দাবির সাগরে হাবুডুবু আন্তর্বর্তী সরকার
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর পালিয়ে যাওয়ার পর পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাষ্ট্রপতি। একপর্যায়ে রাষ্ট্রপ্রতির কাছে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাবের আলোকে ঘোষিত হয় ১৬ উপদেষ্টা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার।
৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস শপথ নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এক উঠতে থাকে দাবি। সাড়ে ১৫ বছরের জমে থাকা দাবি যেন একসঙ্গে এক হয়ে ফুঁসে ওঠে। যদিও সেসব দাবির মধ্যে আলোচক-সমালোচক ও রাজনৈতিক বোদ্ধারা খুঁজে পান ষড়যন্ত্রের গন্ধ। বিভিন্ন দাবি নিয়ে সমাবেশ, অবরোধ, বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মিছিলে ছিল পুলিশ, আনসার, প্রশাসন থেকে শুরু করে গৃহকর্মীরাও। দফায় দফায় দাবি নিয়ে সড়কে ও সরকারে উত্তাপ ছড়িয়েছেন রিকশাচালক থেকে শুরু করে পোশাক শ্রমিকরাও।
একপর্যায়ে সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ানোর দাবিতে মাঠে নামে শিক্ষার্থীরা। আবার এইচএসসি পরীক্ষা না নেওয়ার দাবি ও পরে অটোপাসের বিপক্ষে নানা দাবিতে মাঠে জড়ো হয় ছাত্রছাত্রীরা। নিরাপত্তা, মন্দির ভাঙচুরের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। আওয়ামী শাসনামলে চাকুরিচুত্যদের স্বপদে বহাল, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি ছিল উল্লেখযোগ্য। সাড়া জাগায় নতুন ইতিহাসে।
বিগত শেখ হাসিনা সরকারের প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ থেকে শুরু করে রাজপথে দাবির রেখা অঙ্কিত হয় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ পর্যন্ত। সব মিলিয়ে গত তিন মাসে ঢাকা হয়ে ওঠে দাবির শহর, আর শাহবাগ পরিণত হয় ‘দাবিবাগে’—এমন কথা ভাসতে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। হাসিনা সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পূর্তিতেও দাবির এই শহর মুক্ত হতে পারেনি অবরোধ, মানববন্ধন, সমাবেশ থেকে।
পুলিশের ১১ দফা
শেখ হাসিনা পালানের পর পরই গা ঢাকা দেন তাঁর সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর কিছুক্ষণের মধ্যে থানা ছাড়ে সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যাসহ গত সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুন-অত্যাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ জমে পাহাড় হয়ে ওঠে। তাদের মনের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে পুলিশের ওপর। ফলে আতঙ্কিত প্রায় সব পুলিশ সদস্য গিয়ে অবস্থান নেন পুলিশ লাইনসগুলোতে। এরপর তারাও তোলে দাবি। সেই দাবিতে যুক্ত হয় ১১ দফা। বলা হয়—সংস্কার করতে হবে অভ্যন্তরীণ ও প্রশাসনিক দুই খাতেই। সেসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত থানায় ফিরবে না বলে জানায় তারা। এতে সড়ক হয়ে পড়ে ট্রাফিকহীন। ৮ আগস্ট শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, নতুন আইজিপির পক্ষ থেকে নানাভাবে তাদের থানায় ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। পরে তারা কাজে যোগ দেয়। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে তখন সড়কসহ মহল্লায়-মহল্লায় পাহাড়া দিতে দেখা যায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিক্ষোভ
হাসিনা ভারতে পালানোর তিন দিনের মাথায়, অর্থাৎ ৮ আগস্ট রাতে শপথ নেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের ১৩ উপদেষ্টা। তার আগেই রাজপথে দাবি নিয়ে আসে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বাড়িঘরে হামলার অভিযোগে শাহবাগে অবস্থান নেয় তারা। তারা এসব ঘটনার বিচার ও নিজেদের নিরাপত্তার দাবির পাশাপাশি সংসদে সংখ্যালঘুদের জন্য ১০ শতাংশ আসন বরাদ্দেরও দাবি জানায়। যদিও অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ রাজনৈতিক বেশ কয়েকটি দলের প্রথম সারির নেতারা মন্দির পরিদর্শনসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
এরপর নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধে চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থিত স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগ তুলে ইসকন চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক চন্দন কুমার ধর প্রকাশ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীসহ (৩৮) ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হওয়ায়। ৩০ অক্টোবর রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানায় চান্দগাঁও মোহরা এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ খান নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে এই মামলা করেন। এরপর ২ নভেম্বর কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বর থেকে ওঠে ৮ দফা দাবি। এসব দাবি বাস্তবায়নে গণসমাবেশে কথা বলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। দাবি না মানলে দেওয়া হয় ঢাকা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি।
