‘গণঅভ্যুত্থানের চেতনা থেকে সরে গেলে বিপর্যয় নেমে আসবে’
গণহত্যাকারী স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার দোসরদের গণমাধ্যম থেকে অপসারণ, নিয়োগ কমিশন গঠন এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে স্বেচ্ছাচারী নিয়োগ ও মব জাস্টিসেরর প্রতিবাদ জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলন। আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘গণপ্রতিরোধ’ কর্মসূচিতে এ আহ্বান জানান বক্তারা।
কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বরেণ্য রাষ্ট্রচিন্তক, দর্শনিক ও কবি ফরহাদ মজহার বলেছেন, এই সরকারের প্রথম কাজ হবে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে স্বাধীন গণমাধ্যম ও সম্প্রচার নীতিমালা করা। সরকারের যারা গণঅভ্যুত্থানের সহযোগীদের বাদ দিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা ভুল করছেন।
‘মব জাস্টিসের মাধ্যমে ছাত্র তরুণদের বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে’ উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘বৈষম্যহীনতার প্রধান লক্ষ্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে বদলানো।’ তিনি বলেন, যারা বাবরি মসজিদ ভেঙেছে, তারাই মাজার ভেঙেছে। মাজার ভাঙা ইসরাইলি প্রকল্প, ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ইসরায়েল গুড়িয়ে দিয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীরা গণঅভ্যুত্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, এখন দেশগঠনেও ভূমিকা পালন করতে হবে। যারা হাসিনাকে পুনর্বাসনের জন্য ফিরিয়ে আনতে চান তাদেরকে হুঁশিয়ার করেন, এই রাষ্ট্রচিন্তক।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা মনে করবেন না এটা তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। আপনারা যেমন–তেমন করে যেখান থেকে লোক এনে বসিয়ে দেবেন, তা হবে না। যাঁরা বিজ্ঞ মানুষ, তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্তে আমরা সন্তুষ্ট, কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না।’ তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম বা সম্প্রচার নীতি যে নামেই হোক, তা দরকার। এই নীতি ছাড়া গণমাধ্যমকর্মীরা মালিক থেকে আলাদাভাবে স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করতে পারবেন না। সরকারের প্রথম কাজ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে গণমাধ্যম নীতি প্রণয়ন করা। গণমাধ্যমকর্মীরা যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকে দীর্ঘদিন বেতন পান না। অনেকে সম্মান ও স্বীকৃতিটুকু পান না। যিনি দায়িত্বে আছেন, তাঁকে এসব শুনতে হবে।
ইউনেস্কো ক্লাব পুরুস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আমিরুল মোমেনীন মানিকের সভাপতিত্বে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন- ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদ বিন রনি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাজমুল হাসান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিম আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক আহমদ মতিউর রহমান, কবি ও সাংবাদিক শাহীন রেজা, সাংবাদিক নেতা শাহীন হাসনাত, দৈনিক যুগান্তরের বিনোদন সম্পাদক এফ আই দীপু, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশেষ সংবাদদাতা মানিক মুনতাসীর, কবি জুননু রাইন, নাগরিক যুব ঐক্যের সভাপতি সাম্য শাহ, ছোটদের সময় সম্পাদক মামুন সারওয়ার, লেখক ও সাংবাদিক আবিদ আজম, কবি জব্বার আল নাঈম, দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক কবি পলিয়ার ওয়াহিদ, গণফোরামের নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, দ্য ডেইলি স্টারের সাংবাদিক ও গবেষক ইমরান মাহফুজ, এবিসির আহ্বায়ক চৌধুরী দৌলত মোহাম্মদ জাফরী, সাংবাদিক আহমদ আল-আমীন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন কবি ও সাংবাদিক সৈয়দ আহসান কবীরসহ অনেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন টেলিভিশন উপস্থাপক জহিরুল ইসলাম টুটুল।
ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, এই সরকারের ফ্যাসিবাদের দালালদের পুরোপুরি অপসারণ করার কথা ছিল, তা তারা করছে না। ফ্যাসিবাদের দালালদের অপসারণ করা না হলে শহীদের স্বপ্ন সফল হবে না। রাষ্ট্রকে সংস্কার করতে হবে। ফ্যাসিবাদকে উপরে না ফেলা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদ বিন রনি বলেন, এই সরকারের কাছে শহীদের আমানত রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল স্পিরিট অনুযায়ী সরকার পরিচালনা করতে হবে। ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের অপসারণ ও বিচার করতে হবে। নইলে শহীদের আমানত খেয়ানত করা হবে।
গণপ্রতিরোধে অংশ নিয়ে ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম বলেন, আমরা বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছি, এই সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। ফ্যাসিবাদকে ধারণ ও লালন করা হচ্ছে। এর অবসান না হলে অচিরেই ডিইউজে ও বিএফইউজে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সভাপতির বক্তব্যে আমিরুল মোমেনীন মানিক বলেন, আমরা বস্তুনিষ্ঠ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার কথা বলি, কিন্তু কার্যত সেটা নেই। গণমাধ্যম থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দালালদের অপসারণ করার আহ্বান জানিয়ে এর পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি জানান তিনি।