রাজধানী ফাঁকা, যাত্রী সংকটে ঘোরে না বাসের চাকা

ঈদুল ফিতরের ছুটিতে রাজধানীর সড়কগুলো অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে। নেই চিরচেনা যানজট ও কোলাহল। রাজধানীর অভ্যন্তরীণ বাসগুলো যাত্রী সংকটে ধুঁকছে। যাত্রীর আশায় বাসচালকদের এক স্টেশনে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। যদিও কয়েকজন যাত্রী মিলে, তাতে বাসের চালানোর খরচ উঠে আসবে কিনা, এ নিয়ে সংশয়ে পরিবহণ মালিক-চালক ও শ্রমিকরা।
আজ রোববার (৩০ মার্চ) রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসক, সংবাদকর্মী ও কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ীসহ কিছু মানুষের সমাগম রয়েছে।
সাইনবোর্ড থেকে গুলিস্তানগামী রজনীগন্ধা বাসে উঠেন শাহীন মিয়া। তিনি বলেন, ‘সিট খালি থাকায় গাড়ি স্টেশন থেকে প্রথমে ছাড়তে চায়নি। পরের স্টেশন তামিরুল মিল্লাত মহিলা মাদ্রাসা, মাতুয়াইল মেডিকেল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া প্রতি স্টেশনে পাঁচ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। এতে করে বাসে ওঠা যাত্রীরা বিরক্ত বকাঝকা শুরু করেন। মামা গাড়ি চালাও, গাড়ি চালাও বলে চাপ দেন যাত্রীরা। কিন্তু চালকের উত্তর, তেল আর টোল ভাড়া না উঠলে গাড়ি চালায় কী করমু! সবাই আবার চুপ হয়ে যায়। এভাবে ফাঁকা রাস্তা ২০ মিনিটের পথে এক থেকে সোয়া এক ঘণ্টায় এসে গুলিস্তান পৌঁছায়। ফাঁকা রাজধানীতে যাত্রী সংকটে এখন গাড়ি চলে আরও ধীরগতিতে।’
গুলিস্তানে দাঁড়ানো মিরপুরগামী শেকড় পরিবহণের একটি বাসে দেখা যায়, তিন-চারজন যাত্রী অনেকক্ষণ বসে আছেন। যাত্রীরাও বিরক্ত প্রকাশ করছেন। আবার চালক যাত্রী না থাকায় বাস একটুও সামনে নেননি। এ বিষয়ে বাসচালক সাইফুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভাই পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটিতে না গিয়ে বাস চালাই, কিছু টাকা পাওয়ার আশায়। কিন্তু যাত্রী না থাকলে তেল খরচ উঠামু কীভাবে?’
অন্যদিকে বাসে থাকা যাত্রী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘মিরপুর-১০ নম্বর যাব। এজন্য গুলিস্তান থেকে শিকড়ে উঠলাম। ৩০ মিনিট হয়ে গেছে বাস চালায় না। একবার সামনে আগায় আবার পিছায়। এতদিন যানজটে বাস চলেনি, এখন যাত্রী কম থাকায় বাস চলে না।’
রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে দেখা যায়, গাড়ির কোনো চাপ নেই। অলিগলিতেও গাড়ির আধিক্য নেই। তবে গুলিস্তান, নিউমার্কেটসহ ফুটপাতে কেনাকাটার কিছু চাপ রয়েছে।
ঈদের আগে গতকালই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ছিল শেষ কর্মদিবস। বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টস কারখানা এদিন ছুটি হয়। বিকেলের পর থেকেই সড়কে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বাড়ে। ফলে সকাল থেকেই অনেকে ঢাকা ছেড়েছেন। কেউ বা দুপুরে অফিস সেরেই পথে নামবেন। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে আরও আগে। সরকারি হিসেবে শেষ কর্মদিবস ছিল গত বৃহস্পতিবার। ফলে শুক্রবারও অনেকটাই ফাঁকা ছিল ঢাকা।
এর আগে গত বুধবার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ছিল সরকারি ছুটি। ফলে অনেকের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে ২৫ মার্চ থেকেই। এর প্রভাবে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে পরিবহণের আধিক্য নেই এবং বিপণি বিতানগুলোতে কমেছে ক্রেতার চাপ। এবার ঈদের ছুটি বেশি হওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরতে পারছেন সাধারণ মানুষ। ট্রেন, বাস ও লঞ্চে যাত্রীর চাপ কম। মহাসড়কগুলোতে এখনও গাড়ির দীর্ঘ যানজটের তথ্য পাওয়া যায়নি। খুব অল্প সময়েই এবার মানুষ বাড়ি ফিরতে পারছেন।
গত ২৮ মার্চ (শুক্রবার) ও ২৯ মার্চ (শনিবার) সাপ্তাহিক দুই দিনের ছুটি শেষে আজ রোববার (৩০ মার্চ) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। ঈদের ছুটি শেষে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত খুলবে আগামী ৬ এপ্রিল (রোববার)।