জব্দ হওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে চেয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট
জব্দ হওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে চেয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী রিট দায়ের করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন তিনি।
এর আগে ১২ আগস্ট বিএফআইইউর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও তার স্ত্রী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান রুখমিলা জামানের নামে থাকা সব ধরনের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএফআইইউর পক্ষ থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব ধরনের টাকা তোলা বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউকে তা জানাতে বলা হয়েছে।
এদিকে সাইফুজ্জামান ‘মিনিস্টারস মিলিয়ন্স’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আলজাজিরার ইউটিউব চ্যানেল ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ পায়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিদেশে কোটি কোটি ডলারের সম্পত্তি গড়েছেন। আলজাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তার এসব সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে। বছরে মাত্র ১৫ লাখ টাকা বেতন পাওয়া বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী কীভাবে অর্ধ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির সাম্রাজ্য গড়ে তুললেন, আলজাজিরার অনুসন্ধানী দল তা অনেক দিনের চেষ্টায় সামনে এনেছে।
বাংলাদেশের আইন অনুাযায়ী, কোনো নাগরিক দেশ থেকে বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি নিতে পারবে না। দায়িত্ব পালনকালে মন্ত্রীরা কোনো ব্যবসা থেকে লাভবান হতে পারবে না। তবে আলজাজিরার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে ২৫ কোটি ডলারের বিনিময়ে শুধু ব্রিটেনেই ৩৬০টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। যার মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সমান। এখানেই শেষ নয়, এছাড়া ভূসম্পত্তি গড়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতেও। সবমিলিয়ে তিনি পাঁচশরও বেশি বাড়ি কিনেছেন। যেগুলোর মূল্য প্রায় ৭০ কোটি ডলার।
আলজাজিরা বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ ভালো সখ্যতা ছিল সাইফুজ্জামানের। যা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার বাবা শেখ হাসিনার খুব কাছের লোক ছিলেন। আমিও তার কাছের লোক… শেখ হাসিনা আমার বস… তিনি জানেন যুক্তরাজ্যে আমার ব্যবসা আছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৭ সালের দিকে সম্পত্তি কেনা বাড়িয়ে দেন। ২০১৯ সালে যখন তিনি মন্ত্রী হন, তখন এটি আরও বাড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর তাদের এক সাংবাদিক বিনিয়োগকারীর ছদ্মবেশে সাইফুজ্জামানের এক কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল্যের বাড়িতে যায়। ওই সময় সাংবাদিকের সাক্ষাৎকারে সাইফুজ্জামান অনেকটা অহংকারের সুরেই জানান, তিনি কুমিরের চামড়ার তৈরি জুতা পরেন। এ জুতার জন্য হাজার হাজার ডলার খরচ করেন এবং লন্ডনের সবচেয়ে দামি দোকান থেকে ইতালিয়ান স্যুট তৈরি করেন। এছাড়া ওই সাংবাদিককে নিজের বাড়িটিও ঘুরিয়ে দেখান তিনি। যেখানে রয়েছে সিনেমা হল, জিম, ব্যক্তিগত এলিভেটর। নতুন রোলস রয়েলস গাড়ি রাখার নিরাপদ আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং এরিয়াও রয়েছে সেখানে।
সাইফুজ্জামান আলজাজিরার কাছে দাবি করেছেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাতে নিজের বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে এ সম্পদ কিনেছেন তিনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তার বিরুদ্ধে এখন অর্থপাচারের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করেছে। এরইমধ্যে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ এবং তার পরিবারের মালিকানাধীন ইউসিবিএল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এছাড়া ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান তখন সাইফুজ্জামানও দেশে ছেড়ে চলে যান।