ডিভোর্সের জন্য সামাজিক যোগাযোগ কি দায়ী?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বেশি ব্যবহারের কারণে নাটকীয়ভাবে ডিভোর্সের হার বাড়ছে। চীনের সিভিল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের বরাতে এই তথ্য প্রকাশ করেছে চায়না ডেইলি। চীনের বেইজিং সুযানগ্লি ল’ ফার্ম-এর লুই লিন বলেন, যেসব দম্পতি বেশি সময় ধরে অন্যের সঙ্গে চ্যাটিং করে তারা নিজেদের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। এখনকার ডিভোর্সের ১০টির মধ্যে নয়টি ডিভোর্স কেসের অন্যতম কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বেশি ব্যবহার।
চীনের সিভিল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত একটি তথ্যে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডিভোর্সের সংখ্যা যথাক্রমে ২.৬৮ মিলিয়ন থেকে ৩.৬৪ মিলিয়ন। গত ১০ বছরের তুলনায় যা অনেক বেশি।
লিন বলেন, ‘প্রযুক্তির কারণে বিয়ে ভেঙে যায় এ কথা মানা কষ্টকর। তবে ২০১১ সালের কিউকিউ (একটি বার্তা টুল) দ্বারা আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি মামলা পরিচালনা করার পর আমি দেখলাম এ রকম ঘটনা আরো রয়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্রুত বৃদ্ধি, বিশেষ করে উইচ্যাট দ্রুত ম্যাসেজিং পদ্ধতি যোগাযোগ সহজ করে দিলেও এটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট করছে, স্বামী-স্ত্রীর সরাসরি যোগাযোগকে ব্যাহত করছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকটা সময় ব্যয় করলেও নিজেদের সময় দেওয়া বা ভালো সময় কাটানো- এসব কাজ করছে না। এসব কারণ বিয়েকে দীর্ঘস্থায়ী করতে বাধা তৈরি করছে।
লুই বলেন, যদি একজন হাউজওয়াইফ দিনরাত উইচ্যাট ব্যবহার করেন, তাহলে তাঁর দাম্পত্য জীবনে বিভিন্ন অসঙ্গতি তৈরি হবে, এ কারণে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ডিভোর্স বাড়ানোর একটি বড় কারণ। তবে আরো কিছু কারণ রয়েছে। চায়নায় অনেক ‘ভুয়া বিচ্ছেদ’ হচ্ছে। হয়তো সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিষেধ মানার জন্য বা নতুন শহরে স্কুলে বাচ্চাকে ভর্তির জন্য দম্পতিরা ডিভোর্স নিচ্ছেন- এসবের কারণে ডিভোর্সের হার বাড়ছে।
লিউ জানালেন এমনই এক ভুয়া বিচ্ছেদ বা ফেক ডিভোর্সের কথা- এক দম্পতির বেইজিং শহরে কোনো বাড়ি ছিল না। কিন্তু ছেলেকে বেইজিংয়ের একটি স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। কাজেই সেই মা বেইজিংয়ে বাড়ির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে এমন একজন পুরুষকে বিয়ে করেন। ছেলেকে স্কুলে ভর্তির পর নারীটি ওই লোকের সঙ্গে ডিভোর্স নিয়ে নেন। এরপর পুনরায় আগের স্বামীকে বিয়ে করেন। হয়তো ছেলেটিকে শহরের স্কুলে ভর্তির জন্য আর কোনো উপায় খোলা ছিল না।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক কারণেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভেঙে যায়। তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমই এ জন্য একমাত্র দায়ী, বিষয়টি তেমন নয়। আধুনিক যুগের নতুন এই অনুষঙ্গ অবশ্য অল্প করে হলেও বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে- এই তথ্য এখন অনেক গবেষণাতেই স্বীকৃত।