শেখ হাসিনার বিচার দাবি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করে শত শত প্রাণ কেড়ে নেওয়াসহ হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু ও দৃষ্টিশক্তিহীন করার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। এসব বিক্ষোভ ও সমাবেশ আলাদা আলাদাভাবে ডাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, আইনজীবী ও ছাত্র সংগঠন। এদের মধ্যে অন্যতম বিএনপি, কৃষকদল, যুবদল, ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে সারা দেশে ১৪ আগস্ট মাঠে নামে বিএনপিসহ তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পরই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি ওঠে। সেই দাবি দিনে দিনে ঘণীভূত হয়ে ২২ অক্টোবরে রূপ নেয় গণবিক্ষোভে। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় বঙ্গভবনের সামনে থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দেয় ছাত্র-জনতা।
এদিন জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি সমাবেশ করে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন থেকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ডাকে বঙ্গভবনের সামনে গণজোয়ার তৈরি হয়। সেই জোয়ার বঙ্গভবনের সামনের ব্যারিকেড (প্রতিবন্ধক) ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অংশ নিয়ে বিষয়টি সামাল দেয়।
প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবি
সরকার তখনও গঠন হয়নি, রাষ্ট্রের প্রহরায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি তখন শিক্ষার্থীরা। এমন এক সময় দাবি ওঠে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ৭ আগস্ট এই দাবি তোলেন। তিনি তাঁর ফেসবুক আইডিতে লিখেন, ‘বিচার বিভাগের ফ্যাসিবাদ বিলোপ করতে হবে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, বিচার বিভাগে এখনো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার শরিক বিচারপতিরা বিচরণ করছেন। আমরা শুনতে পেলাম, অভ্যুত্থানের আগে আমাদের যেভাবে আদালতের নামে টালবাহানা করা হতো, ঠিক একই কায়দায় অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র-জনতার সরকার ব্যহত করার প্রচেষ্টা চলমান।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা অচিরেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সক্রিয় শরিক প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতিদের অপসারণ দাবি করছি।’ তিনি ৮ আগস্ট সকালের মধ্যে বিচারপতিদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ প্রত্যাশা করেছিলেন। যদিও ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি হঠাৎই ফুল কোর্ট ডাকলে তোপের মুখে পড়েন। পরে সুপ্রিম কোর্টে আন্দোলন শুরু হলে ওবায়দুল হাসানসহ পদত্যাগ করেন ছয় বিচারপতি।
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি
দেশ থমথমে, জনমনে আতঙ্ক। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলেও দেশের মধ্যেই রয়েছে তার দোসররা। দলটির ওপর জমে থাকা ক্ষোভ গিয়ে ঠেকে নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে। এই দাবি ওঠে বিভিন্ন পর্যায়ের অ্যাক্টিভিস্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে।
৮ আগস্ট লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) পক্ষ থেকে ওঠে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের দাবি। দলটির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম সেদিন বলেছিলেন, ‘সর্বসাধারণের উদ্দেশে বলতে চাই, স্বৈরাচারের পতনের পর জাতি-ধর্ম-বর্ণ-রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। স্বৈরাচারী ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ করতে হবে।’ এরপর একই দাবিতে মাঠে নামে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও ছাত্র শিবির। ২৫ আগস্ট বিকেলে মেহেরপুর শহীদ শামসুজ্জোহা নহর উদ্যানের সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে নিষেদ্ধের দাবি ওঠে।
আওয়ামীপন্থি বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও
সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকজন বিচারপতিকে ‘আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারক’ উল্লেখ করে তাদের পদত্যাগের দাবিতে ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। পরে এ ঘটনায় ১২ জন বিচারককে চায়ের দাওয়াত দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত। এরপর ১৫ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়। এক পর্যায়ে বিচারপতিদের অভিসংশনে জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়।
আনসারদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি
