দুই বছরেও আসেনি লিপু হত্যার অভিযোগপত্র
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/10/21/photo-1540095822.jpg)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে দুই বছরেও মামলার অভিযোগপত্র দিতে পারেননি তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। মামলাটি দুই তদন্ত কর্মকর্তার হাতবদল হয়ে তৃতীয় তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এলেও কবে নাগাদ এ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হতে পারে, সে বিষয়েও কিছু জানাতে পারেননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লিপুর পরিবার ও সহপাঠীরা।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত দুবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। ঘটনার পর ওই বছরেই নগরীর মতিহার থানার তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসানকে প্রথমে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়। এরপর ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি মামলাটি সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হলে তদন্তভার পান সিআইডির আরেক পরিদর্শক আজিজুর রহমান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমি মামলাটির তদন্তভার পেয়েছি। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের আমরা চেষ্টা করছি। এর আগেও তদন্ত হয়েছে। আবার নতুন করে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আশা করছি, খুব দ্রুত আসামি চিহ্নিত করে সবকিছু জানতে পারব।’
২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হলের ড্রেন থেকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় লিপুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন বিকেলেই লিপুর চাচা মো. বশীর বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর লিপুর রুমমেট মনিরুলকে আটক করে তিন দিন পর হত্যা মামলায় মনিরুলকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।
এদিকে, দুই বছরেও মামলার অভিযোগপত্র না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লিপুর সহপাঠী ও তাঁর পরিবার। আদৌ এ ঘটনার বিচার পাবেন কি না, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তাঁরা। সন্তানের অকালমৃত্যুর শোক এখনো ভুলতে পারেননি লিপুর বাবা বদর উদ্দিন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বদর উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘লিপুকে মাটি দিয়ার কয়দিন পর পুলিশ আইছিল তদন্ত করতি। মাজেমধ্যি একজন কইরি ফোন দেয় আর কয় আমি তদন্ত করতিছি। একজন বইলিছিল যোগাযোগ করতি। পরে তাক ফোন দিল্যাম, সে আর আমাক চেনেই না। তিন দিন আগেও একজন ফোন দিয়্যা কইল আমি মামলার তদন্ত করতিছি।’
বদর উদ্দিন বলেন, ‘এখনো কেউই ধড়া পইড়ল না। থানায় ফোন দিলি কয় মামলা গোয়েন্দার কাছে। আমি অত কিছু বুজিও না। তোমরা আমাগের (আমাদের) আর আমার লিপুর জন্যি দুয়া কইর।’
মামলায় অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে লিপুর সহপাঠীরা বলেন, ‘লিপুর স্বপ্নকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে নির্মমভাবে। আবাসিক হলের ভেতরে তাঁকে খুন হতে হয়েছে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন এখনো চুপ। এখনো হত্যার কোনো ক্লু, মোটিভ কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। আমরা জানতে চাইলে তারা আমাদের বারবার আশ্বস্ত করে। এভাবেই দুই বছর কেটে গেছে। এ দুই বছরে মামলার দুজন তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হয়ে তৃতীয়জনের হাতে এসে পড়েছে, কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’
মামলার অগ্রগতির বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবিশ্বাস্য রকমের অবহেলা করছে দাবি করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘লিপুকে যে হত্যা করা হয়েছে, তা সবার কাছেই স্পষ্ট। হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের চিহ্নিত করা খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সংস্কৃতি চালু হয়েছে, এখানে মার্ডার হলে বিচার হয় না, যার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। আমরা এ সংস্কৃতি থেকে বের হতে চাই। আমরা শিক্ষার্থী হত্যার বিচার চাই।’
এদিকে, লিপু হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের বিচারের দাবিতে গতকাল শনিবার দুপুরে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।