আওয়ামী রাজনীতির মৃত্যু ঢাকায়, দাফন হয়েছে দিল্লিতে : সালাহউদ্দিন আহমেদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ছাত্র-জনতা-শ্রমিক-সংস্কৃতিজীবী সব জনগোষ্ঠির অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে পৃথিবীর কাছে স্মরণীয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়েছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অপরাজনীতির বিলুপ্ত হয়েছে। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার দাফন হয়েছে দিল্লিতে। আওয়ামী রাজনীতির মৃত্যু ঢাকায়, দাফন হয়েছে দিল্লিতে।’
গতকাল সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর রমনা পার্কের শতায়ু প্রাঙ্গণে (রানী মঞ্চ) জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা কি ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুক্ত হয়েছি?’ এ সময়ে উপস্থিত নেতাকর্মীরা জোরালো কণ্ঠে জবাব দেন ‘না’।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আসা হাজার দর্শক শ্রোতাদের ‘বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা, পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা’ জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের এই বৈশাখী শোভাযাত্রা, আনন্দ শোভাযাত্রা, পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা আমাদের এই সংস্কৃতির ঐহিত্যের অংশ, সেটা আমাদের জাগতিক শোভাযাত্রা, আমাদের সংস্কৃতির অংশ। বাংলার বৈশাখী মেলা, বাংলার তালপাতার পাখা এবং বাঁশি এটি আমাদের সংস্কৃতি।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা পান্তা ভাত খেয়েছি, আমরা ইলিশ মাছ খেয়েছি, আমাদের সংস্কৃতির মতো করে আমরা উদযাপন করেছি, এটিকে কেউ যেন না নিয়ে যায়। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নাই। আমরা এ দেশের এই ভূখণ্ডের সংস্কৃতিকে হাজার বছর থেকে লালিত সংস্কৃতিকে লালন করব, পালন করব… এগিয়ে নিয়ে যাব।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘এর মধ্যে দিয়ে যে সমস্ত অপসংস্কৃতি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিকৃত করার জন্য অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিল, সেই অপসংস্কৃতিকে ঝেটিয়ে বিদায় করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা এভাবে আমাদের এই দেশে সমস্ত ঐতিহ্যকে ধারণ করব, লালন করব। ভিনদেশি অপসংস্কৃতিগুলোকে আপনারা বর্জন করবেন, এটা আমাদের আহ্বান থাকবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সারা দেশে আজ একদম আড়ম্বরপূর্ণভাবে উপজেলা পর্যায় থেকে জেলা পর্যায়, মহানগর ও কেন্দ্র পর্যন্ত পহেলা বৈশাখ আমাদের ঐহিত্যকে ধারণ করে যেভাবে আমরা পালন করছি, তার মধ্য দিয়ে একটি ম্যাসেজ জাতির কাছে আমরা দিতে চেয়েছি, সেটা হলো—এই বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভৌগোলিক-প্রাকৃতিক-অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে যেই বাংলা সনের প্রচলন হয়েছিল, সেই বাংলা সন হিজরি সনের সঙ্গে মিল রেখে সম্রাট আকবরের সময়ে মুসলিম ঐতিহ্যে যেটা প্রচলন করা হয়েছিল।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি বলতে চাই না এটা একেবারে শুধু মুসলমানদের জন্য অনুসরণীয় কোনো সংস্কৃতি। আমরা যারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি, আমরা সবাই বাংলাদেশের ভেতরে এই ভৌগোলিক সীমারেখায় যারা বাংলাদেশি, সবাই আমরা সর্ববো ধর্মাবলম্বী, সব রকমের শ্রেণি-গোত্র-পেশা-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই বাংলাদেশের সিটিজেন হিসেবে এই সংস্কৃতিকেই আমরা সার্বজনীনভাবে পালন করব, অতীতে যা আমরা পালন করতাম। আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।’
বিএনপিনেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা, মঙ্গলঘট, মঙ্গল সেইসব সংস্কৃতি একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় গোষ্ঠীর সংস্কৃতি হতে পারে। আমরা তাদের সেই সংস্কৃতি পালনে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা নিশ্চিত করব। এই ভূখণ্ডের, এই বাংলাদেশের হাজার বছরের লালিত যে সংস্কৃতি, পালিত যে সংস্কৃতি, সেই সংস্কৃতি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি। যে স্বতন্ত্র সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের যে সংস্কৃতি, তাকে বিকৃতি ও বিস্মৃত করতেই মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রচলন করেছিল ১৯৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগ। যারা মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে অতি পৌরাণিক, পৌত্তলিক, জাগতিক বর্হিভূত অতি জাগতিক সংস্কৃতি চর্চা শুরু করতে চেয়েছিলেন, সেটা জাতি গ্রহণ করেনি।’
পরে জাসাস শিল্পীরা দেশাত্মবোধক, পল্লীগীতিসহ বিভিন্ন গান পরিবেশন করেন। জাসাস নেতা ইথুন বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকেন, সহসভাপতি লিয়াকত আলী, জাসাসের সাবেক সভাপতি রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরীসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।