এনটিভির কর্মীদের মাঝে চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোসাদ্দেক আলী
স্বৈরশাসনের যাতাকলে নিষ্পেষিত, হামলা, মামলা, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে সাত বছর পর প্রিয় মাতৃভূমির টানে দেশে ফিরেছেন তিনি। আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে তাঁর প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠান এনটিভির প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছান। এ সময় এনটিভির সর্বস্তরের কর্মীরা তাঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী। নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি এনটিভির প্রতিটি বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। বহু বছর পর প্রিয় চেয়ারম্যানকে কাছে পেয়ে কর্মীরাও যেন নতুন প্রাণ ফিরে পান। এ সময় তিনি দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানান। পাশাপাশি যারা আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন ও যারা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। আর এই আন্দোলনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সর্বস্তরের যে সব মানুষ শামিল হয়ে এক নতুন বিজয় এনে দিয়েছেন তাদের প্রতিও এনটিভির চেয়ারম্যান অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী বলেন, দেশের জন্য ছাত্ররা যে টিম স্পিরিট দেখিয়েছে; তা সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের জন্য দোয়া করি—আল্লাহ তাদের জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন। তাদের এ ত্যাগ যেন আমরা ভুলে না যাই।
এনটিভির চেয়ারম্যান বলেন, আমি সব সময় বলে আসছি, এনটিভি একটি পরিবার। আমি ছিলাম না, কিন্তু আমার পরিবারের সব সদস্য করোনার সময় জীবন বাজি রেখে চ্যানেলকে আগলে রেখেছেন। আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি, আবার অনেক কিছু পেয়েছি। যেমন লিডারশিপ পেয়েছি। কেউ একজন না থাকলে প্রতিষ্ঠান চলবে না, তা হতে পারে না। আমি মনে করি না, কেউ একজন না থাকলে প্রতিষ্ঠান চলবে না। এনটিভির চেয়ারম্যান না থাকার পরও এনটিভির পরিবারের কর্মীরা যেভাবে কাজ চালিয়ে গেছে, আমার মনে হয়েছে, সবাই এনটিভির চেয়ারম্যান। যারা কাজ করেছে, তাদেরকে নিয়ে গর্ভবোধ করি। তিনি আরও বলেন, আমাদের স্লোগান—সময়ের সাথে আগামীর পথে। আমরা সব সময়ে যুবকদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। আগামীতেও এনটিভি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে দেশীয় সংস্কৃতিকে সারাবিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে।
‘নতুন বাংলাদেশে আরও দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশন করে সত্য তুলে ধরবে এনটিভি’, এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন চ্যানেলটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, দর্শকের ভালোবাসায় এনটিভি আরও এগিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করি।
এ সময় এনটিভির পরিচালক আলহাজ্ব নুরুদ্দীন আহমেদ ও মো. আশফাক উদ্দিন আহমেদসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া এনটিভির মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার সুলতানা এ বানু, এনটিভির অর্থ ও হিসাব বিভাগের প্রধান গোলাম রওশন ইয়াজদানী, কোম্পানি সেক্রেটারি অমিতাভ ভৌমিক, এনটিভির হেড অব নিউজ জহিরুল আলম, এনটিভি অনলাইনের সম্পাদক খন্দকার ফকরউদ্দীন আহমেদ, বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রধান অঞ্জন কুমার কুণ্ডু, অনুষ্ঠানবিভাগের মহাব্যবস্থাপক আলফ্রেড খোকনসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকে দুদককে ব্যবহার করে রাজনীতিবিদদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও নির্যাতন শুরু হয়। এ সময় আলহাজ্ব মোসাদ্দেক আলীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা দিয়ে এবং দুদককে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারান্তরীণ করা হয়। এ সময় তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওপরেও শুরু হয় নানামুখী হয়রানি ও নির্যাতন। একপর্যায়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাঁকে ২০১৭ সালের ৯ মার্চ দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। দেশে থাকতে না পারলেও মাতৃভূমির প্রতি তাঁর ভালোবাসার কমতি ছিল না। মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে ছিলেন সব সময়। দেশে বন্যা-প্লাবন, শীতকালে গরিব-অসহায় মানুষের পাশে থেকেছেন, সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া নির্যাতিত বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলীর জন্ম ১৯৬০ সালের ৭ এপ্রিল। তিনি স্বনামধন্য উদ্যোক্তা ও রাজনীতিবিদ। তিনি বিএনপির সংসদ সদস্যও ছিলেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবারও তিনি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হন। পরে ২০০৪ সালে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
২০০৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম অটোমেশনভিত্তিক বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন স্টেশন ইন্টারন্যাশনাল টেলিভিশন চ্যানেল লিমিটেড (এনটিভি) চালু করেন। তিনি আরও একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল আরটিভি এবং ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।