১১ আগস্ট সাধারণ আনসারদের চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন আনসার সদস্যরা। সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে তাদের এ আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়ে এক সময় সচিবালয়ের সামনে চলে আসে। ২৫ আগস্ট সেখানে অবস্থান নেন আনসার সদস্য অনেকে। সরকারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো বিবেচনা করা হবে বলে জানালেও এদিন কতিপয় আনসারের পোশাক পরা অনেকে সচিবালয় অবরোধ করেন। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে এবং সেনাবাহিনী অবস্থান নিলে সচিবালয় এলাকা ছাড়া হন তাঁরা।
সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি চেয়ে আলটিমেটাম
সচিবালয়ের বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পদোন্নতি না দিলে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির আলটিমেটাম দেন। তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ কোনো সচিবকে সচিবালয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে। তাদের দাবি, দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও এসপিকে বরখাস্ত করতে হবে। যারা ‘সিভিল-ক্যুর চেষ্টা করেছে’ তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া আলী ইমাম মজুমদারকে উপদেষ্টা হিসেবে মানেন না বলেও জানান বঞ্চিত এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ডিসি নিয়োগের দুই প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি
গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে ৫৯ জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঘেরাও করেন বঞ্চিত কয়েকশ কর্মকর্তা। ডিসি নিয়োগ দিয়ে জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপন পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও হট্টগোল করে নিজেদের বঞ্চিত দাবি করেন কর্মকর্তারা। তাঁরা জনপ্রশাসন সচিবের কাছে দাবি করেন, নতুন ডিসিরা যাতে সংশ্লিষ্ট জেলায় না যান।
প্রশাসন ক্যাডারের নানা দাবি
গত ১১ অক্টোবর সচিবালয়ে অফিসে যোগ দিতে আসেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। দীর্ঘ ১৫ বছরের প্রশাসনে জেঁকে বসা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা তখনও নিজ নিজ পদে আসীন। উপদেষ্টাদের সহযোগিতার পরিবর্তে পাল্টা ক্যু করাসহ নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অভিযোগও ওঠে অনেকের বিরুদ্ধে। নানান ধরনের গুজব ছড়িয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে উসকে দেন তাদের কেউ কেউ। সেইসঙ্গে নানা ধরনের অদ্ভূত দাবি-দাওয়া নিয়ে সচিবালয়ে জটলা পাকাতে থাকেন বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
প্রশাসন ক্যাডারের সমান মর্যাদা, পদোন্নতি ও পদায়ন চেয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সবাই বৈষম্যের শিকার এমন স্লোগানেই শুরু করেন ‘আদার্স ক্যাডার’ নামে পরিচিত কর্মকর্তারা।
এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দাবি করে এইচএসসির অবশিষ্ট পরীক্ষা বাতিলের জন্য আন্দোলনে নামেন পরীক্ষার্থীরা। ১৮ আগস্ট রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় থেকে এ আন্দোলন শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত সচিবালয়ের ভিতরে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এইচএসসি ও সমমানের বাকি থাকা পরীক্ষাগুলো বাতিল করে সরকার।
এইচএসসিতে অনুত্তীর্ণদের পাসের দাবি
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল পুনরায় প্রকাশের দাবি তোলেন অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা। এ সংক্রান্ত ত্রুটি সংশোধনের দাবিতে ২৩ অক্টোবর সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন তাঁরা। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাদের বিক্ষোভ থেকে ৫৩ জনকে নেওয়া হয় পুলিশি হেফাজতে। এর আগে ১৫ অক্টোবর এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল প্রকাশের পর তারা বৈষম্যের শিকার বলে অভিযোগ তোলেন। পরে তাঁরা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। সবশেষে আন্দোলনের নামে সচিবালয়ে ঢুকে পড়লে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ অনেককেই গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে ২৬ জন ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা যায়।
দাবি নিয়ে রাজপথে গৃহকর্মীরাও
গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধ, তাদের প্রাপ্য সম্মান দিয়ে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তি ও ‘শ্রমিক’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলনে নামেন গৃহকর্মীরা। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাঁরা এ দাবি জানান। শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁরা একাধিক সমবাবেশও করেন। এ ছাড়া ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় ও দুঃস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (ডিএসকে) বাস্তবায়নে ঢাকার ২০০ গৃহকর্মীকে নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও একই দাবি জানানো হয়।
