কৈশোরে মা-বাবার কাছে গোপন রাখা বিষয়
কিশোর-কিশোরী বা টিনেজ ছেলেমেয়েরা অনেক কিছুই তাদের মা-বাবাকে বলতে চায় না। কারণ, মা-বাবারা সন্তানের এই বয়সটাতে অনেক বিষয় নিয়েই বেশ চিন্তিত থাকে। এর পেছনে বর্তমানের উন্নত প্রযুক্তি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সাথে অনেক মা-বাবা বুঝতেই চান না যে তাদের সন্তানেরও কিছু গোপনীয়তা রয়েছে। কিছু বিষয় তারা তাদের মা-বাবাকে বলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। অথচ বুদ্ধিমান মা-বাবারা খুব ভালো করেই জানেন কীভাবে বয়োসন্ধিকালে ছেলেমেয়ের আচরণ সংযত করতে হয় এবং কীভাবে এই অভ্যাস পরিবর্তন করতে হয়। কিন্তু এত বোঝাশোনার বাইরেও কিশোরদের একটি আলাদা জগৎ আছে। তারা চায় এ বিষয়টি পৃথিবীর কেউ না জানুক। আর বলতে গেলে এসব অজানা কথার মাঝেই উঁকি মেরে থাকে হাজারটা বিপদ। আর এই ভয়েই সবসময় মা-বাবারা আতঙ্কে থাকেন।
গোপন করার বিষয়টি বয়স পরিবর্তনের সঙ্গেই পরিবর্তিত হয়। কেন টিনেজ ছেলেমেয়েরা নিজের কথা কাউকে বলতে চায় না? এর প্রধান কারণ হলো ‘ভয়’। যদি কোনো এক সময় সে তার চরম সত্যি কথার জন্য মা-বাবার কাছ থেকে শাস্তি পেয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে সে আর কোনো কিছু তার মা-বাবার কাছে বলার চেষ্টা করবে না। এটাই একমাত্র কারণ ছেলেমেয়েদের কথা লুকানোর। সন্তানের গোপনীয়তার মূল্য দিন কিন্তু তার আচরণের দিকেও খেয়াল রাখুন। যে বিষয়গুলো ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা তাদের মা-বাবার কাছে গোপন রাখে তার কিছু দিক বোল্ডস্কাই ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রেমের সম্পর্ক
কৈশোরে প্রেমের সম্পর্ক থাকাটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। পরিবার ও সমাজের ভয়ে অনেক ছেলেমেয়ে তাদের এই সম্পর্কের কথা গোপন রাখে। আদিযুগ থেকেই বিষয়টি সন্তানেরা সবার কাছ থেকে লুকানোর চেষ্টা করে। এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হলো, সন্তানদের স্বাধীনতা দিন, যেন যেকোনো বিষয় আপনাদের সঙ্গে সহজেই তারা বলতে পারে। বিশেষ করে ছোটবেলা থেকেই এই ভয়ের আতঙ্কটা কাটাতে পারলে টিনেজে তারা এ ধরনের বিষয় লুকানোর চেষ্টা করবে না।
গোপন পার্টি
যখন মা-বাবারা বাসায় থাকেন না তখনই টিনেজ ছেলেমেয়েদের মাথায় ঘুরতে থাকে গোপন পার্টির কথা! কারণ কিশোর বয়স আর গোপন পার্টির যোগসূত্র বহুলকাল আগে থেকেই। তারা সবসময় স্বাধীনতা চায় এবং তারা যদি মনে করে তাদের স্বাধীনতা নষ্ট করা হচ্ছে তাহলে তারা কোনোকিছুই তাদের মা-বাবার কাছে খুলেও বলবে না। আর পার্টির কথা তো একেবারেই না।
ক্লাস ফাঁকি দেওয়া
সাধারণত কিশোররা অকারণেই ক্লাস ফাঁকি দেয়। কিন্তু বিষয়টি তারা তাদের পরিবারকে জানাতে চায় না। তাই মা-বাবার অবশ্যই বিষয়টিতে খেয়াল রাখা উচিত। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তারা কী করে এই বিষয়ে তাঁদের সতর্ক হওয়া উচিত। সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণই একমাত্র এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।
প্রযুক্তির অপব্যবহার
কিশোর-কিশোরীরা আজকাল সারাক্ষণ ফোন, ফেসবুক, চ্যাটিং নিয়েই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু তাদের কারা কারা বন্ধু, কাদের সঙ্গে চ্যাটিং করছে- এসব বিষয় কখনোই মা-বাবাকে বলে না। প্রত্যেক মা-বাবারই এই বিষয়ে নজর রাখা উচিত। কারণ এই ছোট ছোট গোপন কথাগুলোর মাঝেই বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।
কিছু বন্ধুর কথা লুকানো
সব বন্ধুই যে ভালো হবে এমনটা ভাবা কিন্তু ঠিক না। ভালো-মন্দ দেখে তো আর বন্ধুত্ব হয় না। কিন্তু মা-বাবারা সন্তানদের কিছু বন্ধু থেকে সবসময় এড়িয়ে চলতে বলেন। যা সন্তানদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য একটি বিষয়। কারণ হুট করেই তো আর বন্ধুত্ব নষ্ট করা যায় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তারা তাদের মা-বাবার কাছ থেকে সেসব বন্ধুর কথা লুকানোর চেষ্টা করে। সন্তানদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি না করে তাদের প্রতি নজর রাখাটা জরুরি। কারণ আপনি নিষেধ করলেও তারা অনেক কিছু মানতে রাজি না।
খারাপ অভ্যাস
কৈশোরে ছেলেমেয়েরা সবসময়ই নতুন কিছু নিয়ে পরীক্ষা করতে আগ্রহী থাকে। এই বয়সেই তাদের বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্যের প্রতি আসক্তি হতে পারে। যা যেকোনো মূল্যেই সন্তানরা তাদের মা-বাবার কাছ থেকে লুকাতে চায়। তাই সন্তানদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। তাদের বুঝিয়ে খারাপ পথ থেকে বিরত রাখুন। না হলে একসময় অনেক বড় সমস্যায় পড়ে যেতে পারে আপনার সন্তান।