দাঁড়িয়ে থেকে ছাত্র-জনতার ওপর গুলির নির্দেশ দেন এডিসি আখতারুল
৫ আগস্ট। দুপুরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। তার আগে পালিত পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে মরন কামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ সদস্যরা সরাসরি বন্দুক তাক করে গুলি করেছিল ছাত্র-জনতার ওপর। প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল অনেকের। তেমনই একটি ঘটনার সাক্ষী রাজধানীর বকশিবাজার থেকে চাঁনখারপুল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা।
এদিন সকালের দিকে ওই এলাকায় ছাত্র-জনতা ঢল নামে। উদ্দেশ, শাহবাগের দিকে অবস্থান নেওয়ার। কিন্তু, পুলিশ তাদের বেরিকেড দেয়। সেই বেরিকেড ভেঙে সামনে এগোতে চেষ্টা করলে পুলিশ হাতে তুলে নেয় চায়না রাইফেল। দুপুরের আগেভাগে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় তারা। আর ওই স্পটে দাঁড়িয়ে থেকে এই গুলির নির্দেশনা দেন শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম নামের পুলিশ কর্মকর্তা। এক ভিডিও ফুটেজে এমনটা দেখা যায়।
আখতারুল ইসলাম ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি)। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর তাকে ডিএমপির সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। সেদিন চাঁনখারপুলে দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আখতারুল স্যার সেদিন নিজেও গুলি করেছিলেন।’
ভিডিও থেকে দেখা যায়, পুলিশের পাশাপাশি সেখানে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের কাউকে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়ে ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। তবে, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে দেখা গেছে চায়না রাইফেল দিয়ে গুলি করতে। গুলি শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবার তাজা গুলি লোড করতেও দেখা গেছে।
অন্যদিকে, হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতাকে দেখা গেছে। মূলত, তাদের লক্ষ্য করেই পুলিশ সদস্যরা গুলি ছুড়ছিলেন। গুলির লাগার পর ছাত্র-জনতাকে ধরে অন্যদিকে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে। গুলি লাগার পর যখন আন্দোলনকারী আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যান, তখন এক পুলিশের মন্তব্য করতে শোনা যায়, ‘শেষ’।
চাঁনখারপুলে আখতারুল ইসলামকে হাত নেড়ে নেড়ে গুলির নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে এডিসি আখতারুল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার নির্দেশে না, ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে গুলি করা হয়েছে। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম।’
৫ আগস্ট ডিএমপির কমিশনার ছিলেন হাবিবুর রহমান। তাকে গত ১৩ আগস্ট চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর পাঠানো হয়েছে। নতুন ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন মো. মাইনুল হাসান। এ ব্যাপারে জানতে সাবেক এবং বর্তমান দুই কমিশনারের মুঠোফোনে যোগাযোগাগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, তাদের পাওয়া যায়নি।
তবে, ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি), একজন উপপরিদর্শক (এসআই) এবং একজন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিশ্চিত করেছেন, ১৮ জুলাই সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ওয়াকিটকিতে নির্দেশ দেন, চায়না রাইফেল দিয়ে গুলি করার। ১৯ জুলাই সকালেও তিনি ওয়াকিটকিতে একই নির্দেশনা দেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের। চায়না রাইফেল থেকে গুলি ছোড়ার অর্থ খানিকটা এমন, ভুক্তভোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করা।
অন্য একটি সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট দুপুর পৌঁনে ১২টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় পুলিশের একজন অতিরিক্ত ডিআইজি নিজেই ছাত্র-জনতার উদ্দেশে গুলি ছোড়েন। একইদিন পুলিশের গুলিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকাতেও কয়েকজন ছাত্র-জনতা নিহত হন। সব মিলিয়ে ওই দিন সারা দেশে ১০৪ জন নিহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।