নির্বাচনের যৌক্তিক সময়ের কথা শুরুতে বলেছি, এখন বলি না : মির্জা আব্বাস
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে আছে নানা আলোচনা, আছে উৎকণ্ঠাও। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে— চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। বিএনপি শুরু থেকেই বলে আসছে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা। এই যৌক্তিক সময়টা কবে?
এছাড়া চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মাহমুদুল হাসান।
এনটিভি : সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান নিয়ে কি বলবেন?
মির্জা আব্বাস : সংস্কারও চায় বিএনপি। নির্বাচনও চায় বিএনপি। বিএনপি দুটোই চায়।
এনটিভি : সংবিধানের মূলনীতির পরিবর্তন চায় না বিএনপি। কেন?
মির্জা আব্বাস : কোন জিনিসটার পরিবর্তন বিএনপি চায় না কিন্তু সংস্কার কমিশন চায়— এটা নিয়ে আমি কোনো আলোচনা করিনি। এ ব্যাপারে দলের (বিএনপির) যারা নির্ধারিত আছেন তারা কাজ করছেন। সংস্কার কমিশন কি চাচ্ছে এটা আমি জানি, বিএনপি কোনটা কোনটা চায় না এটাও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এটা এখনই বলা যাবে না, এটা আমাদের সিক্রেট।
এনটিভি : ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আপনারা বলছিলেন যৌক্তিক সময়ের মধ্যে বিএনপি জাতীয় নির্বাচন চায়। সরকারের মেয়াদ সাত মাস হয়ে গেল, কতটা সময় গেলে যৌক্তিক সময় হবে?
মির্জা আব্বাস : যৌক্তিক সময় কথাটা আমরা বলছি একদম শুরু থেকেই (ফ্রম দ্য ভেরি বিগেনিং), এখন কিন্তু বলি না। এখন বলছি জুন-জুলাই অথবা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই। জুন-জুলাই অথবা ডিসেম্বর।
এনটিভি : নির্বাচনের জন্য দলগত ও সাংগঠনিকভাবে বিএনপি কতটা প্রস্তুত?
মির্জা আব্বাস : গত ১৭ বছর ভোটাধিকার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপি আন্দোলন করে আসছে। এই ১৭ বছরে নির্বাচনের জন্য বিএনপি নিজেই নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছে।
এনটিভি : দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কোনো প্রক্রিয়া শুরু করেছেন কি?
মির্জা আব্বাস : সেটা তো একটা প্রক্রিয়া আছে। নির্বাচনের তফসিল হলে দলীয় মনোনয়ন বোর্ড হবে। ফরম কিনবে, জমা দেবে, বাছাই হবে। এটা তো একটা প্রক্রিয়া…।
এনটিভি : নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণে ৩১ দফা দিয়েছেন। নির্বাচনের আগে দলীয় ইশতেহার ঘোষণা হবে। তাতে নতুন কোনো চমক থাকবে কি?
মির্জা আব্বাস : এখনও সময় আসেনি। আমাদের ২০৩০ ভিশন ছিল। এরপর ৩১ দফা এলো। এখনও কাজ হচ্ছে, নির্বাচনের সময় যদি কোনো কিছু ইশতেহারে প্রয়োজন পড়ে তা আমরা দেখব।
এনটিভি : ৩১ দফার আলোকেই কি নির্বাচনী ইশতেহার হবে?
মির্জা আব্বাস : এটা বলা মুশকিল। নির্বাচন আসুক, নির্বাচন আসলে তখন ইশতেহারের প্রশ্ন আসবে। সময় আসুক, তখন দেখায় যাবে।
এনটিভি : অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস অথবা এই সময়ে সরকারের অর্জন কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মির্জা আব্বাস : সাত মাস নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট সময়। কেউ যদি বলে আরও সময় দরকার, সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য আরও সময় দরকার— তখন আমরা বলব, নির্বাচন পেছানোর জন্য একটা ছলছাতুরি করা হচ্ছে।
এনটিভি : ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছেন। যদি এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হয় তাহলে আপনারা আন্দোলন বা কোনো কর্মসূচিতে যাবেন কিনা?
মির্জা আব্বাস : নির্বাচন সরকার যদি তার কথা মতো যথাসময়ে না দেয়…। আমরা তো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ১৭ বছর আন্দোলন করতেছি। এত জেল-জুলুম খেটেছি। আমাদের নেত্রী (বেগম খালেদা জিয়া) জেলে গেছেন। আমরা জেলে গেছি। আমরা আমাদের প্রক্রিয়ায় যাবো, যে প্রক্রিয়ায় আমরা চলছিলাম। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেই পথেই যাবো…।
এনটিভি : ৫ আগস্টের পর বিএনপির নাম করে বেশকিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এসব নিয়ে আপনাদের দলের কঠোর পদক্ষেপও আছে। তৃণমূলে শৃঙ্খলা ফেরাতে আরও বড় পরিসরে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কিনা?
মির্জা আব্বাস : নিয়ন্ত্রণের জন্য যেটুকু পদক্ষেপ নেওয়ার তা নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩২শ নেতাকর্মী দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখনও বিএনপির কথা বলা হচ্ছে। চাঁদাবাজ বলে দিলেই হলো? কথা বলা খুব সহজ, বলে দিলেই হলো? খুব গভীর কথা, খুবই ভয়াবহ কথা। চাঁদাবাজি সবাই করছে, নাম আসছে বিএনপির। প্রথম দিকে কিছু কিছু হয়েছে, যারা করেছে তাদের বিএনপি বহিষ্কার করেছে। এখন তো বিএনপি সরকারে নাই, বিএনপি কি সরকারে আছে? চাঁদাবাজকে সরকার ধরে না কেন? আমার কথা হলো, চাঁদাবাজ যেখানে আছে সরকার ধরে ফেলুক। কেন তাদের ধরা হচ্ছে না— সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন।
এনটিভি : ফিলিস্তিনের গাজায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে ‘মব’ হলো, একটা নিয়ে কি বলবেন?
মির্জা আব্বাস : ‘মব’ কারা ক্রিয়েট করলো? সরকার তাদের ধরলো না কেন? আমরা তো বলেছি— মব জাস্টিস, মব ক্রিয়েট করে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃস্টি করা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। আমি মনে করি, যা হতে পারতো— ইহুদি ইসরায়েলি মালিকানাভুক্ত যেসব পণ্য আছে, যেমন ভারতের পণ্য আমরা সফলভাবে বর্জন করেছি, তাদেরটাও বর্জন করা যেত।
এনটিভি : বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
মির্জা আব্বাস : এটা বিশাল ব্যাপার। অল্প কথায় এর মূল্যায়ন করা যাবে না। বিনিয়োগ সম্মেলনটা ঢাকায় হচ্ছে এবং এটা ফলপ্রসু হবে, দেশের জন্য ভালো কিছু সুযোগ আছে।
এনটিভি : চলমান প্রেক্ষাপ্রটে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
মির্জা আব্বাস : সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সমস্ত অপকর্ম এড়িযে চলুন। অপরাধী যারা আছে তাদের পুলিশে সোপর্দ করুন।