নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে যতদূর এগোল কমিশন ও সার্চ কমিটি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক শাসনামলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, তা ছিল চরম বিতর্কিত, যা নিয়ে সোচ্চার ছিল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। সোচ্চার ছিল অন্তর্জাতিক মহলও। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ছিল, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা একেবারে ধ্বংস করে ফেলেছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ ছিল নির্বাচনব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার।
সর্বশেষ ৫ আগস্ট আ.লীগ সরকারের পতন হলে গঠিত হয় অর্ন্তবর্তী সরকার। ফলে, এ সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে কয়েকটি কমিশন গঠন করে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে কমিশন। ৩ অক্টোবর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে এ কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এ কমিশন কাজ করে চলেছে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত এ কমিশন মূলত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন-বিধিগুলো পর্যালোচনা করছে। পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে মানুষের মতামত নিচ্ছে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও মেসেঞ্জার এবং ই-মেইলে মতামত দেওয়া যাচ্ছে। গত ২২ অক্টোবর থেকে এ মতামত নেওয়া শুরু করে কমিশন। আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মতামত নিবে কমিশন।
সংস্কার কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ফেসবুক মেসেঞ্জারে ৪৬ জন, ফেসবুক পেজে ১৮২ জন, ই–মেইলে ১০৯ জন এবং ওয়েবসাইটে ১৮৫ জন তাদের মতামত দিয়েছেন। এর মধ্যে কোনো কোনো মতামত এসেছে সংগঠনের পক্ষ। আবার একই ব্যক্তি একাধিক বিষয়েও পৃথকভাবে মতামত পাঠিয়েছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনপদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত, সংবিধান ও নির্বাচনি আইনে কোন ধরনের পরিবর্তন দরকার, প্রার্থীদের যোগ্যতাসংক্রান্ত বিধানে পরিবর্তন–সংযোজন আনা, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নির্বাচনে পুলিশসহ সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষপাতহীন দায়িত্ব পালন কেমন হওয়া উচিত, এসব বিষয়ে বেশি মতামত এসেছে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশন জোরেশোরে কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ইতিমধ্যে একটি লিখিত প্রস্তাবনা দিয়েছে সংস্কার কমিটির কাছে। নির্বাচন ব্যবস্থার নানা ত্রুটি তারা খতিয়ে দেখছে কমিশন। কমিশনের কাজের অগ্রগতি কতদূর, তা জানতে এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে। তিনি ৫ নভেম্বর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, তাঁর কমিশন নানাভাবে ব্যক্তি, সংগঠন ও দলের কাছ থেকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে মতামত নিচ্ছে। অনেকে সংস্কারের ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন ইতিমধ্যে। কেউ কেউ আবার বিদ্যমান নির্বাচনপদ্ধতি বহাল রাখার বিষয়েও মতামত দিয়েছেন। আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত এ মতামত নেওয়া হবে। সব মিলিয়ে যে মতামতগুলো আসবে, তা পর্যালোচনা করা হবে। ইতিমধ্যে ডিজিটাল মাধ্যমে পাওয়া এসব মতামত পর্যালোচনার কাজ শুরু হয়েছে। এখন আইন-কানুন বিধি বিধান পর্যালোচনা করা হচ্ছে, নির্বাচন ব্যবস্থা ভালো করার জন্য কোনটা দরকার, কোনটা দরকার না তা নিয়ে অনেকের মত নেওয়া হচ্ছে।
ডিজিটাল মাধ্যমে মতামত নেওয়া শেষ হলে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করার চিন্তা আছে। কিন্তু, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরাসরি বসবে না কমিশন। যদিও রাজনৈতিক দলগুলো কী ধরনের সংস্কার চায়, সে বিষয়ে দলগুলোর কাছ থেকে লিখিত মতামত নেওয়া হবে বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
কমিশন সূত্র জানায়, সবার মতামত নেওয়া ও অংশীজনদের সঙ্গে বসার পর সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে কমিশন। এরপর আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব জমা দেবে কমিশন। এরপর সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রস্তাব তৈরির ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় পর্যালোচনা করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। ইতিমধ্যে সংবিধানের নির্বাচনসংক্রান্ত বিধান, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব আইন ও বিধি, নির্বাচনসংক্রান্ত সব ফরম পর্যালোচনা করছে কমিশন।
এ ছাড়া বিদ্যমান নির্বাচনপদ্ধতি পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ তৈরি, বর্তমান নির্বাচন পরিচালনা ব্যবস্থা পর্যালোচনা ও সুপারিশ, প্রবাসী ও নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন ও কারিগরি দিক পর্যালোচনা ও সুপারিশ তৈরি, নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ এবং বাংলাদেশে অতীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলো মূল্যায়ন করে সেসব নির্বাচনের দুর্বলতা ও শিক্ষণীয় বিষয়গুলো চিহ্নিত করবে কমিশন।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়া পর্যালোচনা এবং শিক্ষণীয় দিকগুলো চিহ্নিত করার কাজও করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সুপারিশও থাকবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, মাঠ প্রশাসন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধকের কার্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের লক্ষ্যে প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে। এ বিষয়গুলো সংস্কার কমিশনের কার্যপরিধির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সংস্কার কমিশন যখন তাদের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে, তখন সরকারের ওপর দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছে। শুধু দেশি চাপ নয়, চাপ আসছে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও। অন্যদিকে সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা মনে করছেন, নানাবিধ প্রয়োজনীয় সংস্কারকে এড়িয়ে তড়িঘড়ি নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যে প্রত্যাশা, তা অপূর্ণই থেকে যাবে। ফলে, সংস্কার ও নির্বাচন দুটোকেই একসঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচানের জন্য চাপ দেবে, এটা স্বাভাবিক ঘটনা।’
