নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারে তিন মাস যথেষ্ট : মেজর (অব.) হাফিজ
নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারে তিন মাস যথেষ্ট বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, অতি দ্রুত নির্বাচন চাই। নির্বাচনি ব্যবস্থার যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন, সেটির জন্য তিন মাস সময় যথেষ্ট। সুতরাং, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার আসার সুযোগ দিন।’
আজ রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপিনেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘৭১ সালে যুদ্ধ করেছি, নির্বাচিত সরকার ছিল না বলে আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছিল। আবার কেন নির্বাচিত সরকারের জন্য আমাদের তর্ক-বিতর্ক করতে হবে?’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘নির্বাচনের কথা বললে উপদেষ্টাদের মুখ কালো হয়ে যায়। মনে হয়, আমরা কোনো অন্যায় দাবি করছি। আমরা কোনো অন্যায় দাবি করছি না। বিএনপিকে ক্ষমতায় বসান–সেটাও বলছি না। আপনারা কিংস পার্টি গঠন করবেন না। যারা রাজনীতি করতে চায়, তারা সরকার থেকে বেরিয়ে রাজনৈতিক দল গড়ে তুলুক।’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একটি পার্লামেন্ট সংস্কার করবে, সেই পার্লামেন্টকে আসার ব্যবস্থা করে দিন, শুধু শুধু সময়ক্ষেপণ করবেন না। ছয় মাসেই বোঝা গেছে, আপনাদের দৌড় কতটুকু। তবুও আপনাদেরকে সম্মান করি। আমরা সব রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ঐক্য চাই। ছাত্র-জনতার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আশা করি, এই ঐক্যের পথে আপনারা কেউ দেয়াল তৈরি করবেন না।’
মেজর (অব.) হাফেজ আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা মানুষকে উজ্জীবিত করেছে। সারা পৃথিবী জানে, বাঙালি লড়াইয়ের জাতি। তারা প্রতিরোধ করতে জানে। মুক্তিযুদ্ধ যদি না হতো তাহলে দেখা যেত এক মাস পরে ভারতে যারা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে, তারা দেশে ফিরে আসত এবং শেখ মুজিবকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হতো। আমরা দেশ বাঁচাতে এবং মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষার্থে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছি।’
আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশে কেন, পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রে এরকম দুর্নীতি করেছে, কোনো দল এটার প্রমাণ পাওয়া যাবে না। বিএনপি ও ছাত্র-জনতার ত্যাগের ফলে আমরা আবার নতুন করে গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছি। সুতরাং, আমাদের উচিত এই সময়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকা।’
ভারতের উদ্দেশে বিএনপিনেতা মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘তাদের পছন্দের নেত্রী বিদায় হওয়াতে তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। এখন বাংলাদেশের মধ্যে প্রবেশ করে আম গাছ কেটে নিয়ে যায়, বাংলাদেশের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা নীরবে অবলোকন করছি। ভুলে যাবেন না ৭১ সালে যুদ্ধ করে আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস অত্যন্ত সম্মানের ব্যক্তি, তাঁকে আমরা সম্মান জানাই। তাঁর কোনো সফলতা দেখতে পাচ্ছি না, তবুও তাঁকে আমরা সম্মান জানাব। কিন্তু নাবালকের কথায় আপনি চলবেন না।’
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের মানুষ সম্মান করে, তার দেশ প্রেম ও সততার জন্য।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে নতুন একটি কথা শোনা যাচ্ছে, প্রোক্লেমেশন। মনে হচ্ছে, দেশটা এই প্রথম স্বাধীন হলো। এখানে যারা উপস্থিত রয়েছেন তারা ৭১ সালের সেই দিনের কথা মনে করুন। যারা হাসতে হাসতে জীবন দিয়েছেন। জীবনটা একেবারেই তুচ্ছ। এটা প্রত্যেকটা মুক্তিযোদ্ধার মনের কথা। আমরা যুদ্ধ করেছি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। মানবিক, মানবতা ও সাম্য–এ লক্ষ্য ধারণ করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। তার মধ্যে আসছে প্রোক্লেমেশন, জনগণ এটা বোঝেই না।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদের আহমেদ খানের সঞ্চালনায় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ফজলুর রহমান ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।