গ্রাম পুলিশের চাকরি জাতীয়করণের দাবি
১৪ আগস্ট বৈষম্য থেকে মুক্তি এবং চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন গ্রাম পুলিশ সদস্যরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে তাঁরা ‘বেতন বৈষম্যবিরোধী গ্রাম পুলিশ সমন্বয় কমিটি’ ব্যানারে এই দাবিতে মাঠে নামেন। দীর্ঘদিন প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থানও করেন। একপর্যায়ে সাত দিনের আলটিমেটামও দেন তাঁরা। বলেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাসে সাড়ে ছয় হাজার টাকা পাই, যেখানে চালের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বছরেও এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পারি না। সন্তানদের পড়াশোনা করাতেও কষ্ট হয়। সরকারের দেওয়া পোশাক পর দিনরাত ২৪ ঘণ্টা অন্য বাহিনীর মতো দায়িত্ব পালন করে থাকি। তাই সাত দিনের মধ্যে আমাদের সব দাবি মানতে হবে। এই আরটিমেটামের সাত দিন পর আর তাঁদের মাঠে দেখা যায়নি।
মাজার রক্ষার দাবিতে বাউল শিল্পী ও ভক্তরা নামে রাজপথে
৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্নস্থানে মাজার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে রাজপথে নামে বাংলাদেশ তরিকত-এ-ইসলাম, বাউল শিল্পী ও মাজার ভক্তদের বিভিন্ন সংগঠন। এ সময় মাজার সুরক্ষায় পাঁচ দফা দাবি জানায় তারা। পরে দেশের সব মাজার রক্ষার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট, করেন রুল জারি। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ডিসিদেরও দেওয়া হয় নির্দেশনা। বলা হয়, কোনো মাজারে হামলার আশঙ্কা থাকলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে।
পোশাক শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি
৫ আগস্টের পর সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের বেশিরভাগ পোশাক কারখানা খোলার পর বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শ্রমিকরা। এতে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস খাতে বাড়তে থাকে অস্থিরতা। অশান্ত হয়ে পড়ে শিল্পাঞ্চল। বন্ধ হয়ে যায় অনেক কারখানা। সরকারের মধ্যস্থতায় প্রায় মাসব্যাপী আন্দোলনের পর মুজুরি বৃদ্ধি এবং বছর শেষে ১০ শতাংশ হারে ‘ইনক্রিমেন্ট’ দেওয়াসহ ১৮টি দাবি মেনে নেয় মালিকপক্ষ। এরপর কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে এ খাতে। যদিও সেই আন্দোলন থামেনি। থেমে থেমে চলছে, উঠছে নানা দাবি।
অটোরিকশা ও পায়েচালিত রিকশাচালকদের পল্টাপাল্টি দাবি
২৬ আগস্ট সকাল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করে পায়েচলিত রিকশাচালকরা। সরকারের কাছে তাদের দাবি ছিল, আগে প্রধান সড়কে অটোরিকশা চলত না, ফলে তারা পর্যাপ্ত ভাড়া পেতেন। অথচ সড়কে অটোরিকশা চলায় তারা কোনো ভাড়া পান না। আগের নিয়মে অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানান এই রিকশাচালকরা। বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন রিকশামালিক ঐক্যজোটের আয়োজনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। জানান সাত দফা দাবি। দাবি মানতে সরকারকে বেঁধে দেন ৭২ ঘণ্টা সময়।
৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে পায়েচালিত রিকশার চালকরা শাহবাগ ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একই স্থানে জড়ো হন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। তাঁরা সড়ক-মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর দাবি জানান। এতে দুই পক্ষের মধ্যে চলে সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষ শাহবাগ, পরীবাগ, কলাবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ২২ অক্টোবর বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সমাবেশে এ দাবি জানান তারা। এরপর ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-২-এর দেওয়া প্রজ্ঞাপনে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা হয়। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, সংগঠনটি কোটা সংস্কার ও সরকার পতন আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতা ‘হত্যা’ ও অসংখ্য মানুষের ‘জীবন বিপন্ন’ করা এবং বিভিন্ন সময় ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত। ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী ‘সন্ত্রাসী সত্তা‘ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এই প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
শেখ হাসিনার পরিবারসহ আ.লীগ নেতাকর্মীদের নামে বরাদ্দ প্লট বাতিলের দাবি
