অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশত্যাগ, যেমন ছিল আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবর
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/05/yemn-chil-aantrjaatik-middiyyaar-khbr.jpg)
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তিনি আশ্রয় নেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। সে সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এই ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে।
গণবিক্ষোভের সূত্রপাত ও রাজনৈতিক অস্থিরতা
গত বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা চরমে পৌঁছায়। দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্নীতি, স্বৈরশাসনের অভিযোগ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়ার ফলে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ জন্ম নেয়। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া বিক্ষোভ অল্প সময়ের মধ্যেই জাতীয় আন্দোলনে রূপ নেয়। দেশের বিভিন্ন শহরে লক্ষাধিক মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, সরকারের পদত্যাগ দাবিতে।
আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ
দফায় দফায় চলা আন্দোলন সহিংস রূপ নেয় যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। একাধিক প্রাণহানি ও আহতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার ঘোষণা দিলে, রাজনৈতিক দিক থেকে শেখ হাসিনা আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং দেশ ত্যাগ করেন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পরপরই আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে।
নিউইয়র্ক টাইমসে "প্রতিবাদের পর বাংলাদেশের নেতা পদত্যাগ করেছেন এবং দেশ ছেড়েছেন" শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর জনগণ গণভবনে প্রবেশ করে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির সামনে জনতার ক্ষোভ প্রকাশের দৃশ্যও উঠে আসে তাদের প্রতিবেদনে।
বিবিসির শিরোনাম ছিল "বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা গণভবন দখল করেছে।"
আল জাজিরা: "একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন। তার সরকারি আবাস গণভবনে হাজারো মানুষ ঢুকে পড়েছে।"
এএফপি: "শেখ হাসিনা নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, হাজারো মানুষ গণভবনে প্রবেশ করেছে।"
রয়টার্স: "শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন এবং বাংলাদেশও ছেড়ে গেছেন।"
দ্য গার্ডিয়ান: "সেনাপ্রধান নিশ্চিত করেছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং সামরিক বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।"
সিএনএন: "এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান প্রাণঘাতী সংঘর্ষ ও আন্দোলনের পর পদত্যাগ করলেন শেখ হাসিনা।"
ওয়াশিংটন পোস্ট: "বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং দ্রুত একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তুতি চলছে।"
বাংলাদেশ ত্যাগের পরপরই ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া
টাইমস অব ইন্ডিয়া: "শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।"
আনন্দবাজার পত্রিকা: "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে গণভবন ছেড়েছেন। হেলিকপ্টারে করে তাকে ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ে পাঠানো হয়েছে।"
জি নিউজ ইন্ডিয়া: "আওয়ামী সরকারের পতন! বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা।"
হিন্দুস্তান টাইমস: "সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, শেখ হাসিনার বিমান বিকেল ৫টা থেকে ৫টা ১৫ মিনিটের মধ্যে দিল্লিতে পৌঁছে যেতে পারে।"
অন্যদিকে, পাকিস্তানের ডন শিরোনাম করে "বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং দেশের বাইরে চলে গেছেন।"