প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত নিজেদের প্রভু মনে করে : রিজভী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবজ্ঞা করেছেন বলে অভিযোগ তুলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত অহংকার করে নিজেদেরকে প্রভু মনে করে। তা না হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বললেন, ১৬ ডিসেম্বর হচ্ছে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়। তিনি তো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে, বাংলাদেশের স্বাধীন ভূখণ্ডকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট করলেন, অবজ্ঞা করলেন।’
আজ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির সামনে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যুদ্ধ করেছে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা, লুঙ্গি কষে বেঁধে নদী, নালা, খাল-বিল, জঙ্গল থেকে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করেছেন। আপনারা (ভারত) বন্ধুর ভূমিকা পালন করেছেন, তাহলে এটা বাংলাদেশের বিজয় দিবস না হয়ে ভারতের বিজয় দিবস হয় কী করে? তার মানে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে অবজ্ঞা করতে চান। আমাদের যে ৩০ লাখ মানুষ অকাতরে জীবন দিল, সেটিকে তারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে চান। আমেরিকা যখন যুদ্ধ করছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে, তখন ফ্রান্স আমেরিকাকে সাহায্য করেছিল। সেই ১৭৭৬ সাল থেকে ১৭৮১ সাল তাদের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত সাহায্য করেছে। কই ফ্রান্স তো বলে না, এটা তাদের বিজয় দিবস। আমেরিকানরা পালন করে তাদের বিজয় দিবস, তাদের স্বাধীনতা দিবস।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘গোটা বিশ্ববাসী জানে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা তাদের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে। ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিল। ওই জীবনের কি কোনো মূল্য নেই মোদী বাবু? আপনি বলছেন, এটা আপনাদের বিজয় দিবস, এটা ভারতের বিজয় দিবস। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল এম এ জি ওসমানী সাহেব একটি কথা বলেছিলেন, ভারত যদি আমাদের সহযোগিতা না-ও করত, তারপরও বাংলাদেশ স্বাধীন হতো, কারণ একজন তেজস্বী, অধম্য ও সাহসী ব্যক্তি যখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কোনো রাজনীতিবিদ নিতে পারেননি সেই সময়ে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে একজন তরুণ মেজর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে যে তরঙ্গ তৈরি করেছিলেন, সেই তরঙ্গে অন্যান্য সেনা অফিসাররা বাংলাদেশের মানুষ উদ্বুদ্ধ হন এবং তারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আজকে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মতিউর রহমান, হামিদুর রহমান এই যে বীরশ্রেষ্ঠ, তারা কিসের জন্য জীবন দিয়েছে? ওরা কি ভারতের বিজয়ের জন্য জীবন দিয়েছে? নাকি তাদের নিজের দেশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে এটা একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যুদ্ধ করেছে?’
দিল্লির নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘যুদ্ধ করে আমরা এ স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তারা (ভারত) মনে করে, চিরদিন আমরা তাদের গোলাম হয়ে থাকবে, অনুগত হয়ে থাকবে। আমি দিল্লির নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করেন, তাহলে ভারত থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এত অপপ্রচার কেন? শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে এই মনোকষ্টে আপনারা অসংখ্য মিডিয়ায় প্রতিদিন বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য রাখছেন, আপনাদের এত প্রেম কেন শেখ হাসিনার বিষয়ে? এটারও কারণ আছে, কারণ ভারতের বিএসএফ দুদিন-তিন দিন পরপর আমাদের সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করে, অথচ একমাত্র শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এটার প্রতিবাদ করে। দিল্লির সিংহাসনে যারা আছেন, তারা বলেন আমরা অন্যায় করি, বাংলাদেশিদের হত্যা করি, শেখ হাসিনাতো টু শব্দ করে না। এরকম প্রধানমন্ত্রীই তো আমাদের দরকার। সেই কারণে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হোক না হোক এবং যত বড়ই ফ্যাসিস্ট হোক তাকেই ক্ষমতায় রাখতে হবে। বিগত ১৬ বছর একমাত্র দিল্লি ছাড়া শেখ হাসিনাকে দুনিয়ার কোনো দেশ সমর্থন করেনি। এ কারণেই আজকে তাদের মনে খুব ব্যথা। তাই প্রতিদিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। আমরা ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে চাই না। বাংলাদেশে একটি পরিবর্তন হয়েছে, এই পরিবর্তন ১৬-১৭ বছরের নিরন্তর সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তাকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে।’
ভারতের উদ্দেশে রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘আপনারা সমস্ত শিষ্টাচার, সমস্ত রাষ্ট্রাচার, সমস্ত কূটনীতিকে উপেক্ষা করে আপনাদের পররাষ্ট্র দপ্তর, আপনাদের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা প্রতিদিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা, মিথ্যা কথা অপপ্রচার, অপতথ্য দিয়ে এক ধরনের একটা ভিন্ন পরিবেশ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। কিন্তু সারা দুনিয়ার মানুষ জানে, বাংলাদেশ কত সম্প্রীতির দেশ, কত শান্তির দেশ। যারা আমাদেরকে ঘৃণা করে, যারা আমাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে, তাদেরকে বলে রাখি, এই বিষোদগার যতদিন করবেন, আমারা প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ করে যাব।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম ও ছাত্রদল নেতা ডা. তৌহিদ আওয়ালসহ অন্যান্যরা।