মব জাস্টিস রুখতে সরকার কেন চুপ, প্রশ্ন সেলিমা রহমানের

দেশে মব জাস্টিস রুখতে অন্তর্বর্তী সরকার কেন চুপচাপ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। শনিবার (৮ মার্চ) নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে তিনি এই প্রশ্ন রাখেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে শোভাযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। বেগুনি রঙে শাড়ি পরিহিতা মহিলা দলের শতাধিক নারী সদস্য এতে অংশ নেন।
সেলিমা রহমান বলেন, ৫ আগস্টের বিপ্লবে আমাদের তরুণ সমাজ তাদের বুকের রক্ত দিয়ে এই যে স্বাধীনতা এনেছে, যেখানে ফ্যাসিস্ট সরকার পদত্যাগ করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, সেইখানে কেন এখনো নারী ধর্ষিত হচ্ছে? বাসে হচ্ছে, পথে-ঘাটে নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছে। মাগুরার কাহিনী দেখেন, একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এখানে মনে হয় কোনো একটা গোষ্ঠী যেটা বলছে, মব জাস্টিস… হোয়াট ইজ মব জাস্টিস? কীসের মব জাস্টিস? মিডিয়াতে জানিয়ে মাইকিং কোন মবজাস্টিন?… কারা এটা করছে। সরকার কেন চুপচাপ? সরকার কেন কথা বলছে না?’
সেলিমা রহমান আরও বলেন, ‘আমরা জানি ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন বিশ্ববিখ্যাত, নন্দিত নেতা। আমরা তার কাছে আশা করেছিলাম এই সময়ে কঠোর হস্তে যারা বিভিন্ন অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে, দেশকে আজকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তাদের ওপর কঠিন হবেন এবং তাদের শাস্তি দেবেন। সরকারকে বলতে চাই, সমাজে যে অস্থিরতা-অস্থিতিশীলতা, সমাজে যে মব জাস্টিস, সমাজে যে নারী ধর্ষণ.. এটা যদি বন্ধ করতে না পারেন তাহলে বাংলাদেশের জনগণ যে স্বপ্ন নিয়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছিল, সেই স্বপ্ন আমাদের পুরণ হবে না।’
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন মহিলা দলের সমাবেশে পুলিশের ঘেরাও পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সেলিমা রহমান বলেন, ‘নারীরা আজকে মুক্ত… অন্তত পুলিশ দিয়ে আমরা এখন ঘেরা নই। যেখানে আমার বোনেরা মিছিল করতে পারত না, কোনো কিছুই করতে পারত না, সেই অবস্থায় থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে সেলিমা রহমান বলেন, ‘তোমরা এখন দল করেছো, আমরা স্বাগত জানাই। আজকাল ছাত্র-জনতা বলে, বৈষম্যবিরোধী বলে, যে কেউ দুই-তিনজন করে বিভিন্ন জেলায় তারা বিভিন্ন অফিস-আদালতে গিয়ে বসে থাকছে, তারা ভাগ চাইছে। এখন তোমাদের উচিত তোমরা তাদের সাথে কথা বলে তাদেরকে শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে নিয়ে আস।’
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আজকে নারীদের ভয়েস, ওম্যান ভয়েস একযোগে উচ্চারিত হতে হবে। নারীদের বলবো, পরিবারের সদস্যদের বলবো, বিশেষ করে গণমাধ্যমের ভাইয়েরা এখানে আছেন তাদেরসহ সকলকে আজ সজাগ হতে হবে। পরিবারের যে মূল্যবোধ ছিল বড়কে সম্মান করা, শিক্ষককে শ্রদ্ধা করা, মা-বাবাকে সম্মান করা এগুলো এখন কোনটাই নেই। সম্মান-শ্রদ্ধার সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে। আমি বলতে চাই বোনদের, আপনাদের সচেতন হতে হবে। আপনার অধিকার কোনটা, কোনটা সমতা, সেটা আপনাকে বুঝতে হবে এবং আপনাদেরকে নিজ পরিবারে কাজ করতে হবে। তাহলেই পরিবর্তন আসবে সমাজে।’
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর একটি শোভাযাত্রা কাকরাইলের নাইটেঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড় হয়ে আবার নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।