পঞ্চগড়ের কিশোরীকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে ভারতীয় মিডিয়া : পুলিশ সুপার
বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যাচার করছে—এমন অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সি। আজ রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে অবৈধপথে ভারতে প্রবেশের পর বিএসএফের হাতে আটক হয় পঞ্চগড়ের কিশোরী প্রিয়ন্তী রায় প্রমি। আর দেশে চলমান ইসকন ইস্যুকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে ভারতীয় মিডিয়া প্রমিকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, গত সোমবার দুপুরে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় কিশোরী প্রমি পরিবারকে না জানিয়ে তার মামাবাড়ি বেড়াতে যায়। পরে ওই দিন রাতে অবৈধ পথে ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে ১০ম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী। তার চোখের সমস্যা থাকায় ভারতে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। রাতে ভারতে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে ভোররাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হয় সে। এরপর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার চপড়ামারী থানায় তাকে নিয়ে যায় বিএসএফ। এরপর প্রমির ভারতীয় এক আত্মীয় ওই থানায় গিয়ে তার পরিচয় দেন। থানা থেকে তাকে আদালতের নির্দেশে সেফহোমে নেওয়া হয়। এদিকে প্রমির ভারতে যাওয়া নিয়ে একটি ভিডিওটি তৈরি করেছে ‘আর বাংলা’সহ ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যম। এ নিয়ে জেলাজুড়ে সমালোচনা শুরু হলে তদন্তে নামে পুলিশ।
পুলিশ সুপার বলেন, দেশের বিরুদ্ধে গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ভারতের মিডিয়া অপপ্রচার চালিয়ে গুজব ছড়িয়ে সম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টির পায়তারা করছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সি জানান, এ ঘটনার পর পরিচিত দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়র বানোয়াট বক্তব্য নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে প্রমির পরিবার। তবে ভারতে কীভাবে গেল প্রমি বিষয়টি জানে না তারা। বাংলাদেশে নিরাপদে আছেন, ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। নিজের সন্তানকে নিরাপদে ফেরত পেতে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এসে আবেদন করেছেন প্রমির মা-বাবা। তার বাবা কিছুদিন আগে স্ট্রোক করে এখন কিছুটা সুস্থ রয়েছেন।
ভারতীয় মিডিয়া প্রচার করে অর্পিতা (যদিও তার নাম প্রিয়ন্তী রায় প্রমি) ইসকন ভক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারের ভয়ে বাবা ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি। বর্তমানে প্যারালাইজড-মা খুবই অসুস্থ, তারা আসতে পারবে না। বাংলাদেশ তাদের জন্য অনিরাপদ, তাই ওই তরুণিকে নিরাপত্তার জন্য ভারতে আত্মীয়র বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তবে ওই ভিডিওতে তরুণির কোনো বক্তব্য ছিল না।
ওই তরুণির ভারতীয় আত্মীয় অরানন্দ অধিকারীকে ভিডিওতে বলতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে তাদের হুমকি দিচ্ছি, বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছে, তরুণিকে টর্চার করছে, অপহরণ করবে। প্রাণভয়ে চলে আসছে। বাবা মায়ের সামনে যদি মেয়েকে টেনে নিয়ে যায়, তাহলে ওরা সেখানে থেকে কী করবে। দুঃখে চলে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রিয়ন্তী রায় প্রমি পঞ্চগড় সদর উপজেলার জালাসি এলাকার জয়দেব চন্দ্র রায় ও অনুরাধা রাণীর মেয়ে। সে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বেশ কয়েক বছর ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছে সে। হঠাৎ করে সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং ভিসা না পাওয়ায় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে থাকা পিসির (ফুপু) বাড়িতে যাওয়ার পথে বিএসএফের হাতে আটক হয়। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে মেয়েটিকে প্রিয়ন্তী রায় প্রমি বলে নিশ্চিত করেছেন তার বাবা জয়দেব চন্দ্র রায়।
জয়দেব চন্দ্র রায় বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছে প্রমি। হঠাৎ করে সমস্যা বেড়ে যায়। ভিসা না পাওয়ায় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পিসির বাড়িতে চিকিৎসার জন্য পাঠাই। যাওয়ার পথে বিএসএফের হাতে আটক হয় সে।’