ঝিনাইদহ পৌরসভার ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি
ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একযোগে বদলি করা হয়েছে। আজ রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে এ ঘটনাটি জানাজানি হয়।
বদলি হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুস্তাক আহমেদ (পাবনার চাটমোহর), নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামাল উদ্দিন (সাথিয়া পাবনা), প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান চান (আটঘরিয়া পাবনা), সহকারী প্রকৌশলী মুন্সি মো. আবু জাফর (গোপালগঞ্জ পৌরসভা), কার্যসহকারী মো. হাবিবুর রহমান (মহেশপুর পৌরসভা), নক্সকার মো. সবুজ মিয়া (আলমডাঙ্গা), সহকারী কর নির্ধারক মো. আব্দুর রহমান (শৈলকুপা) ও সার্ভেয়ার মো. আসাদুজ্জামান (কালীগঞ্জ)।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়েরে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ কবির উদ্দীন ২২ জানুয়ারি এই বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেন। বদলি আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ২৮ জানুয়ারি মধ্যে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। অন্যথায় ২৯ জানুয়ারি বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত করা হবে। অর্থাৎ স্ট্যান্ড রিলিজ করা হবে।
খবর নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসক ও উপপরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগ রথীন্দ্র নাথ রায় (উপসচিব)।
এদিকে আজ সকাল থেকে পৌরসভার কর্মকর্তা শূন্য হয়ে পড়ে। এতে বিভিন্ন দপ্তরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। সেবা প্রত্যাশীরা ভুগান্তিতে পড়ে নাজেহাল হতে থাকেন। পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুস্তাক আহমেদ ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামাল উদ্দিন স্বঘোষিত ছুটিতে চলে যান।
বেলা ৩টার দিকে পাওয়া যায় সহকারী প্রকৌশলী মুন্সি মো. আবু জাফর, কার্যসহকারী মো. হাবিবুর রহমান ও নক্সকার মো. সবুজ মিয়াকে।
সহকারী প্রকৌশলী মুন্সি মো. আবু জাফর দাবি করেন ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। মাত্র এক বছর চাকরি আছে। এ সময় গোপালগঞ্জ পৌর সভায় বদলি করা হয়েছে। এতে পরিবার নিয়ে কষ্ট পেতে হবে।
ফোনে কথা বলেন পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুস্তাক আহমেদ। বদলির খবর নিশ্চিত করে তিনি বলেন তিন দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছি। তবে কী কারণে তাঁকে বদলি করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।
অভিযোগ দেড় যুগের বেশী সময় ধরে একটি শক্তিশালী দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে ঝিনাইদহ পৌরসভা। বছরের পর বছর একই স্থানে চাকরি করার সুবাদে বেপরোয়া উঠেন নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চান ও কার্য সহকারী হাবিব। প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। অনিয়ম দুর্নীতি নাগরিক হয়রানি ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠার পরও কিছুই হয়নি তাঁদের।
একটি সূত্র জানায় বদলির আদেশ স্থগিত করার জন্য তদবির শুরু হয়েছে। উচ্চ আদালতে মামলার প্রস্তুতিও চলছে।
পৌর প্রশাসক রথীন্দ্র নাথ রায় জানান, বদলির আদেশ প্রাপ্তদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করতেই হবে। এটাই নিয়ম। এর কোনো বিকল্প ভাবার সুযোগ নেই। একযোগে এত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলিতে পৌরসভার সেবা কার্যক্রম ব্যহত হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, পদ শূন্য থাকছে না। যাদের বদলি করা হয়েছে তাঁদের স্থলে নতুন জনবল দেওয়া হয়েছে। সুতারাং সেবা ব্যহত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
গত ৫ আগস্ট পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আলটিমেটাম দেওয়া হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় একযোগে আটজনকে বদলির আদেশ দেয়।