ক্ষমতায় থাকাকালীন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পরিবারসহ তাঁর দলের অনেকেই পূর্বাচল প্রকল্প এলাকায় নানা অনৈতিকভাবে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। বরাদ্দ হওয়া এসব প্লট বাতিলসহ ১৯ দফা দাবিতে ২৫ সেপ্টেম্বর আন্দোলনে নামে পূর্বাচলের অধিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। যদিও এরইমধ্যে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা এসব বিষয় পর্যালোচনা করে দেখছেন বলে জানিয়েছেন রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার।
যৌনকর্মীদের দাবি
যৌনকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, নির্যাতন বন্ধ, তাদের সন্তানদের নির্বঘ্ন ও মূল স্রোতধারায় বেড়ে উঠার সুযোগ করে দেওয়াসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে ‘সেক্স ওয়ার্কারস নেটওয়ার্ক’। সংগঠনটি দেশে যৌনকর্মীদের ওপর নির্যাতন বন্ধে বর্তমান সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সেক্সওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় তারা।
যৌনকর্মী নেত্রী লিলি বলেন, বাংলাদেশ আজ শান্ত আছে এ জন্যই, যৌনকর্মীরা সেবা দেয়।
আউটসোর্সিং কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আউটসোর্সিং কর্মচারীরা। ১৯ অক্টোবর সকাল থেকে শাহবাগে জড়ো হয়ে তাঁরা এ দাবি জানান। তাঁদের অবস্থানের কারণে শাহবাগের আশপাশে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রভাব পড়ে পুরো নগরীতে। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।
চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করার দাবি
সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে চাকরিপ্রত্যাশিরা। শেখ হাসিনা সরকারের আমল থেকে এ দাবি নিয়ে বেশ কয়েকবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সবশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে আন্দোলনকারীরা শাহবাগে অবস্থানের পর রাজধানীর রমনা এলাকায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। যদিও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। গঠিত হয় এ বিষয়ক কমিশন। তারা সরকারকে দেয় পরামর্শ। পরে ২৪ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশের খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেখানে বলা হয়, বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া যাবে সর্বোচ্চ তিনবার। যদিও পরে তা পরিবর্তন করে করা হয় চারবার।
চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
চাকরি স্থায়ীকরণসহ দুই দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সরকার পতনের পর তারা হয়ে ওঠেন আরও বেশি কঠোর। শুরুতে কর্মবিরতি পালনে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে বিদ্যুৎ পরিচালনসেবা বন্ধ করে পালন করেন ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি। দিনটি ছিল ১৭ অক্টোবর। এদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে আন্দোলন চালিয়ে যান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আন্দোলন চলাকালে কুমিল্লার চান্দিনার পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে। ১৮ অক্টোবর থেকে স্থগিত হয় শাটডাউন কর্মসূচি। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ২০ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে হয় মামলাও।
ঢাবি ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরারও ঘোষণা দেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, রাজনৈতিক চেতনা যে কারও থাকতে পারে, তবে ক্যাম্পাসে ঢাবির ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন বন্ধ ঘোষণা করতে হবে। এমনকি, তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে।
ডাকসু নির্বাচন দাবি
শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দাবি করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান। সেদিন বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, হলগুলোতে গেস্টরুম, গণরুমের নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় রাজনৈতিক দলগুলো। তারা তাদের ফ্যাসিবাদী স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা চালায়। তারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক নির্বাচনের দাবি জানান। ডাকসু নির্বাচন সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি।
কলেজ নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি
স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে এখনও রাজপথে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজ। সেগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সড়ক অবরোধ, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে দীর্ঘ যানজটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে রাজধানী। ভোগান্তিতে পড়েছে আন্তজেলা যাত্রীরা। অন্যদিকে, সাত কলেজমুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করেছেন। ১ নভেম্বর ভিসি চত্বরে ‘৭ কলেজ অধিভুক্তি বাতিল চাই আন্দোল’-এর ব্যানারে এই দাবিতে সমাবেশ করেন তাঁরা।
বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের দাবি
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবোরোধ করে গত ৯ সেপ্টম্বর বিমানবন্দর এলাকায় সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের দাবি ওঠে। সেই দাবির সঙ্গে স্থানীয় শতাধিক বিএনপির নেতাকর্মী সংহতি জানান।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদ্য সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোস্তফা জামান, সদস্য আকবর আলী, আলাউদ্দিন সরকার টিপুসহ অনেকেই ওই অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন। অবরোধ থেকে দাবি তোলা হয়, , ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার অংশ হিসেবে ১৯৮১ সালে বিচারপতি আব্দুস ছাত্তার সরকারের সময় দেওয়া নামকরণ জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পুনর্বহাল করতে হবে।
এফবিসিসিআই থেকে চাকরিচ্যুত কর্মীদের পুনর্বহালের দাবি
২০২০ সালে দেশে করোনা মহামারির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনজীবনে মারাত্মক সংকট নেমে আসে। সেই দুর্যোগময় মুহূর্তে ৬২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জোরপূর্বক চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা হয়। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম দলীয়করণের নামে এমনটি করেন বলে ওঠে অভিযোগ। হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৭ আগস্ট চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা স্বপদে (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতিসহ) পুনর্বহালের দাবিতে মানবন্ধন করেন। একইসঙ্গে প্রাপ্য সার্ভিস বেনিফিট ও অন্যান্য বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানান তাঁরা।
ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বহাল রাখার দাবি
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান। যদিও পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে এলাকায় ফিরতে চান। তবে, এর আগে ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগকে পরিচ্ছন্ন করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মেয়র, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়াম্যান-মেম্বারদের অপসারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুরোনো শাসকের সঙ্গে সম্পর্কিত কাউকে না রাখার যে দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সে প্রত্যাশার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত। পুরো স্থানীয় সরকার বিভাগকে পরিচ্ছন্ন করার একটা প্রক্রিয়া। পরে প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যদিও অপসারিতদের অনেকেই নিজেদের স্বপদ ফিরে পাওয়ার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করেন। বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপিও দেওয়া হয় অনেকস্থানে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দাবি, তৃণমূলে নির্বাচিত এসব জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করা হলে গ্রাম আদালত, জন্ম ও মৃত্যু সনদ, নাগরিকত্ব, ওয়ারিশান সনদ দেওয়ার মতো বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম ব্যহত হবে। ঢালাওভাবে সবাইকে বরখাস্ত করা ঠিক হবে না। এ দাবি আদায়ের জন্য প্রয়োজনে সারা দেশ বৃহত্তর কর্মসূচি পালন করা হবে।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার প্রাথমিকভাবে ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগের কথা বললেও সাড়ে ৬৯ হাজার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত সদস্যের বিকল্প সরকারি কর্মকর্তা না পাওয়ায় বিপাকে পড়ে মন্ত্রণালয়। সব ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে ৫৪ হাজারের মতো সরকারি কর্মকর্তা প্রয়োজন বলে জানা যায়। পরে হাসান আরিফের দেওয়া তথ্য বলছে, সাড়ে তিনশোর মতো ইউপিতে দায়িত্বশীল কেউ ছিলেন না। সেখানে প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করার কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। বাতিল করলে গ্রাম পর্যায়ে সেবাপ্রাপ্তিতে ধাক্কা লাগবে। কেননা, একটি গ্রাম নিয়েও ওয়ার্ড গঠিত। সেজন্য ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দিয়ে গ্রামপর্যায়ে সেবা পৌঁছে দেওয়ায় ব্যাঘাত হোক সেটি চায় না সরকার।
নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভিসি নিয়োগের দাবি
দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দাবি ওঠে, তাদের নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগ দিতে হবে। ২৮ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে চান শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেলে তার সঙ্গে কাজ করবেন না বলেও ঘোষণা দেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেই উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ব্যানার ফটকে ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। এরপর দফায় দফায় একই দাবি জানান তারা। গত ১২ সেপ্টেম্বরও জবি শিক্ষকদের মধ্যে থেকে উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে এসে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়।
২০ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা।
৩ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে উপাচার্য নিয়োগের দাবি ওঠে। ৬ অক্টোবর ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে তালা লাগিয়ে ক্যাম্পাসে এই আলটিমেটাম দেন তারা। শাটডাউন কর্মসূচি শুরুর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। দাবি মেনে না নিলে সড়ক অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
৪ অক্টোবর নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
চাকরিচ্যুত ও পদত্যাগে বাধ্য ব্যাংককর্মীদের দাবি
বিভিন্ন সময়ে চাকরিচ্যুত ও পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংককর্মীরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ১৯ আগস্ট সোমবার তারা চাকরি ফিরে পেতে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেন। যদিও এ বিষয়ে চাকরি ফিরিয়ে দিতে ব্যাংকারদের পক্ষে হাইকোর্টে রুল জারি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই নির্দেশনার তিন বছর পার হলেও তার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবি শিক্ষা বোর্ডের কর্মীদের
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গালমন্দ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করার প্রতিবাদের মানববন্ধন করে ঢাকা-কুমিল্লাসহ কয়েকটি শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ২১ অক্টোবর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড প্রাঙ্গণে মানবন্ধন করেন তাঁরা। ওই কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করেন ঢাকা শিক্ষবোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
সড়ক অবরোধে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা
২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত সব ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের কারিগরি অধিদপ্তর এবং সব প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুত স্থানান্তর করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নামেন সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। সরকারের কাছে তাদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল—ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি নিশ্চিত করা এবং প্রতি সেমিস্টার (পর্ব) পূর্ণ মেয়াদের (ছয় মাস) করা। এ ছাড়া উপসহকারী প্রকৌশলী পদে (১০ম গ্রেড) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ব্যতীত অন্য কাউকে আবেদন করতে না দেওয়া এবং উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান পদ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত রাখা।
দেশের সব নদ-নদী রক্ষার দাবি
পদ্মা-বড়ালসহ দেশের সব নদ-নদী রক্ষার দাবি জানিয়ে রাজশাহীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। ৯ সেপ্টেম্বর ‘আন্তসীমান্ত নদীতে বাংলাদেশের অধিকার’ দাবি নিয়ে রাজশাহীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে তারা। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী মায়ের মতোই দেশের ভূমি, প্রকৃতি, গাছপালা, পশুপাখিসহ সবকিছুই প্রতিপালন করছে। অথচ, দখল-দূষণসহ মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে আমাদের নদীগুলো নানামুখী সংকটের মধ্যে পড়ছে। রাজশাহী অঞ্চলের অনেক নদ-নদীর এখন রুগণ দশা। অন্যতম নদী পদ্মারও করুণ অবস্থা।
নদী নিয়ে একাধিকবার প্রকল্প গ্রহণ করলেও তা জবাবদিহিতার অভাবে জনগণের অর্থ লুটপাট দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাবে অপচয় হয়েছে। নদী বাঁচাতে বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে। তার মধ্যে স্বল্প-মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করার দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকদের আন্দোলন
বেতনের দাবিতে আন্দোলনে নামেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা। তাদের আন্দোলনে অশান্ত হয়ে ওঠে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল। বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল। এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়।
বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলনের নানা দাবি
