সবাইকে সাথে নিয়ে দেশ পুনর্গঠন করতে চাই : তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘সবাইকে সাথে নিয়ে দেশ পুনর্গঠন করতে চাই বলেই জাতীয় সরকারের কথা বলেছি। বাংলাদেশে প্রায় ২০ কোটি মানুষের বসবাস। সকল ধর্মের মানুষ নিশ্চিন্তে বসবাস করবে এটাই আমাদের অঙ্গীকার। ধর্ম যার যার আর নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। জনগণের আস্থা বিশ্বাস আর ভালবাসায় থাকতে না পারলে ছিটকে পড়তে হবে।’
রোববার (৮ ডিসেম্বর) বরিশাল শিল্পকলা একাডেমিতে ও রংপুরে কেন্দ্রীয় বিএনপি আয়োজিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’বিষয়ে বিভাগীয় কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবসহ গত ১৫ বছরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের নামে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ করা হবে। সকল শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা হবে। সারাদেশে এক লাখ পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে। তার মধ্যে ৭০ হাজার নারী চিকিৎসক নেওয়া হবে।
তারেক রহমান বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক কর্মীর সবচেয়ে বড় পুঁজি হচ্ছে মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালবাসা। এই পুঁজির বাইরে যখনই সে অন্য কোনদিকে মনোনিবেশ করবে, তখনই কিন্তু তার ধ্বংস শুরু হয়ে যাবে। স্বৈরাচারই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ১৫ বছর বিভিন্নভাবে ক্ষমতায় থেকেছে, বিভিন্নভাবে অনেক কিছু করে ফেলার চেষ্টা করেছে, আজ তার কোনকিছু আছে? আজ তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, মানুষ তাদেরকে ঘৃণা করছে, খেদিয়ে দিয়েছে। দয়া করে এই উদাহরণটি মনে রাখবেন। ১৫ বছর জোড় করে তারা ক্ষমতায় টিকেছিল, মানুষের অর্থ সম্পদ লুটতরাজ করেছে, অনেক কিছু করে ফেলার চেষ্টা করেছে, কিছু আছে আর? কোনকিছু ধরে রাখতে পেরেছে? তাই আপনাদেরকে বলছি, আপনাদের রাজনৈতিক যে পুঁজি, জনগণের আস্থা, সেটি ধরে রাখার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ। সেই জনগণের আস্থা ধরে রাখাই আমার আপনার রাজনীতি।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করেছি, বিএনপির নেতা-কর্মীরা আন্দোলন করেছে। কিন্তু একক বিএনপির আন্দোলন সফল হয়নি। আন্দোলন সফল হয়েছে আরো অনেক রাজনৈতিক দল, সমাজের সর্বস্তরের মানুষ, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ একসাথে নেমে এসেছিল বলে। সবার সম্মিলিত চেষ্টাতেই বিএনপির আন্দোলন সফল হয়েছিল। লাখো কোটি মানুষের প্রচেষ্টায়, সকলের মিলিত শক্তিতে স্বৈরাচারকে বিদায় করা সম্ভব হয়েছে। ঠিক সেইভাবে, পরবর্তীতে দেশকে যদি গড়তে হয়, একক বিএনপি কিন্তু পারবে না। দেশকে গড়তে হলে, পুনর্গঠন করতে হলে, আমাদের পুরো জাতিকে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। জুলাই-আগস্ট মাসে যেভাবে সবাই রাজপথে নেমে এসেছিলেন, সেভাবেই সবাইকে সাথে নিয়ে আমাদেরকে দেশ পুনর্গঠন করতে হবে। আর এই ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে হবে বিএনপিকে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘সবাই বলেন যে এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। বিএনপির প্রতি মানুষের এই যে আস্থা, এই যে সম্ভাবনা, সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশ পুনর্গঠন করতে হলে, সবার আগে দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত থাকতেই পারে, কিন্তু এটাও তো ঠিক যে এই ৩১ দফাই তো শেষ নয়, এটা তো ধর্মগ্রন্থ নয় যে এটাকে পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা সংশোধন করা যাবে না। কোন ব্যক্তি, কোন দল বা কোন সংগঠন যদি ভাল কোনো প্রস্তাব দেয়, অবশ্যই আমরা সেটি গ্রহণ করবো। দেশকে যদি পুনর্গঠন করতে হয় তো সেটা বিএনপি একা পারবে না, সব দল আর মতকে সাথে নিয়েই করতে হবে। সেজন্যেই আমরা জাতীয় সরকারের কথা বলেছি। যে দলগুলোকে নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছিলাম, যারা আমাদের সাথে ছিল, আমরা চাই তাদের সবাইকে একসাথে নিয়ে এমন একটি সরকার গঠন করতে; যেখানে সব মানুষ মিলে মতামত রাখতে পারবে এবং সবাই মিলে দেশের জন্য কাজ করতে পারবে।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘আমরা সংসদের উচ্চ কক্ষের কথা বলেছি, কারণ দেশে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা কোন দল না করলেও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন, দেশের জন্য কথা বলতে পারেন, দেশের জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারেন। এরাও যাতে দেশের জন্য কিছু করার সুযোগ পান সেজন্যেই আমরা উচ্চ কক্ষের কথা বলেছি। পলাতক স্বৈরাচার যেমন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব জায়গায় বিভেদ তৈরী করেছিল, সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করেছিল, আমরা চাইছি দেশকে পুনর্গঠন করতে, এই ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা এই দেশকে মানুষের জন্য গড়তে চাই, আর সেটা করতে হলে সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। দেশের মানুষের আস্থা আছে বিএনপির প্রতি, সেই আস্থা ধরে রাখতে আমি একা পারবো না, দলের নেতারা পারবে না, এটা তখনই সম্ভব যখন আপনারা, দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দেশের সকল মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন। তখনই আমরা পারবো দেশ পুনর্গঠন করতে। মনে রাখতে হবে এই ৩১ দফা কেবল বিএনপি কিংবা বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য নয়, এটা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য।’
এর আগে সকাল থেকে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে আসতে শুরু করেন বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় কর্মশালা। রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা বিষয়ে বক্তব্য দেন নেতারা। পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে যোগ দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন ৩১ দফা প্রণয়ন কমিটির সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, বরিশাল বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হক নান্নু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নেওয়াজ হালিমা আরলী, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিব, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য প্রফেসর মোর্শেদ হাসান খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ, এবায়েদুল হক চাঁন, মেসবাহউদ্দিন ফরহাদ, সরফুদ্দিন সান্টু, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহিন, বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার ও যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা নাসরিনসহ বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার বিএনপির শীর্ষ নেতারা।