আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড তুলে আনা এনটিভির দুই সাংবাদিককে সংবর্ধনা
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে আনা এনটিভির দুই সাংবাদিককে সংবর্ধনা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আজ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকায় এনটিভির প্রধান কার্যালয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গত ১৬ জুলাই দেশজুড়ে আলোচিত আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে আনা এনটিভির দুই সাংবাদিক হলেন রংপুরের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এ কে এম মঈনুল হক এবং স্টাফ ক্যামেরাপারসন আসাদুজ্জামান আরমান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এনটিভির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আশফাক উদ্দিন আহমেদ, পরিচালক নুরুদ্দীন আহমেদ, এনটিভির হেড অব নিউজ জহিরুল আলম, যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক ফখরুল আলম কাঞ্চন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ ও নুসরাত তাবাসসুম। এছাড়াও এনটিভির বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে এনটিভির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী বলেন, আবু সাঈদকে এভাবে সরাসরি গুলি করে হত্যার দৃশ্য দেখার পরে কোনো কথা বলার মতো ভাষা থাকে না। আবু সাঈদ শুধু জীবন দেয়নি, এ দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছে। শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যারা বেঁচে আছি আল্লাহ যেন আমাদের হেদায়েত দান করেন। আমাদের দ্বারা যেন দেশ বিরোধী কোনো কাজ না হয়। আমার যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ না থাকি।
এনটিভির চেয়ারম্যান বলেন, দেশের জন্য আমাদের সন্তানতুল্যরা যে দায়িত্ব আমাদের দিয়েছে, তা যেন আমরা যথাযথ পালন করতে পারি। আমি বার বার বলেছি এখনও বলি এনটিভি তোমাদের টেলিভিশন। এ টেলিভিশন সব সময় দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে কাজ করবে। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তোমাদের যখন যেভাবে দরকার হবে, এনটিভিকে তোমরা ব্যবহার করবে। এটা তোমাদের টেলিভিশন।
মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন কখনও ব্যর্থ হয় না। সেই ১৯৭১ থেকে শুরু, ১৯৯০ ও ২০২৪, ছাত্ররা যখনই মাঠে এসেছে, নিঃস্বার্থভাবে এসেছে। যার জন্যই তারা বিজয় অর্জন করেছে। এ দেশের জনগণ সবসময় তাদেরকে সমর্থন দিয়েছে। আমাদের সন্তানতুল্যরা যে কথা বলল, আর যেন তাদেরকে ব্যবহার না করে আগামীদিনগুলোতে এ দেশকে আর কেউ স্বৈরাচারের দিকে নিয়ে না যায়, সেটা আমাদের প্রত্যেকের লক্ষ্য রাখতে হবে।
এনটিভির চেয়ারম্যান আরও বলেন, যাদের কারণে আমরা এ ফুটেজ পেয়েছি আমাদের রংপুরের দুই সহকর্মী, তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। আমরা তাদের নিয়ে গর্ব করি। শুধু এনটিভি নয়, সাংবাদিক সমাজসহ পুরো দেশবাসী তাদের নিয়ে গর্ব করে। এ ধরনের একটি ফুটেজ দেওয়ার কারণেই স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সারা দেশ জেগে উঠেছিল। যতদিন পর্যন্ত এ দেশ সঠিকভাবে নিজের পায়ে না দাঁড়াবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের এ সংগ্রাম চলবে। আমাদের সন্তানরা থাকবে। আমরা তাদের পাশে থাকব ইনশাল্লাহ।
এনটিভির চেয়ারম্যান বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আগামীদিনগুলোতে এ দেশ সত্যিকারের একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে থাকবে। আমরা কোনো দল, ব্যক্তিবিশেষ, কোনো রাষ্ট্রের তাবেদারিত্ব করব না। আমরা দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করব।
এনটিভি ক্যামেরাম্যান আসাদুজ্জামান আরমান ও রংপুর প্রতিনিধি এ কে এম মঈনুল হক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সেদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কীভাবে ঘটনাটি তুলে ধরেছেন তার আবেগঘন বর্ণনা দেন। এসময় সবার চোখ ভিজে যায়।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে আরমান বলেন, ‘আবু সাঈদ যখন গুলিবিদ্ধ হয় তখন আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হচ্ছিল; যাতে আমরা ঘটনার ছবি বা ভিডিও না নিতে পারি। কিন্তু আমার টার্গেট ছিল যেভাবেই হোক ছবি বা ভিডিও নিতে হবে।’
‘পুলিশ কীভাবে এতো নির্মমভাবে গুলি করতে পারে তা সেদিন আমি নিজের চোখে দেখেছিলাম। পুলিশ যখন গুলি করে আমি ক্যামেরা সেদিকে ধরে রেখেছিলাম। বার বার নিষেধ করার পরও আমি ক্যামেরা সরিয়ে নেইনি। জীবনের ঝুঁকি ছিল। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল, টিয়ারশেল আসছিল। তারপরও আমরা সেই ভিডিও লাইভ করেছিলাম।’
আরমান আরও বলেন, গুলিবিদ্ধ আবু সাঈদকে তার সঙ্গীরা নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শুনলাম সাঈদ মারা গেছেন। মারা যাওয়ার খবর আসার পরই আমার ক্যামেরা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল। তখন আমি তাদের বলেছি যে দয়া করে আমার ক্যামেরা নেবেন না। এটা আমার প্রতিষ্ঠানের। এটার কোনো ক্ষতি হলে আমার চাকরি চলে যাবে।’
সাহসের সঙ্গে এই ঘটনা তুলে ধরার জন্যে এনটিভির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আবু সাঈদকে হত্যার ছবি এনটিভি প্রকাশ না করলে হয়তো এখনো শেখ হাসিনা মানুষের ওপর গুলি চালাতো। তাই এনটিভির প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।