প্রতিপক্ষের কাছে বিজিবি সদস্যদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করার আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
সীমান্তবর্তী প্রতিপক্ষের কাছে কোনো অবস্থাতেই পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত।’
আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার ও কলেজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে এসব কথা জানান উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ তোমরা যে তেজদীপ্ত কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেছ, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এটা সম্ভব হয়েছে কেবল তোমাদের কঠোর প্রশিক্ষণ, নিরলস প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও অদম্য আগ্রহের ফলে। মনে রাখবে, বৃহত্তর কর্মজীবনে কাজের ব্যাপ্তি ও পরিধি আরও বিস্তৃত হবে। তোমরা যখন সীমান্তে নিয়োজিত থাকবে, তখন তোমাদের সততা, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার ওপরই নির্ভর করবে এ বাহিনীর ভাবমূর্তি ও গৌরব।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘দেশ মাতৃকাকে রক্ষায় তোমরা প্রয়োজনে জীবন দেবে, তবু দেশের এক ইঞ্চি মাটি হাতছাড়া হতে দেবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করতে চাই, তোমরা আমাদেরকে হতাশ ও নিরাশ করবে না। জেনে রাখবে, তোমাদের দেওয়া নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাই দেশের মানুষের নির্বিঘ্ন ঘুম নিশ্চিত করবে। তোমরাই হবে আমাদের সীমান্তের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক।’
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে সুপরিচিত এ বাহিনী বাংলাদেশের চার হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা এবং সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের মহান দায়িত্ব অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সঙ্গে পালন করে আসছে।’
উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিজিবির সব সদস্য সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনো ধরনের সীমান্ত অপরাধ দমনে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। শুধু তাই নয়, বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায়ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ অত্যন্ত বিশ্বস্ততা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সমগ্র দেশবাসীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এজন্য আমি এ বাহিনীর মহাপরিচালক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি এবং আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, সেসব অকুতোভয় সদস্যদেরকে, যারা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে দুজন বীরশ্রেষ্ঠ এই বাহিনীকে তাদের অসম সাহস ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গর্বিত করেছেন। এ ছাড়া এ বাহিনীর সদস্য হিসেবে আটজন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম, ৭৮ জন বীর প্রতীক এবং ৮১৭ জন বীর শহীদের বীরত্বগাথায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ মহিমান্বিত। মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর গৌরবময় ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, চলতি বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আত্মদানকারী শহীদদের। গত জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা ছাত্র-জনতার দাবির সঙ্গে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আন্দোলনে আহত ও নিহত ব্যক্তি ও পরিবারের সহায়তার ক্ষেত্রেও বিজিবি এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আহত ছাত্র-জনতাকে নিজস্ব উদ্যোগে চিকিৎসা সেবা ও তাদের পুনর্বাসনে আর্থিক সহায়তা প্রদান বিজিবির সব সদস্যকে জনমানুষের আস্থা ও ভালোবাসার প্রতীকে পরিণত করেছে। বিজিবির এ মহতী উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, বিজিটিসিএন্ডসির কমান্ডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গাজী নাহিদুজ্জামান পিএসসি,ডেপুটি কমান্ডেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ সোহেল উস সামাদ, প্যারেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মেজর কে এইচ ইমরোজ হাসনাঈন, প্যারেড এ্যাডজুটেন্ট ছিলেন, এ ডি কে এইচ এম গোলাম কিবরিয়া। এ ছাড়া বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত রয়েছেন।