মিয়ানমার থেকে অবশেষে ছাড়া পেল ৫৮ মাঝিমাল্লাসহ ৬ ট্রলার
সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে সাগর উপকূল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া আরও পাঁচ ফিশিং ট্রলার ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমার নৌবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বিকেলের দিকে মাঝিমাল্লাসহ এসব ট্রলার মিয়ানমার নৌবাহিনী ছেড়ে দিলে কোস্ট গার্ডের টহল জাহাজ ট্রলারগুলো সেন্টমার্টিন্স দ্বীপের কাছে নিয়ে আসে।
আগামীকাল সকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জেটিঘাটে মাঝিমাল্লাসহ ট্রলারগুলো নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছে টেকনাফ কোস্ট গার্ড। ট্রলারগুলোয় ৪৭ মাঝিমাল্লা ও জেলে রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিস্তারিত তথ্য পরবর্তীতে জানানো হবে বলে কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এর আগে ধরে নিয়ে যাওয়া একটি ফিশিং ট্রলার ছেড়ে দিয়েছিল মিয়ানমার নৌবাহিনী। ট্রলারটি আজ দুপুরে ১১ মাঝিমাল্লা ও জেলেসহ শাহপরীর দ্বীপের জেটি ঘাটে এসে পৌঁছে। এর মধ্যে মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে নিহত এক জেলের মরদেহ এবং গুলিবিদ্ধ দুজন জেলে রয়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী জানিয়েছেন গতকাল বুধবার বিকেলে সেন্টমার্টিন্স দ্বীপের দক্ষিণ -পূর্বে সাগরে বাংলাদেশি জলসীমায় মাছ ধরতে যাওয়া ফিশিং ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি করে মিয়ানমারের নৌবাহিনী। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক জেলের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ দুজনসহ আহত হয়েছেন একাধিক জেলে। পরে মাঝিমাল্লাসহ ছয় ফিশিং ট্রলার আটক করে নিয়ে যায় মিয়ানমার নৌবাহিনী। এ ঘটনার শিকার ট্রলারগুলোর মালিক কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের বাসিন্দা।
গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জেলে মো. ওসমান গনি শাহপরীরদ্বীপের কোনারপাড়া এলাকার বাচ্চু মিয়ার ছেলে। তিনি শাহপরীরদ্বীপের বাজারপাড়া এলাকার সাইফুল কোম্পানির মালিকাধিন ট্রলারের জেলে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত দুই জেলেও ওই ট্রলারের।
ধরে নিয়ে যাওয়া অপর পাঁচটি ট্রলারের মালিক হলেন শাহপরীরদ্বীপের মিস্ত্রিপাড়ার মুসলিম মিয়ার ছেলে মতিউর রহমান (২টি), আবদুল্লাহ, আতা উল্লাহ, উত্তরপাড়ার মো. আছেম।
ইউএনও জানান, গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটায় সেন্টমার্টিন্স দ্বীপ ও মিয়ানমার মধ্যবর্তী বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের মাছ ধরার নৌকায় মিয়ানমারের নৌবাহিনী গুলি চালায় এবং ছয়টি বোট জেলেসহ আটক করে নিয়ে যায়। গুলির ঘটনায় একজন নিহত ও দুজন আহত হন। ঘটনাটি জেলেদের পরিবারের সদস্যরা আজ বৃহস্পতিবার সকালে জানান। পরে মিয়ানমার নৌবাহিনী বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের কাছে একটি ট্রলারসহ জেলেদের হস্তান্তর করে। আজ আড়াইটার দিকে নিহত জেলের মরদেহ ও ১১ জেলে নিয়ে ট্রলারটি শাহপরীরদ্বীপ জেটিতে ফিরেছে।
ট্রলার মালিক মতিউর রহমান জানান, প্রথমে নিহত জেলেসহ সাইফুলের মালিকাধীন ট্রলারটি শাহপরীরদ্বীপ জেটি আসে দুপুর আড়াইটায়। বিকেলে অপর পাঁচটি ট্রলারসহ জেলেরা সেন্টমার্টিন্সে এসেছে। ওখানে জেলেদের সঙ্গে আলাপ করে কোস্ট গার্ড ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী তথ্য সংগ্রহ করছে। সেন্টমার্টিন্স থেকে ওই ট্রলারও শাহপরীরদ্বীপ ঘাটে আনা হবে।
ট্রলার মালিক সাইফুল জানিয়েছেন, সাগরে মাছ ধরার সময় হঠাৎ করে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া করে গুলি করে। এরপর ছয়টি ট্রলারসহ মাঝি-মাল্লাদের ধরে মিয়ানমারে নিয়ে যায়। যেখানে তার মালিকাধীন ট্রলারে গুলিবিদ্ধ তিনজনের মধ্যে একজন মারা যান। আজ সকালে ওই ট্রলারটি ছেড়ে দিয়েছে।
কোস্ট গার্ডের শাহপরীরদ্বীপের দায়িত্বরত কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ না করে) বিষয়টি স্বীকার করে জানান, মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সঙ্গে আলোচনার পর আজ সকালে একটি বিকেলে পাঁচটি ট্রলার ছেড়ে দিয়েছে। পাঁচটি ট্রলার, মাঝিমাল্লা ও জেলেকে আগামীকাল শুক্রবার সকালে শাহপরীর দ্বীপের জেটিতে নিয়ে আসা হবে।