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। আরিফ সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ কলকাতা থেকে তার মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
হাসান আরিফ অক্টোবর ২০০১ থেকে এপ্রিল ২০০৫ পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি জানুয়ারি ২০০৮ থেকে জানুয়ারি ২০০৯ পর্যন্ত বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন।
তৌহিদ হোসেন
মো. তৌহিদ হোসেনকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পররাষ্ট্র সচিব করা হয়েছে। মো. তৌহিদ হোসেনের জন্য ১৯৫৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০০ সালে ফেব্রুয়ারি এবং ২০০৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত দুই মেয়াদে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই কূটনীতিক।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন। ২০০৬ সালে ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ৮ জুলাই পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের জুনে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকমিশনার করা হয়।
সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের জন্ম ১৫ জানুয়ারি, ১৯৬৮ সালে। বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ‘পরিবেশ পুরস্কার’ এবং প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ‘গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ’ প্রাপ্ত এবং ২০০৯ সালে টাইম সাময়িকীর ‘হিরোজ অব এনভায়রনমেন্ট’ খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশি আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী।
মো. নাহিদ ইসলাম
নাহিদ ইসলামকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছে। নাহিদ ইসলাম কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন। নাহিদের জন্ম ১৯৯৮ সালে ঢাকায়। তার বাবা শিক্ষক। মা গৃহিণী। ছোট এক ভাই রয়েছে তাঁর। তিনি সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করে স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আছেন।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন। তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ২০১৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।
ফরিদা আখতার
চন্দনাইশ পৌরসভার হারলায়ের বাসিন্দা ফরিদা আখতার। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অবস্থা জানা এবং পরিবর্তনের জন্য নীতিনির্ধারণী গবেষণা ও লেখালেখিই তাঁর কাজের প্রধান জায়গা। নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, তাঁতশিল্প, গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নমূলক বিষয়ে নিবিড়ভাবে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছেন তিনি।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে পরিচালিত কার্যক্রমের মারাত্মক কুফল ও নারী স্বাস্থ্যের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে লেখালেখি এবং প্রতিকার আন্দোলনের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সুপরিচিত ফরিদা আখতার। তিনি বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। বর্তমানে তিনি উবিনীগের (উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে নারী ও গাছ, কৈজুরী গ্রামের নারী ও গাছের কথা।
আ. ফ. ম খালিদ হাসান
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ। তার মূল নাম আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ খালিদ হোসেন। তিনি ১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের মক্কার বাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ একজন ইসলামী পণ্ডিত ছিলেন।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা, মাসিক আত-তাওহিদের সম্পাদক, আরবি ও ইংরেজি মাসিক বালাগুশ শরকের সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ড. খালিদ হোসেন ওমরগণি এমইএস কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তা ছাড়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের খণ্ডকালীন অধ্যাপক এবং নেজামে ইসলাম পার্টির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। ছাত্রজীবনে (১৯৭৩-১৯৮৪) দৈনিক সংবাদ, দৈনিক বাংলার বাণী ও এর পটিয়া মহকুমা সংবাদদাতা এবং দ্য নিউ ন্যাশন-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির এবং ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা নির্বাচিত হন। ২০২৩ সালের ৮ জুলাই থেকে তিনি চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কুরআনিক সায়েন্সেস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।
নূরজাহান বেগম
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নূরজাহান বেগম। গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। ১৯৭৬ সালে যখন নূরজাহান বেগম গ্রামীণ ব্যাংকের প্রকল্প শুরু করেন তখন তিনি ড. ইউনূসের প্রথমসারির সহযোগীদের একজন ছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংকের তৃণমূল গোষ্ঠীতে দরিদ্র গ্রামীণ মহিলাদের সংগঠিত ও প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। ব্যাংকের শুরুর দিকে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রথম ‘প্রিন্সিপাল’ ছিলেন।
শারমিন মুরশিদ
শারমিন মুরশিদকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ। তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে কাজ করেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের সময় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও নানা অনিয়ম নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে কাজ করেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের সময় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও নানা অনিয়ম নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
ডা. বিধানরঞ্জন রায় পোদ্দার
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধানরঞ্জন রায় পোদ্দার একজন স্বনামধন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলায়। চিকিৎসাপেশার পাশাপাশি গুণী লেখক হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধানরঞ্জন রায় পোদ্দার। যদিও এ শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না তিনি। ডা. বিধানরঞ্জন রায় বর্তমানে ঢাকার বাইরে অবস্থান করায় শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তিনি এর আগে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
অধ্যাপক ডা. বিধানরঞ্জন রায় পোদ্দার ১৯৬৩ সালে সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলি হাইস্কুল থেকে ১৯৭৯ সালে এসএসসি ও ১৯৮১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৮৮ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। মনোচিকিৎসার পাশাপাশি অধ্যাপক ডা. বিধানরঞ্জন রায় পোদ্দার লেখালেখির সঙ্গেও জড়িত। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে সামাজিক চেতনার মনস্ত্বত্ত (২০১৬), এপিকুরস, আধুনিকতা ও আমরা (২০১৮), সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও অফ্রয়েডীয় ফ্রয়েডবাদীগণ (২০২০)।
ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক
মহান মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সমন্বিত যুদ্ধাভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এ চট্টগ্রাম বন্দরে আক্রমণের জন্য গঠিত অভিযানিক দলের উপ-অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকালে ফারুক-ই-আজম উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ওই সময় তিনি খুলনায় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে তিনি চট্টগ্রামে পৌঁছান। ৬ মে তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের হরিণা ইয়ুথ ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। এই অবস্থায় তিনি একদিন শুনলেন, নৌবাহিনীর জন্য মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট করা হবে। তিনি লাইনে দাঁড়ালেন। টিকে গেলেন। পলাশিতে দুই মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ১ আগস্ট অপারেশনের জন্য তাঁকে মনোনীত করা হয়। তিনি বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত।
সুপ্রদীপ চাকমা
সুপ্রদীপ চাকমা সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান। সুপ্রদীপ চাকমার জন্ম ১৯৬১ সালে খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি সপ্তম বিসিএসে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূত ছিলেন সুপ্রদীপ চাকমা। এছাড়া রাবাত, ব্রাসেলস, আঙ্কারা ও কলম্বোতে বাংলাদেশ মিশনেও তিনি বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন।
শপথ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত তিনজন হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিধানরঞ্জন রায় পোদ্দার ও সাবেক কূটনীতিক ও রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা।