কথা রেখেছেন প্রবাসীরা, স্থিতিশীল রিজার্ভ
জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনেক প্রবাসী রেমিট্যান্স না পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত প্রবাসী আয় না পাঠানোর জন্য ক্যাম্পেইনও করেছিলেন। তারা জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর রেমিট্যান্স পাঠাবেন। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। এর তিন দিন পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান তিনি। প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান ও নিজেদের দেওয়া কথা রেখেছেন প্রবাসীরা।
সেই হিসেবে, গত তিন মাসে (আগস্ট থেকে অক্টোবর) প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৭০২ কোটির বেশি মার্কিন ডলার। এতে আগের বছরের একই সময়ের (আগস্ট থেকে অক্টোবর) তুলনায় প্রবাসী আয় বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। প্রবাসী আয়ের এমন বৃদ্ধিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পতন থামানো সম্ভব হয়েছে। ইতিবাচকভাবে উন্নতির দিকে যাচ্ছে রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, গত ৬ নভেম্বরে দেশের গ্রস রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। এদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়ায় ২০ বিলিয়ন ডলার। গত ৩ নভেম্বর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের বিপিএম-৬ এর হিসাবমান অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগে গত ১ অক্টোবর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের বিপিএম-৬ এর হিসাবমান অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।
দেশের শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের ব্যাংকাররা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের গত তিন মাসে (আগস্ট থেকে অক্টোবর) প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আগের বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের গত তিন মাসের একই সময়ে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। যা এই সময়ের জন্য ইতিবাচক। এর প্রভাবে দেশের রিজার্ভ কমার গতিও রোধ হয়ে উত্থান দিকে এগিয়ে এসেছে।
ব্যাংকাররা আরও যোগ করেন, গত বছরের ডিসেম্বরে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ২৭ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের বিপিএম-৬ এর হিসাবমান অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ২১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। পরে রিজার্ভ আবারও নিচের দিকে নামতে শুরু করে। যা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়েছিল। এই অবস্থায় গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পরিবর্তন হয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও রিজার্ভ কমেছিল। কিন্তু, সেখান থেকে এখন রিজার্ভ ইতিবাচকভাবে বাড়ছে। সেই হিসেবে, গত অক্টোবরের শেষ দিকে রিজার্ভে উত্থান ঘটে। এটি ভালো খবর। দেশের এই অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যে রিজার্ভ বৃদ্ধি দিকে এসেছে, যা আমাদের নতুন করে আশা জাগিয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, চলতি বছরের জুলাইয়ে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের বিপিএম-৬ হিসাবমান অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। আগস্টে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের বিপিএম-৬ হিসাবমান অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বরে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের বিপিএম-৬ হিসাবমান অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বাড়ায় দেশে প্রবাসী আয় বেড়েছে। চলতি বছরের গত তিন মাসে (আগস্ট থেকে অক্টোবর) প্রবাসী আয় এসেছে ৭০২ কোটি ৩৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। আগের বছরের (২০২৩ সাল) একই সময় (আগস্ট থেকে অক্টোবর) প্রবাসী আয় এসেছিল ৪৯০ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এই সময়ের মধ্যে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২১১ কোটি ৮১ লাখ ১০ হাজার ডলার বা ৪৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
২০২৩ সালের আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ ডলার। ২০২৪ সালের আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। গত বছরের আগস্টের তুলনায় চলতি বছরের আগস্টে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার বা ৩৯ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ। আগের বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ ডলার। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় বেড়েছে ১০৬ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার বা ৮০ দশমিক ১৭ শতাংশ। আগের বছরের অক্টোবরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার। চলতি বছরের অক্টোবরে প্রবাসী আয় এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার ডলার। গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবরে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৪২ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে সচেতনতা বাড়ানোর কারণে এখন হুন্ডি বা অবৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা কমেছে। এতে বর্তমানে প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
দেশের রিজার্ভ বেড়েছে জানিয়ে হুসনে আরা শিখা বলেন, আগের বছরের তিন মাসের (আগস্ট থেকে অক্টোবর) তুলনায় চলতি বছরের গত তিন মাসে (আগস্ট থেকে অক্টোবর) একই সময়ে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৪৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। এছাড়া দেশের গ্রস রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। আইএমএফ হিসাব বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার। যা আগের থেকে বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদানের পর রিজার্ভের পতন থামানোর বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘নানা প্রচেষ্টায় এখন অর্থপাচার রোধ করা গেছে। আবার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ার কারণে আন্তঃব্যাংকে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। আর আমি চেষ্টা করছি রিজার্ভে হাত না দেওয়ার। বাংলাদেশ ব্যাংক আগের মতো ডলার বিক্রি করছে না। কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে রিজার্ভে হাত না দিয়ে। যার ফলে রিজার্ভও বাড়তে শুরু করেছে।’
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দেশীয় শিল্পের বিকাশে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে।’
গত তিন মাসের প্রবাসী আয়
অক্টোবর : সদ্য বিদায়ী অক্টোবর মাসে প্রবাসী আয় দেশে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। যা দেশীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৫৮০ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৪০০ টাকা (প্রতি ডলার ১১৯ টাকা ৩৩ পয়সা হিসেবে)। মাসটিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৪ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭২ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১ কোটি ৯৯ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর মধ্যে অক্টোবরে একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৪৩ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে আসা অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৬ কোটি ২৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এরপর জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৯ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৫ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ১৪ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
সেপ্টেম্বর : গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার। এটা দেশের ইতিহাসে কোনো একক মাসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। তবে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে। তখন প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। যা ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় রেকর্ড। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড চলতি বছরের জুনে। এই মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৬৫ কোটি তিন লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছিল ৬৩ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১০ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬২ লাখ ১০ হাজার ডলার। দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সেপ্টেম্বর একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছিল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এই ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ৪০ কোটি ২৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে আসা অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল ৩২ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার ডলার। এরপর ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল ২৪ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার, রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
আগস্ট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে প্রবাসীদের মধ্যে রেমিট্যান্স না পাঠানোর প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে। শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স পাঠাবেন না বলে স্ট্রাইক করে অনেক প্রবাসী। এতে গত জুলাইয়ে প্রবাসী আয়ে মন্দা দেখা দেয়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর তিনদিন পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর থেকে প্রবাসী আয়ের পালে লাগে হাওয়া। সেই হাওয়ায় গত আগস্টে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৬ হাজার ৫৮২ কোটি ৫৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১১৯ টাকা ৬৭ পয়সা হিসাবে)। যা গত বছর (২০২৩) একই সময় (আগস্ট) প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। সে হিসাবে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬২ কোটি ১৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার বা ৩৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অবশ্য আগস্টের প্রথম ১০ দিনে (১ থেকে ১০ আগস্ট) প্রবাসী আয় এসেছিল ৪৮ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। পরের সাত দিনে (১১ থেকে ১৭ আগস্ট) প্রবাসী আয় এসেছিল ৬৫ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। পরের সাত দিনে (১৯ থেকে ২৪ আগস্ট) প্রবাসী আয় এসেছিল ৫৮ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার ডলার। মাসটিতে শেষ সাত দিনে (২৫ থেকে ৩১ আগস্ট) প্রবাসী আয় এসেছে ৫০ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার ডলার। যেখান আগের মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আগস্টে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৭৫ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৮ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সাত কোটি ৮১ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর মধ্যে আগস্টে একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছিল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় ৪০ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছিল। আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল ২৯ কোটি তিন লাখ ১০ হাজার ডলার। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার ডলার, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ১৫ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ছয় লাখ ৫০ হাজার ডলার এসেছিল।
জুলাই : দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল চলতি বছরের জুলাইয়ে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে রেমিট্যান্স আসা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছিল। জুলাইয়ে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। যা আগের বছরের (২০২৩ সাল) জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার। এই সময়ের ব্যবধানে প্রবাসী আয় কম এসেছিল ছয় কোটি ৪১ লাখ ডলার বা তিন দশমিক ২৫ শতাংশ। এদিক গত ১৪ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত (১৪দিন) দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ৫৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে প্রতিদিন গড়ে এসেছিল চার কোটি ২০ লাখ ডলার। জুলাইয়ের প্রথম ১৩ দিনে প্রবাসী আয় এসেছিল ৯৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। মাসটির প্রথম ১৩ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছিল সাত কোটি ৫২ লাখ ডলার। জুলাইয়ে শেষ ৪ দিনে (২৮ থেকে ৩১ জুলাই) প্রবাসী আয় এসেছিল ৩৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। শেষ ৪ দিন প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছিল আট কোটি ৫৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে শুধুমাত্র গত ৩১ জুলাই প্রবাসী আয় এসেছে ১২ কোটি ডলার। যা আগের মাস জুনে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার। জুনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছিল আট কোটি ৫৪ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার। মাসটিতে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ছয় কোটি ৩৬ লাখ ডলার। গত জুনে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় পেয়েছিল দেশ। এক মাস না যেতে প্রবাসী আয়ে উল্টোচিত্র দেখা গেল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাইয়ে পাঁচদিন (১৯ থেকে ২৩ জুলাই) ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছিল। প্রবাসী আয়ের এই নেতিবাচক প্রভাব দেশের রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হয়েছিল। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন কৌশলে যেকোনো মূল্যে প্রবাসী আয় বাড়াতে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার গত ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে। এর ফলে গত ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। এসময় ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেন পুরো বন্ধ ছিল। দীর্ঘ বন্ধের পর গত ২৪ জুলাই থেকে ব্যাংকের কার্যক্রম চালু হয়। অবশ্য সেইদিন ব্যাংকের লেনদেন চলে চার ঘণ্টা (বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত)। ব্যাংক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পাঁচদিন (১৯ থেকে ২৩ জুলাই) ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় আসা সম্ভব ছিল না। এতে ১৪ দিনে (১৪ থেকে ২৭ জুলাই) প্রবাসী আয়ে ভাটা পড়ে। তবে মাসটির শেষ চার দিনে প্রবাসী আয় বেড়েছিল। মাসটির শেষ চারদিনে প্রবাসী আয় এসেছে ৩৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
এদিকে, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ডলার, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার, মে মাসে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং জুনে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার এসেছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৯ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার ডলার, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি ৪০ হাজার ডলার, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।