সিআইডিতে ডিএনএর নমুনা দিলেন হারিছ চৌধুরীর মেয়ে
বাবার প্রকৃত পরিচয় জাতির সামনে তুলে ধরতে ডিএনএর নমুনা প্রদান করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী।
আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে মালিবাগে ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) পরীক্ষার জন্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কার্যালয়ে যান সামিরা তানজিন চৌধুরী। তাঁকে সেখান থেকে নেওয়া হয় ফরেনসিক ল্যাবে। সেখানে ডিএনএ এনালিস্টরা পরীক্ষার জন্যে নমুনা হিসেবে তার মুখের লালা ও রক্ত সংগ্রহ করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির ডিএনএ এনালিস্ট আশরাফুল আলম।
ওয়ান ইলেভেনের পর আত্মগোপনে চলে যান হারিছ চৌধুরী। দীর্ঘ ১৪ বছর গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত ‘অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান’ পরিচয়ে বসবাস করতেন রাজধানীর পান্থপথে।
২০২১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান হারিছ চৌধুরী। তৎকালীন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে সাভারে বিরুলিয়ায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন মাদ্রাসা কবরস্থানে মাহমুদুর রহমান নামেই নিজের বাবার মরদেহ দাফন করেন হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী।
মৃত্যুর ১১৩৮ দিন পর গত ১৬ অক্টোবর দুপুর ফরেনসিক বিভাগ, সিআইডি, স্থানীয় সরকার সচিবের প্রতিনিধি, জেলা রেজিস্ট্রারের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মরদেহটি কবর থেকে তোলা হয়। সেই মরদেহ থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা করতেই ডিএনএ পরীক্ষার জন্যে সিআইডি কার্যালয়ে নিজের নমুনা প্রদান করতে যান হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী।
পরে নমুনা প্রদান করে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সামিরা তানজিন চৌধুরী বলেন বলেন, “১৫ বছর ধরে আমার বাবার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই লেখা হয়েছে। কেউ বলেছে তিনি লন্ডনে। কেউ বলেছেন এখনো বাবা বেঁচে আছে। কিন্তু আমরাই জানি আমাদের বাবা আর নেই। তাকে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করেছি এবং তিনিই হারিছ চৌধুরী। বিগত স্বৈরাচার সরকারের ভয়ে আমরা বাবাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করতে পারিনি। বাধ্য হয়ে করোনাভাইরাসের সময় সাভারে বাবাকে কবর দেওয়া হয়। বাবার মৃত্যুসনদ চেয়ে আবেদন করা হলেও স্বৈরাচার সরকার আমাদের কথা শোনেনি। এখন প্রকৃত সত্যটা তুলে ধরার সময় এসেছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই প্রকৃত সত্যটা আমরা জাতির সামনে তুলে ধরতে পারবো।”
এর আগে বাবার প্রকৃত পরিচয় প্রমাণে ডিএনএ পরীক্ষা, মৃত্যু সনদ, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থেকে নাম প্রত্যাহার, মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যথাযথ সম্মানের সাথে দাফনের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন (নং-১০৭৮৭/২৪) করেন সামিরা তানজিন চৌধুরী।
এর প্রেক্ষিতে গত ৫ সেপ্টেম্বর বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মাহবুবুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর দেহাবশেষ কবর থেকে তুলে ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা পেয়ে গত ৮ই অক্টোবর ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ের বিচার শাখা থেকে দেহাবশেষ উত্তোলনের নির্দেশনা দেওয়া হয় স্থানীয় প্রশাসনকে।