ডিপফ্রিজে মরদেহ : খুনি ছেলে নাকি ভাড়াটিয়া, গ্রেপ্তার ৩
বগুড়ায় গৃহবধূ উম্মে সালমাকে হত্যার পর মরদেহ ডিপফ্রিজে রাখার ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। তাঁকে হত্যার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে বাসার ভাড়াটিয়া এক নারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দিনগত রাতভর অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে, উম্মে সালমাকে হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান পুলিশি রিমান্ডে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার করা তিনজন হলেন নিহত উম্মে সালমার বাসার চারতলার ভাড়াটিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের উত্তর সাজাপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী মাবিয়া বেগম (৫০), তার সহযোগী গুনাহার ইউনিয়নের তালুচ পশ্চিমপাড়ার আব্দুর রহিমের ছেলে মোসলেম উদ্দিন(২৬) ও একই এলাকার নিখিল রবিদাসের ছেলে ভ্যানচালক সুমন রবি দাস (২৮)।
দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের সময় ওই বাসা থেকে হারিয়ে যাওয়া ওয়াইফাই রাউটার এবং মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তারা প্রথমে আটক করেন বাসার ভাড়াটিয়া মাবিয়া আক্তারকে। তিনি পুলিশকে জানান, চার মাস আগে উম্মে সালমার ওই বাসা ভাড়া নিয়ে তিনি এখানে মাদক ও অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি টের পাওয়ার পর উম্মে সালমা ও তাঁর স্বামী আজিজুর রহমান ভাড়াটিয়ি তাঁকে এক মাস ধরে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলছিলেন। তার কাছে দুই মাসের ভাড়াও পাওনা ছিল। বিষয়গুলো নিয়ে মাবিয়া বাড়ির গৃহকর্ত্রী উম্মে সালমার উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই তিনি তাঁর সহযোগী ও মাদক ব্যবসায়ী সুমন চন্দ্র সরকার এবং মুসলিমকে নিয়ে গত শনিবার উম্মে সালমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মাফিক ঘটনার সময় তিনি প্রথমে ওই বাসায় প্রবেশ করেন। পরে মোবাইল ফোনে ডেকে নেন দুই সহযোগী সুমন ও মুসলিমকে। তাঁরা দুজন বাসায় ঢুকেই চেতনানাশক স্প্রে করে উম্মে সালমাকে অচেতন করেন। এরপর তাঁর নাক-মুখ ও হাত বেঁধে বাসার ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে তারা তিনজন সেখান থেকে বেরিয়ে যান।
পুলিশ আরও জানায়, আটকের পর মাবিয়া সুমন ও মুসলিম উম্মে সালমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার পুরো বিবরণ দিয়েছেন। পরে তাঁদের দেখানো জায়গা থেকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া জিনিসপত্রগুলো উদ্ধার করে। বিকেলে তাদের তিনজনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আদালতে পাঠায় পুলিশ।
এদিকে, গত ১১ নভেম্বর উম্মে সালমা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে (১৯) গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরের দিন ১২ নভেম্বর দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ১২-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর এহতেশামুল হক খান সাংবাদিকদের জানান, স্বামী আজিজুর রহমান, ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানসহ আরও একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা র্যাব অফিসে ডাকেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সাদ তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
হত্যার কারণ হিসেবে র্যাবের এই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রেমঘটিত বিষয় এবং হাত খরচের টাকার জন্য সাদ তাঁর মাকে হত্যা করেছেন।
বগুড়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, কিছু তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা কিছু তথ্য আমাদের দিয়েছেন। সেগুলো আমরা যাচাই করছি। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। তারা যেসব কথা বলবে, যেসব তথ্য আমরা যাচাই করব। বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।
ঘটনার সঙ্গে নিহত উম্মে সালমার ছেলে জড়িত থাকা প্রসঙ্গে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এমন কোনো প্রমাণ এখনও আমাদের কাছে নেই। তিনি র্যাবের কাছে স্বীকার করলেও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এরপর তাকে আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিই। এখনও রিমান্ডেই আছে।