দখল-দূষণের কবলে ঢোলভাঙ্গা নদী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মেঘনা শাখা নদীর তিতাস অববাহিকায় ঐতিহ্যবাহী ঢোলভাঙ্গা নদী। অবৈধ দখল-দূষণের কারণে নদীটি আজ হুমকির মুখে। একটা সময় এ নদীটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে। এ এলাকার কৃষি, শিল্প বা পরিবহণের জন্য নদীটি ছিল একমাত্র মাধ্যম। বর্তমানে ঢোলভাঙ্গা নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে কেবল দূষণ, অবৈধ দখল ও ড্রেজিংয়ের অভাবে। এর ফলে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় এক সময়ের খরস্রোতা এ নদীটি।
নদীটি অনেকটা বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। এ নদীর বেশিরভাগ স্থানে শুষ্ক মৌসুমে নৌযান চলাচলের মতো পানি থাকে না। কোথাও কোথাও একেবারে শুকিয়ে যায়। যার ফলে নৌপথ বন্ধ থাকায়, ব্যবসায়ীদের মালামাল বেশি ভাড়া দিয়ে সড়ক পথে আনতে হচ্ছে। উপজেলার পৌর এলাকার প্রধান বাজারের সব বর্জ্য এ নদীতে নিয়মিত ফেলায় দূষণের গন্ধে নাকে রুমাল চেপে মানুষদের এ রাস্তা অতিক্রম করতে হয়।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, আশপাশের বাসিন্দাদের ময়লা-আবর্জনা ফেলার কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই। এতে সবাই নদীতে বর্জ্য ফেলছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে ঢোলভাঙ্গা নদীর অবস্থা দিনে দিনে অনেকটাই নোংরা হয়ে গেছে। এ নদীতে যেন ময়লা-আবর্জনা আর ফেলতে না হয়, সেজন্য পৌরসভার কাছে বিকল্প ব্যবস্থার দাবি জানান তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘আগে বাজারের ব্যবসায়ীরা নৌপথে পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে চাল, ডাল, আটা-ময়দা, তেলসহ অনেক কিছু আনত। নদীপথ বন্ধ হওয়াতে সাধারণ মানুষের বাড়তি খরচ হয়। যদি এখনই উদ্যোগ না নেওয়া হয়, একদিন আমাদের ঢোলভাঙ্গা নদীর জন্য কাঁদতে হবে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বাঞ্ছারামপুর পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে ঢোলভাঙ্গা নদীতে। এ অবস্থায় নদী যেমন ভরাট হয়ে যাচ্ছে তেমনি বাড়ছে দূষণ। ছড়িয়ে পড়ছে রোগ-ব্যাধি। দূষণে নদীর পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। বাজারের খোলা জায়গায় জবাই করা গরু-ছাগল ও মুরগির রক্ত, বিষ্ঠা, পচা মাছ এবং তরকারি আবর্জনা এ নদীতে ফেলা হয়। যার ফলে ঢোলভাঙ্গা নদীটি দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস আরা বলেন, ‘ঢোলভাঙ্গা নদীর ড্রেজিংয়ের বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খননের তালিকায় এটির নাম অন্তর্ভুক্ত আছে। ইতোমধ্যে খননের সুপারিশ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’ এ ছাড়া দখল ও দূষণ প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।