মোবাইল ফোনে চার্জের জন্য হাহাকার
কুমিল্লায় বন্যাকবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। টানা তিন থেকে চার দিন বিদ্যুৎহীন থাকায় বন্যাকবলিত এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে মানুষজন।
খবর নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম, বুড়িচং ও সদর উপজেলার কিছু অংশে গত তিন-চার দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। এতে দেশে ও প্রবাসে অবস্থানরত স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারছে না বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন।
সরেজমিন কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ইছাপুরা, মহিষমারা, রাজাপুর, শংকুচাইল, পাইকোডা এলাকার মানুষ একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
শংকুচাইল বাজারের মুসলিম সুইটস বেকারির সামনে গিয়ে দেখা যায় অনেক মানুষের ভিড়। ভিড় ঠেলে সামনে গেলে চোখে পড়ে কয়েকটি মাল্টিপ্লাগে অন্তত ৩০ জন মোবাইল ফোন চার্জে দিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
শংকুচাইল বড় মসজিদের পাশের গৃহিণী নিলিমা আক্তার জানান, বৃহস্পতিবার থেকে তাঁরা বন্যাকবলিত। সেদিন থেকে তাঁদের এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। প্রবাসে থাকা স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না। বন্যার ভয়াবহতা তাঁর স্বামী জানেন। তবে বাড়িতে যোগাযোগ করতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি।
গৃহবধু নিলীমা আরো জানান, বাড়ি থেকে হেঁটে বাজারে এসেছেন মোবাইল ফোনে চার্জ দিতে।
একই গ্রামের ইয়াছির আরাফাত জানান, তাঁর বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। তিনিও বাজারে এসেছেন মোবাইল ফোন চার্জ দিতে।
স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান জানান, তাঁর বাড়িতেও বিদ্যুৎ নেই। তাই মোবাইল ফোন চার্জ দিতে তিনি বাজারে এসেছেন।
চড়ালন গ্রামের শোয়েব ভুইয়া বলেন, মনির ভাই খুব ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর জন্য প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ জন মোবাইল ফোনে চার্জ দিতে পারছে।
শংকুচাইল বাজারের মুসলিম সুইটস বেকারির মালিক মো. মনির হোসেন বলেন, ‘এখন মানুষ বিপদে আছে। এই বিপদে কেউ খাবার দিচ্ছে। কেউ অর্থ দিচ্ছে। আমি কয়েকটি মাল্টিপ্লাগ এনেছি। আমার দোকানে এসে একসঙ্গে অনেকে ফোনে চার্জ দিতে পারছে। তাদের একদম বিনামূল্যে চার্জ দেওয়ার সুযোগ দিয়েছি।’
যত দিন বিদ্যুৎ না আসে তত দিন সবাই এই সেবা পাবে বলে জানান বেকারির মালিক মো. মনির হোসেন।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২-এর জেনারেল ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বন্যার কারণে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ রেখেছেন তাঁরা। তাই বুড়িচং উপজেলায় বিদ্যুৎ নেই। ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা ঠিক হবে না। তাতে মৃত্যুঝুঁকি বাড়বে।
মোস্তাফিজুর আরও রহমান জানান, এখন নৌকা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ লাইন চেক করার পর আগামী দিন দুয়েকের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন স্বাভাবিক হবে।