সন্তান কি ইন্টারনেটে আসক্ত?
এটা সত্য, জীবনটাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে ইন্টারনেট। দুনিয়া এখন আসলেই আমাদের হাতের মুঠোয়। অবসর কাটাতে, যেকোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে, প্রিয়জনের সঙ্গে আড্ডা দিতে ইন্টারনেট একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম। আমরা প্রায় প্রত্যেকেই অবসরযাপনের অনেকটা সময় ব্যয় করি ইন্টারনেটে বুঁদ থেকে। এরই একটা মারাত্মক কুফল হিসেবে দেখা দিয়েছে শিশুদের ইন্টারনেট আসক্তি। আজকাল প্রায়ই একটা শব্দ শোনা যায় 'স্ক্রিনেজার'। সেইসব শিশুদের ক্ষেত্রে শব্দটি ব্যবহার করা হয়, যারা ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত এবং দিনের অনেকটা সময় কাটায় ইন্টারনেট নিয়ে। এ কথা অনস্বীকার্য যে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেট সম্পর্কে অজ্ঞ থাকলে চলে না। কিন্তু শিশুর অবসরযাপন বা খেলাধুলার একমাত্র সঙ্গী যদি হয়ে ওঠে ইন্টারনেট, তাহলে তা খুব চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তাই রাশ টানতে হবে সঠিক সময়েই। কীভাবে কাটাবেন এই মোহ, ওয়েবরুট ডটকমের মাধ্যমে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেসব কথা।
১। শিশুর ইন্টারনেট আসক্তি কাটাতে বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আমরা যদি সারাক্ষণ মোবাইল ফোনে চ্যাটিং করি বা কম্পিউটারে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ত থাকি, তাহলে সন্তানের মনে হবে, এটাই স্বাভাবিক। সন্তানের এই নেশা কাটানোর জন্য তাই নিজেও যতটা সম্ভব ইন্টারনেটের ব্যবহার কমান।
২। অফিস থেকে বাসায় ফিরে সন্তানের সঙ্গে সময় কাটান। ওকে কাছে টেনে নিয়ে একসঙ্গে সারা দিনের গল্প করুন। আর এই সময়টাতে আপনারাও ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকুন। আপনার এই স্পর্শ, আদরগুলো ওর জন্য খুব জরুরি। এতে বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
৩। আপনি যদি সন্তানকে পড়তে বসিয়ে নিজে মোবাইলে গেম খেলেন কিংবা সোশ্যাল সাইটের কৌতুক পড়ে হাসেন আর আশা করেন সন্তান মন দিয়ে পড়াশোনা করবে, সেটা কিন্তু সম্ভব নয়। সন্তান যদি তখন পড়া ছেড়ে উঠে এসে মোবাইলে গেম খেলতে চায়, তখন তাকে দোষ দেওয়া যায় না। তাই সন্তান যখন পড়তে বসবে, তখন আপনি ইন্টারনেটে ব্যস্ত না থেকে বই বা ম্যাগাজিন পড়ুন কিংবা অন্য কাজ করুন। আপনাকে দেখেই আপনার সন্তান শেখে। তাই ওর রোলমডেল হয়ে উঠুন।
৪। অনেকেই ছোট শিশুর কান্না থামাতে কিংবা খাওয়ানোর সময় মোবাইল ফোন দেখান। শিশুও তখন সবকিছু ভুলে বাধ্য ছেলে বা মেয়ে হয়ে যায়। পথটা খুব সহজ, কিন্তু সমস্যার বীজ রোপণ হয় এখানেই। শিশুকে যতটা সম্ভব মোবাইল থেকে দূরে রাখুন। কান্না থামাতে কোথাও থেকে একটু ঘুরে আসুন। বিভিন্ন খেলা খেলে ওকে ভোলানোর চেষ্টা করুন।
৫। সন্তান একটু বড় হলে ওকে বোঝান যে মোবাইল কাজের জিনিস; খেলার বস্তু নয়।
৬। সন্তান কতক্ষণ মোবাইলে গেম খেলবে বা ইন্টারনেট ব্যবহার করবে, তার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিন।
৭। সন্তান ইন্টারনেটে কী ধরনের গেম খেলছে, কী ভিডিও দেখছে কিংবা কী সার্চ করছে, তা খেয়াল রাখুন।
৮। সন্তান একটু বড় হলে ওকে ইন্টারনেটের খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে সতর্ক করে দিন।
৯। আপনার ফোনে সব সময় পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখুন, যাতে সন্তান যখন তখন আপনার মোবাইল ফোন নিয়ে বসে পড়তে না পারে।
১০। শিশুকে ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখতে ওকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হন। কোনো খেলাধুলার কোর্সে ওকে ভর্তি করে দেন। এ ছাড়া নাচ, গান, ছবি আঁকতে উৎসাহ দিন। তবে এটা ঠিক, ইন্টারনেটের সবই কিন্তু খারাপ নয়। বরং সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে এটা ছোটদের শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি ভালো মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।