কে হচ্ছেন রুয়েটের পরবর্তী উপাচার্য
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) বর্তমান উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের চার বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামী ২৮ মে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি) নতুন উপাচার্যকে পরবর্তী চার বছরের জন্য দায়িত্ব দেবেন। এ দায়িত্ব পেতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক। আচার্য দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেবেন নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণার মান ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেবেন—তা নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে নানা গুঞ্জন। উপাচার্য হওয়ার জন্য এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সরকারের উচ্চপর্যায়ে দেনদরবার শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
রুয়েট সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৮ মে যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহা. রফিকুল আলম বেগকে রুয়েটের ষষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। চলতি মাসের ২৮ মে তাঁর দায়িত্ব শেষ হবে।
শিক্ষা ও গবেষণা, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা ও যোগ্যতা বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন রুয়েটের একাধিক সিনিয়র শিক্ষক। রুয়েটের দুজন সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, উপাচার্য পদটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ সরাসরি জড়িত। রুয়েটের প্রশাসনিক, একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের স্বার্থে এখানকার যোগ্য কোনো শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয় আরো গতিশীল হবে। বাইরের কাউকে উপাচার্য করলে শিক্ষকদের মধ্যে বোঝাপড়ায় সমস্যা ও মনোমালিন্য হতে পারে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে জটিলতা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
রুয়েটের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, উপাচার্য পদে দলীয় পরিচয়কে মুখ্য বিবেচনায় না নিয়ে কোনো সৎ, নীতিবান, মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিকেই যেন নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে আওয়ামীপন্থীদের অধিকাংশই বলছেন, দলীয় শিক্ষকদের মধ্য থেকেই যোগ্য ও প্রশাসনিক দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিকেই দায়িত্ব দেওয়া হোক।
জানা গেছে, এরই মধ্যে বিভিন্ন বিভাগের পাঁচজন অধ্যাপক উপাচার্য পদে দায়িত্ব পেতে বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন। এই শিক্ষকরা এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বর্তমানে বিভিন্ন পদে দায়িত্বে রয়েছেন। সাবেক একজন উপাচার্যও নতুন করে আবার সেই পদটি নিতে চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও জানা যায়।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মোহা. রফিকুল আলম বেগ দ্বিতীয়বারের মতো উপাচার্য পদে বহাল থাকতে পারেন। পুনরায় নিয়োগ পেতে বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লবিং শুরু করেছেন। তিনি শিক্ষা-গবেষণাসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সফলতা দেখিয়েছেন।
তবে উপাচার্য হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে গৃহীত সিদ্ধান্তে তাঁর নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে শিক্ষকদের কাছে। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতারও অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্যের পর ওই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম উঠে আসছে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মর্ত্তুজা আলীর নাম। তিনি এর আগে রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে প্রভাবশালী বলেও জানা গেছে। প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়োগ পেতে যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন ও গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমুর রহমান জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
রুয়েটের প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কমিটির ডিরেক্টর ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আলিমের নামও বেশ তোড়জোড়ভাবে শোনা যাচ্ছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য।
ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির (আইআইসিটি) পরিচালক ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদ উজ জামান উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেতে বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি রুয়েটের সিন্ডিকেট সদস্য।
রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এন এইচ এম কামরুজ্জামান সরকারও উপাচার্য পদের জন্য বেশ দৌড়ঝাঁপ করছেন। তিনি বর্তমানে শিক্ষক সমিতির সহসভাপতির দায়িত্বে আছেন।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম শেখ এবং পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. তারিফ উদ্দীন আহমেদও পরবর্তী উপাচার্যের দায়িত্ব পেতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।