ঈদ ও বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে ব্যস্ত কোটালীপাড়ার মৃৎশিল্পীরা

মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। অপরদিকে বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। এই দুই উৎসবকে সামনে রেখে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার মৃৎশিল্পীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের হিরণ গ্রামের ৪৫টি পাল পরিবারের সদস্যরা পূজা, ঈদ, পহেলা বৈশাখ ও চৈত্র সংক্রান্তির মেলাসহ বিভিন্ন উৎসবে প্রতিমা ও মাটির তৈজসপত্র তৈরি করে থাকেন।
সরেজমিনে বুধবার (১৯ মার্চ) সকালে হিরণ গ্রামের পালপাড়ায় গিয়ে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল বয়সের নারী-পুরুষকে মাটির বিভিন্ন খেলনা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। কেউ কাঁদামাটি ছেনে তৈরি করছেন পুতুল, কেউ ব্যস্ত খেলনা তৈরিতে। অনেককে দেখা যায় এসব রোদে শুকাতে। কেউবা রং তুলির আঁচড়ে নান্দনিকভাবে এসব মাটির সামগ্রীকে রাঙিয়ে তুলছেন।
বর্তমানে বিভিন্ন খেলনা তৈরির রং ও মাটির দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে আগের তুলনায় মাটির তৈরী এসব সামগ্রী বিক্রিতে লাভ হচ্ছে না বলে জানান বলাই পাল। তিনি আরো বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা এই কাজ করে আসছি। পূজার সময় আমরা প্রতিমা তৈরি করি। বছরের অন্যান্য উৎসবের সময় মাটির হাতি, ঘোড়া, বাঘ, হরিণ, ময়ূর, কাঁঠাল, আম, পেঁপে, আপেল, হাঁড়ি, পাতিল ও মাটির ব্যাংকসহ বিভিন্ন খেলনা তৈরি ও বিক্রি করি।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী বিশ্বজিত পাল বলেন, ঈদ ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে বর্তমানে আমাদের কাজের খুব চাপ। যে কারণে লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে আমিও কাজে হাত লাগাই বাবা-মায়ের সাথে।
সমাপ্তি পাল বলেন, আমি হিরণ পঞ্চপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ি। রমজান মাস উপলক্ষে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে বাড়িতে মাটির জিনিসপত্র তৈরির কাজের চাপও বেশি। তাই আমি মাটির সামগ্রীগুলো রংয়ের কাজ করছি।
সত্তরোর্ধ্ব দেবী রাণী পাল বলেন, এখন সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। আগের মতো মাটির তৈরী জিনিসের চাহিদাও নেই। তাই সরকারিভাবে আমাদেরকে যদি একটু সহযোগিতা করা হতো তাহলে আমরা এই শিল্পটাকে ধরে রাখতে পারতাম।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাকিবুল ইসলাম শুভ বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প ছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মৃৎশিল্পীদের সহযোগিতা করার সুযোগ ছিল। বর্তমানে এই প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। পরবর্তীতে প্রকল্পটি চালু হলে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।