গণহত্যাকারী স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার দোসরদের গণমাধ্যম থেকে অপসারণ, নিয়োগ কমিশন গঠন এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে স্বেচ্ছাচারী নিয়োগ ও মব জাস্টিসের প্রতিবাদ জানিয়ে গণপ্রতিরোধ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলন। ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই কর্মসূচি থেকে দাবিগুলো তুলে ধরা হয়।
বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পঙ্গু করে রাখা পুঁজিবাজারের অস্বাভাবিক দরপতনের প্রতিবাদে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। ২ অক্টোবর মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরোনো ভবনের সামনে তারা এই দাবি জানায়। এ সময় তারা ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠনেরও দাবি করে।
২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহের দাবি যানবাহনের শ্রমিকদের
২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন যানবাহনের শ্রমিকরা। ৩ অক্টোবর নরসিংদীর রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী, মাইক্রোবাসচালক ও সিএনজিচালিত যানবাহনের চালকরা ঢাকা-সিলেট মহসড়কের শাহেপ্রতাপ মোড় অবরোধ করে। ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
মজুরি বৈষম্য নিরসনের দাবি
শিল্প কারখানায় মজুরি বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আন্দোলনে নামেন নাসা গ্রুপের কর্মীরা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই এ আন্দোলনের শুরু হয়।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের দাবি
চাকরি জাতীয়করণসহ তিন দফা দাবিতে গত ২৪ আগস্ট আন্দোলনে নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত দপ্তরিরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে এ আন্দোলন শুরু হলেও পরে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেয় তারা। আনসার আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্সের আগেই স্থান ত্যাগ করে তারা। এরপর তাদের আর দেখা যায়নি।
প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজের দাবি
নতুন সরকারের কাছে দাবি জানাতে পিছপা হননি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। জেলহত্যা দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনসহ তিন দফা দাবি নিয়ে ৩ নভেম্বর দুপুরে দাবিগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি নিয়ে পদযাত্রা শুরু করেন তিনি।
তানজিম আহমদ সোহেল তাজের দাবি গুলো হলো :
১. যেহেতু ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় সেহেতু ওই দিনই বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র (প্রজাতন্ত্র) হিসেবে জন্ম লাভ করে। তাই এই দিনটিকে “প্রজাতন্ত্র দিবস” ঘোষণা করতে হবে I
২. ৩ নভেম্বর’ জেল হত্যা দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে।
৩. জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সব বেসামরিক ও সামরিক সংগঠক, পরিচালক, অমর শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, অবদান ও জীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সোহেল তাজ এসব দাবি নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করেন। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সুন্দর রাষ্ট্র হলে আমার বাবা-মায়ের আত্মা শান্তি পাবে। তাদের প্রেরণা তুলে ধরতেই আজকের এই পদযাত্রা। ব্যক্তি হিসেবে আমি লজ্জিত যে রাষ্ট্রের কাছে আমার চাইতে হচ্ছে। এই দায়িত্বটা রাষ্ট্রেরই ছিল। সংস্কারের প্রধান অংশ গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ।
বান্দরবানের পর্যটন স্পট খুলে দেওয়ার দাবি
নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমণপিপাসুরা সারা বছর উন্মুখ হয়ে থাকেন শীত আগমনের জন্য। পরিবার-পরিজন, সবান্ধবে দলবল নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁদের গন্তব্য থাকে বান্দরবান।
বান্দরবানের চিম্বুক, নীলগিরি, জীবননগর, ডিম পাহাড়, তাজিংডং, কেউক্রাডং পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখলে মনে হবে যেন পৃথিবীতে নয়, শান্তিময় কোনো এক গ্রহ। সাদা মেঘের নীলাকাশ ও সবুজ পাহাড়ের দৃশ্য দেখার সুযোগ থাকায় পর্যটন মৌসুমসহ সারা বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে বান্দরবানে।
কিন্তু সম্প্রতি কিছু বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ায় জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে এ জেলায় পর্যটক আগমনে নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই সময়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে 'ভাত দেন না হয় পর্যটন স্পট খুলে দেন' ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করেন হোটেল-রেস্টুরেন্টের শ্রমিক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা-ইজিবাইকচালকসহ শত শত পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্মী।