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে ফিরতেই হবে এবং সেটার একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। এ নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমরা নির্বাচনের ব্যবস্থা করেই বিদায় নেব। তবে, মাথায় রাখতে হবে, নির্বাচন প্রক্রিয়া বা নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে। আর সেজন্যই নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি। আমরা সার্চ কমিটিও গঠন করছি। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে কাজ করছি। সব মিলিয়ে আমরা নির্বাচনের পথেই আগাচ্ছি।’
কমিশনপ্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত অংশীজনের সঙ্গে কথা বলব। তাদের কাছ থেকে সুপারিশ নেব। তবে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের বসার দরকার নেই। কারণ, তাদের সঙ্গে আমাদের দরকাষাকষির দরকার হবে না। তারা বরং লিখিত আকারে আমাদের কাছে সুপারিশ পাঠাবে। সে আহ্বান আমরা করব। তাদের থেকে আসা সুপারিশ পর্যালোচনা করব। তারপর আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে কমিশনের সুরাপিশ হস্তান্তর করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে সরকার।’
এদিকে ৩১ অক্টোবর সরকারের নির্বাচনমুখী যাত্রায় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম প্রস্তাব করতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বিচারপতি জুবায়ের ছাড়াও এই কমিটিতে প্রধান বিচারপতি মনোনীত সদস্য হিসেবে আছেন হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান। আইন অনুযায়ী, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম এবং সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান (পিএসসি) মোবাশ্বের মোনেম পদাধিকার বলে সার্চ কমিটির সদস্য হয়েছেন। আর রাষ্ট্রপতির মনোনয়নে সার্চ কমিটিতে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম চেয়েছে এ বিষয়ে গঠিত সার্চ কমিটি। কমিটি রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠনের পাশাপাশি যেকোনো ব্যক্তি তার নাম প্রস্তাব করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। এজন্য চার দিন সময় দিয়ে আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নাম পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে সর্বোচ্চ পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করা যাবে। বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও দল থেকে এ নাম প্রস্তাব করেছেন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিতে পাঁচ জনের নাম প্রস্তাব করেছে বিএনপি। ৬ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদের কাছে এই নামের তালিকা হস্তান্তর করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ এবং যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশনের মতামত দেওয়ার আগে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন করল সরকার। এতে কোনো অসুবিধা হবে কিনা, জানতে চাইলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সরকার সার্চ কমিটি গঠন করতে পারে। কমিশন ও সার্চ কমিটি, একটার সঙ্গে আরেকটা সাংঘর্ষিক না। সরকারের ওপর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। সেজন্য, সরকার নির্বাচনমুখী হতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেলে সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ দেবে, তারা সে সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে। সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি, সবার প্রচেষ্টায় দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভালো দিকে যাবে।’
দীর্ঘদিন নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করা বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে এ কমিশনে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহেমদ, নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল আলীম, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ডা. জাহেদ উর রহমান, শাসনপ্রক্রিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বিশেষজ্ঞ মীর নাদিয়া নিভিন, ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সাদেক ফেরদৌস। এ ছাড়া একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হলেও তার নাম ঘোষণা করা হয়নি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। নানা জল্পনা-কল্পনার পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর বিএনপিসহ নানা মহল থেকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে তাগিদ আসতে থাকে। আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, যৌক্তিক সংস্কার শেষে নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে নির্বাচনি রোডম্যাপ না থাকায় বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। এরপর গত ২৯ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক সংলাপ শুরুর অনুরোধ জানান।
এই যখন অবস্থা, তখন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিযোগ পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ২৮ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বিপ্লব ও ফরমান : সরকার ও সংবিধান’ শিরোনামের এক লেখায় লিখেছিলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক সংকটে। আলোচনার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কমিশনের প্রধান হিসেবে পত্রিকায় লিখে জনগণকে অবহিত করাই সমীচীন মনে করছি।’ এরপর থেকে চারিদিকে আলোচনা চলতে থাকে, যেকোনো সময় পদত্যাগ করবেন নির্বাচন কমিশনাররা। ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব নিলেও আড়াই বছরের মাথায় গত ৫ সেপ্টেম্বর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন সাবেক সিইসিসহ অন্য চার নির্বাচন কমিশনার। সেদিন তারা ইসি সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে নির্বাচন ভবন ছাড়েন। নির্বাচন ভবন বের হয়ে যাওয়ার সময় বাইরে থাকা বিক্ষুব্ধ জনতা নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা ও মো. আনিছুর রহমানের গাড়িতে জুতা নিক্ষেপ করে। তবে, পদত্যাগ করে বন্ধুর গাড়িতে করে নির্বাচন ভবন ছাড়েন সিইসি।
এরপর ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ঘোষণা দেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে কমিশন গঠন করা হবে। এ কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। ৩ অক্টোবর তাকে কমিশন প্রধান করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।