সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে শাহবাগে বিক্ষোভ, চার দফা দাবি
দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের বাড়িঘর-মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হামলা, লুটপাটের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার নাগরিক। দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শনিবার (১০ আগস্ট) বিকেল ৩টা থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে তারা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এতে শাহবাগ ও আশপাশের সড়কগুলোয় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে সারা দেশে দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। তার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে এই কর্মসূচি থেকে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কমিশন গঠনসহ চার দফা দাবি জানানো হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে অনেকের হাতে বিভিন্ন দাবিসংবলিত পোস্টারও দেখা যায়। এসময় ‘আমি কে তুমি কে বাঙালি বাঙালি’, ‘আমার দেশ সবার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘আমার মাটি আমার মা বাংলাদেশ ছাড়বো না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না’, ‘সনাতনীর ওপর আক্রমণ মানি না মানবো না’, ‘প্রশাসন চুপ কেন জবাব চাই দিতে হবে’, ‘সনাতনীদের লড়াই থামবে না থামবে না’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘আমার ঘরে হামলা কেন জবাব চাই, জবাব দাও’, ‘জেগেছে রে জেগেছে সনাতনী জেগেছে’, ‘দেশটা আজও স্বাধীন নয়, আমার মন্দিরে হামলা হয়’, ‘হিন্দুদের নিরাপত্তা চাই’, ‘স্বাধীন দেশে সংখ্যালঘুরা স্বাধীন না কেন’, ‘মন্দিরে হামলা কেন? জবাব চাই জবাব চাই’, ‘প্লিজ সেভ বাংলাদেশি হিন্দু’, ‘সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা চাই, আমরা কেন স্বাধীন নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতনীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুনও দেখা গেছে। জানা গেছে, সারা দেশে দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর, মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।
গণআন্দোলন ও জনরোষের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতের পালিয়ে যাওয়ার দিন থেকেই সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি আক্রান্ত হয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দির।
যশোর, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, ফেনী, শেরপুর, ঢাকা, পটুয়াখালী, নাটোর, মেহেরপুর, দিনাজপুর, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, খুলনা, ফরিদপুর, রংপুরসহ আরও কিছু জেলায় হিন্দুদের স্থাবর সম্পত্তি ও উপসানালয়ে হামলা হয়েছে বলেও দাবি জানান তারা। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা চেয়ে চার দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
দাবিগুলো হলো- সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সকল প্রকার হামলা প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সংখ্যালঘুদের জন্য ১০ শতাংশ সংসদীয় আসন বরাদ্দ করতে হবে।
বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক কমিটির সভাপতি প্রসেনজীৎ কুমার হালদার জানান, আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি আমরা আজ ঘোষণা করলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রদের তিনদিনের মাঝে আমাদের সাথে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাই। তারা তিনদিনের মধ্যে এই দাবিগুলো বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনও বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি জানিয়েছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবারও শাহবাগে হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।