লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে কোটালীপাড়ায় তিনদিনব্যাপী নৌকাবাইচ
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে উৎসবমুখর পরিবেশে তিনদিনব্যাপী নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ নৌকাবাইচ ঐতিহ্যবাহী বিলবাঘিয়ার নৌকাবাইচ হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছরের মতো এবারও এই নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলা বসেছে কোটালীপাড়ার কালিগঞ্জে।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) থেকে নান্দনিক এ নৌকাবাইচ আড়ম্বরপূর্ণভাবে শুরু হয়েছে। চলবে আগামীকাল রোববার পর্যন্ত। ২০০ বছরের পুরোনো, প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ নৌকাবাইচে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, পিরোজপুর, নড়াইল ও বরিশাল জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের শতাধিক সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা, চিলাকাটা, জয়নগর বাচারী নৌকা বাইচে অংশ নেয়।
আবহমান গ্রামবাংলার প্রাচীন কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও নিজস্বতা ধরে রাখতে হাজারো প্রাণের আনন্দ উচ্ছ্বলতায় উপজেলার কালিগঞ্জ নদীতে কালিগঞ্জ বাজার থেকে খেজুরবাড়ি পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ নৌকাবাইচ ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এ নৌকাবাইচে বাড়তি আকর্ষণ ছিল নৌকায় নৌকায় মেলা। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজে দুপুর থেকে এ নৌকাবাইচ শুরু হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে নৌকাবাইচের একের পর এক ছোপ। বিভিন্ন বয়সের মানুষ খালের দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে নৌকাবাইচ প্রত্যক্ষ করেন।
নৌকাবাইচ এলাকায় ঠিকারী ও কাঁশির বাদ্যের তালে জারি-সারি গান নেচে গেয়ে- হেঁইও হেঁইও রবে বৈঠার ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য আবহ সৃষ্টি হয়। দুকূলে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষের হৃদয়ে জাগে দোলা। মাল্লাদের সাথে সমবেত হন অগণিত সমর্থক ও দর্শক। তারা হাতে তালি দিয়ে উৎসাহ দেন বাইচের নৌকার মাল্লাদের। নদীর দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের করতালি ও হর্ষধ্বনিতে এলাকায় আনন্দঘন পরিবেশে মুখর হয়ে ওঠে। গোটা এলাকায় সঞ্চারিত হয় উৎসবের আমেজ।
কলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বিজন বিশ্বাস বলেন, জলাভূমিবেষ্টিত কোটালীপাড়ার এক সময় জীবন-জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিল নৌকা। প্রায় ২০০ বছর আগে লক্ষ্মীপূজার সময় নৌকা নিয়ে এলাকার মানুষ জমিদার শিবরাম চৌধুরীর বাড়িতে যেতেন। পূজা দেখে ফেরার সময় নৌকায় নৌকায় পাল্লা হতো। নৌকার মাধ্যমে চিত্তবিনোদনের চিন্তা থেকে নৌকাবাইচের প্রচলন শুরু হয়। সে থেকেই লক্ষ্মীপূজার পরের দিন থেকে এ অঞ্চলের নৌকাবাইচ হয়ে আসছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।