চারদিকে নাগিনীদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস, চক্রান্তে পা দেবেন না : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরিষ্কার করে বলতে চাচ্ছি, এখনও হায়নারা (আওয়ামী লীগ) লুকিয়ে আছে, যেকোনো সময় আক্রমণ করবে। কোনো চক্রান্তে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন,হায়নাদের আক্রমণকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে। আজ শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দলটির আয়োজিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জিলানীর ওপর হামলা ও সংগঠনটির ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদারকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের জন্য এ দেশের মানুষ সবসময় আত্মত্যাগ ও প্রাণ দিয়েছে। ’৭১-এ যখন আমরা স্বাধীন হলাম, তখন ভেবেছিলাম সত্যিকার অর্থে একটা প্রকৃত গণতান্ত্রিক দেশ পাব। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, যারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের দাবিদার ছিলেন প্রথম তাদের অর্থাৎ আওয়ামী লীগের হাতেই গণতন্ত্র ধ্বংস হয়। ৭৫ সালে তারা একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। এ কথা একবার বললে হবে না, বারবার বলতে হবে। দলটি আবার ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। ছাত্রদের আন্দোলনকে বারবার দমন করতে নির্যাতন, গুম খুন করেছ। এর ফলশ্রুতিতে জুলাই মাসে ও ১৭ বছর এদেশের গণতান্ত্রিক মানুষ জীবন নিয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন।
আন্দোলনে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন তাদের কথা তুলে ধরে অভিবাদন জানিয়ে ফখরুল বলেন, স্যালুট জানান বেগম খালেদা জিয়াকে, গণতন্ত্রের প্রশ্নের তিনি কখনও আপস করেননি, মাথা নোয়াননি। দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে ছিলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি মুক্ত হয়েছেন। সেইসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও অভিবাদন জানান তিনি। বলেন, ‘আজকে আমরা স্বাধীন হয়েছি, হয়তবা স্বাধীন হয়েছি, কিন্তু চারদিকে নাগিনীদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস। তারা তাদের চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে, বিভিন্নভাবে আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরির পাঁয়তারা করে যাচ্ছে।’
নেতাকর্মীদের কোনোভাবেই ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, জাতির কাছে অঙ্গীকার করতে চাই, সত্যিকার অর্থে প্রকৃত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাব। তবে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। চক্রান্তের মধ্য দিয়ে কেউ যেন আমাদের বিপথে না নিয়ে যায়। কোনো মতেই আমরা যেন লক্ষ্য ও পথ না হারাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণঅভ্যুত্থান ও আত্মত্যাগের মধ্যে আমরা একটি অন্তর্বর্তী সরকার পেয়েছি, এই সরকারের কাছেই দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা আকাশচুম্বী। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আশা, তারা একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের মাধ্যমে নির্বাচন দেবে। সত্যিকার অর্থে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কাছে বিএনপি মহাসচিব দাবি জানিয়েছেন, ছাত্রজনতার আন্দোলন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৬ বছর ধরে যারা পঙ্গু ও নিহত হয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ সময়ে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, তা অতি দ্রুত প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তিনি।
স্মরণ সভায় বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আওয়ামী লীগ দাঁড়ানোর জন্যও একটা মুরগির খোপ পায়নি। আগামী ১০০ বছরও ছাত্র-জনতার কাছে তারা আস্থা পাবে না। ছাত্র-জনতার হত্যাসহ গত ১৫ বছরের গুম-খুন ও নির্যাতনের বিচার হলে আওয়ামী লীগ ‘কবরলীগে’ পরিণত হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের রক্তের সঙ্গে কেউ যেন বেইমানি না করে তার জন্য সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
আরও বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, এনডিএম সভাপতি ববি হাজ্জাজ।
উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব, সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ।