অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাসে বেড়েছে প্রবাসী আয় ও রিজার্ভ
অন্তর্বর্তী সকারের প্রথম দুই মাসে তুলনামূলক সাফল্য এসেছে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। ব্যাংকিং খাতে নানা উদ্যোগে গ্রাহকদের আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। বাড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সেই সঙ্গে কূটনৈতিক নানা তৎপরতা বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ প্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক স্বপ্ন দেখাচ্ছে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, চড়া দ্রব্যমূল্য, ব্যাংকে তারল্য ও ডলার সংকটে রিজার্ভ কমে যাওয়া। অর্থনীতিতে বিদ্যমান এমন নানা অস্বস্তির মধ্যেই দায়িত্ব গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে অর্থ, বাণিজ্য ও পরিকল্পণা মন্ত্রণালয়ের দুই উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মতো অর্থনীতিবিদদের নেতৃত্ব ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আশাবাদী করে দেশের মানুষকে। কিন্তু আইনশৃংখলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে শ্রম অসন্তোষ, নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে বিদেশি ক্রেতাদের। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঘনীভূত হওয়া অর্থনীতির সংকটগুলোর রেশ কাটছে না। তাই অর্থনীতির শ্লথ গতির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রবৃদ্ধি কমে নামতে পারে ৪ শতাংশে। তবে কিছু সংকট কাটতে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক পুর্নগঠনে ব্যাংক সংস্কার, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে কিছু উদ্যোগ দেখা গেছে। ব্যাংকি খাতে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে গ্রাহকদের।
জাতিসংঘের এবারের অধিবেশনে সাইডলাইনে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ প্রধানসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে ইতিবাচক বৈঠকের ফলে সংশ্লিষ্টরা অথনৈতিক সমৃদ্ধির নতুন বাংলাদেশ গঠনে আশাবাদী। অন্যদিকে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। হুন্ডির বদলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় পাঠানোতে উৎসাহ দৃশ্যমান। সেই সঙ্গে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। জ্বালানি ক্ষেত্রে সংকট নিরসনে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলার এবং এডিবির কাছ থেকে আরও এক বিলিয়ন ডলার সহায়তা নিচ্ছে সরকার।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারে ১৫ বছরের দুর্নীতি ও অসঙ্গতির ফিরিস্তি তুলে ধরার পাশাপাশি করণীয় জানতে গঠন করা হয়েছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।
মাত্র দুইমাসে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের কর্মযজ্ঞ চোখে পড়ার মতো। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন করে প্রবাসী আন্দোলনকারীদের শাস্তি মওকুফ করে দেশে ফিরিয়ে আনেন ড. ইউনূস।
চলতি মাসের শুরুতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে তার পুরোনো বন্ধু মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঢাকা সফর করেছেন। সব ঠিকঠাক থাকার পরও যেসব বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়া যেতে পারছিলেন না, সফরকালে তাদের নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
শপথ নেওয়ার প্রথম মাসেই গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সই করেছে সরকার। একইসঙ্গে গত ১৫ বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠিত হয়েছে। জুলাই গণহত্যার বিচারে কাজ শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের। ইতোমধ্যে শহীদ ও আহতদের প্রাথমিক তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশা পূরণ করাটাই সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।