ভাঙা হৃদয় জোড়া লাগবে তিন সপ্তাহে
হ্যাঁ, মাত্র তিন সপ্তাহ, গুনে গুনে ২১ দিন। এর মধ্যে ভাঙা হৃদয় জোড়া লাগবে। আজগুবি কথা নয়, বিজ্ঞাপনের কথাও নয়। ভগ্ন হৃদয় জোড়া লাগাবার জন্য মনোবিজ্ঞানী ডা. হরিশ শেট্টি জানিয়েছেন বেশ কিছু উপায়। ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণে ছাপা হয়েছে তাঁর একটি লেখা।
ভাঙা হৃদয়ের মানুষদের নিয়ে প্রায়ই ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেন ডা. হরিশ। তিনি সেখানে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং এসব পরামর্শ কাজে লাগিয়ে অনেকেই নিজেদের বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠেছেন।
প্রথম সপ্তাহ
চিৎকার করুন
সম্পর্ক ভেঙে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করুন। নিজের অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করুন। হাসুন, কাঁদুন, ঘুরতে যান, থিয়েটারে গিয়ে নাটক-সিনেমা দেখুন। হাতে জমে থাকা কাজগুলো শেষ করুন। নিজেকে সময় দিন। নতুন রেস্টুরেন্টে গিয়ে নতুন খাবার চেখে দেখুন। স্মৃতিগুলো একদম ঝেড়ে ফেলুন। চিৎকার করুন, হাইওয়েতে গাড়ি চালান, জীবনকে অন্য দৃষ্টি দিয়ে দেখুন।
ঝামেলা ঝেড়ে ফেলুন
যার সাথে ব্রেক আপ করলেন বা ডিভোর্স দিলেন, তাকে চট করে ভুলে যেতে পারবেন না। তার কথা আপনার মনে পড়বেই। এক্ষেত্রে সময়ই সবচেয়ে বড় ওষুধ। সময় নিন, নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ুন। তাকে বাদ দিয়ে নিজের জীবনের সঙ্গে নতুন করে মানিয়ে নিন। আস্তে আস্তে দেখবেন তার কথা আর মনে পড়ছে না। লং ড্রাইভে চলে যান, নিজের পছন্দের গানটা বারবার শুনুন, জোকসের বই পড়ুন। ঝামেলাগুলো দ্রুত ঝেড়ে ফেলুন। প্রত্যেকটা দিন নিজের মতো করে উপভোগ করতে শুরু করুন।
দ্বিতীয় সপ্তাহ
যা ভালো লাগে করুন
ভালোবাসার বাঁধনে আমরা অনেক সময় এতটাই জড়িয়ে পড়ি যে নিজেকে সময় দেওয়ার কথা ভুলেই যাই। ব্রেক আপের পর সে সুযোগটাকে কাজে লাগান। নিজেকে সময় দিন। যা যা করতে ভালো লাগে, তাই করুন। লোকে কি বলবে সেটা না ভাবলেও চলবে। ডা. শেট্টি বলছেন, ‘এতে আপনার মনোযোগ অন্যদিকে প্রবাহিত হবে এবং আপনার স্মৃতিতে অনেক সুখের ঘটনা যুক্ত হবে।’ যেমন আপনার যদি আঁকাআঁকির ঝোঁক থাকে তাহলে ক্যানভাস নিয়ে বসে পড়তে পারেন, ট্রেকিংয়ের ঝোঁক থাকলে ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন।
সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস
এটা কিন্তু খুবই দামি কথা। ভালো থাকতে চাইলে ভালো মানুষের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। প্রথম সপ্তাহটা আপনাকে নিজের মতো করে কাটানোর জন্য সময় দেওয়া হলো। কিন্তু দ্বিতীয় সপ্তাহে আপনাকে একটু বাইরে বেরোতে হবে, বন্ধু বান্ধবদের সময় দিতে হবে। পার্টিতে যেতে হবে। সবার সাথে মিশলে দেখবেন মন ভালো থাকবে, আর অতীত নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করবে না।
তৃতীয় সপ্তাহ
খুত খুঁজুন
দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এবার ভাবুন সম্পর্কটা কেন ভাঙল? কার দোষ? আপনি কোন ধরনের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? নিজে ভেবে কূল-কিনারা করতে না পারলে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করুন। কারণ জীবন তো থেমে থাকবে না, আপনাকে সামনে এগোতে হবে। আবারও নতুন কারো সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হবে, তখন যেন পুরনো সমস্যাসগুলোই আবার ঝামেলা না পাকায় সেজন্য এই সতর্কতা। প্রয়োজন হলে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে লিখে রাখুন। ধীরে ধীরে মানিয়ে নিন নতুন কারো সঙ্গে।
নিজের উপর ভরসা রাখুন
ডা. শেট্টি ২১ বছর বয়সী এক মেয়ের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, মেয়েটির বয়ফ্রেন্ড তারই এক বান্ধবীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে মেয়েটি কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। কলেজে গেলেই বয়ফ্রেন্ড আর নিজের বান্ধবীর সঙ্গে দেখা হবে। তাদের এড়িয়ে চলতেই মেয়েটি এ কাজ করে। সেই মেয়েটিকে থেরাপি দেওয়ার সময় ডা. শেট্টি তাঁর ছোটবেলার গল্প শুনতে চান। এ সময় মেয়েটি জানায়, ছোটবেলা থেকেই তার দাদি বলতো মেয়েটির গায়ের রং কালো। সেই থেকে তার মনে সেটা গেঁথে রয়েছে। আর সেখান থেকেই তার ধারণা হয়েছে, সে কালো বলেই তার বয়ফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে চলে গেছে। ডা. শেট্টি তার সঙ্গে কথা বলে প্রথমে তার এই ভুল ধারণা ভেঙে দেন এবং এরপর কলেজে যাওয়ার জন্য বলেন। বয়ফ্রেন্ড এবং নিজের বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে কীভাবে নিজেকে সামলে নিতে হবে সেটাও বুঝিয়ে দেন। এরপরই মেয়েটি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং আবার কলেজে যাওয়া শুরু করে।