সাতকানিয়ায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি
টানা ছয় দিনের বন্যায় বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মানুষ। প্রতি ঘণ্টায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। শিশুদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
এদিকে, সাতকানিয়ার অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র কেরানীহাটে পানি উঠে পড়ায় আজ রোববার ভোর থেকে হাজারও মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বের হন।
এর আগে গত ৮ জুলাই থেকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পরে ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় দিন দিন অবনতি হয় বন্যা পরিস্থিতির।
উপজেলার কেওচিয়া, ডেমশা, বাজালিয়া পুরানগড়, ছদাহা, পশ্চিম ডেমশা, কাঞ্চনা, মাদ্রাসা, সোনাকানিয়া, নলুয়া, আমিলাইশ, চরতী ইউনিয়ন, কালিয়াইশ, ধর্মপুর ও সাতকানিয়া পৌরসভার অন্তত তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইব্রাহীম চৌধুরী, দুরদানা ইয়াছমিন নিজ নিজ ইউনিয়নে ৪৫ টন চাল ও তিন হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেন।
এ ছাড়া সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাজালিয়া, ডেমশা, নলুয়া, আমিলাইশ ও চরতী এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেন।
কেওচিয়ায় ত্রাণ বিতরণ করেছেন কেরানীহাট মা-শিশু জেনারেল হাসপাতালের নির্বাহী চেয়ারম্যান ওসমান আলী।
জানা গেছে, গত সোমবার থেকে বর্ষণ শুরু হলে বুধবার বিকেলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। এর পর থেকে প্রতিদিনই ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের মাহালিয়া এলাকায় চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বুধবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, মাহালিয়া রাস্তার মাথা ছাড়াও দস্তিদার হাট, বুড়ির দোকান এলাকার পর প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি বাড়তে থাকায় আরো বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কেওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘কেওচিয়ার সবকটি গ্রাম এখন পানির নিচে রয়েছে। যুবলীগ নেতা ওসমান আলীর অর্থায়নে আমরা সারা দিন ত্রাণ বিতরণ করেছি। তবে তা পানিবন্দি মানুষের তুলনায় অপ্রতুল। এখানে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা প্রয়োজন।’
চরতী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ডা. রেজাউল করিম জানান, চরতীর বেশ কয়েকটি গ্রাম পানির নিচে রয়েছে। দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, সাতকানিয়ার সবকটি ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি অনেক নাজুক। বিশেষ করে শঙ্খ নদ আর ডলু নদীর পানি বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ছে। এর ফলে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।
বাজালিয়া মীরেরপাড়া এলাকায় শঙ্খ নদের ভাঙনের কারণে লোকালয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার পুরো দিন ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় বেড়েছে পানির গতি।
সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান, পুরো সাতকানিয়া বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সরকারি তরফ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। আরো ত্রাণ দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ধনাঢ্য ও দানশীল মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বর্তমানে সাতকানিয়ার চরতী, আমিলাইষ, নলুয়া, কাঞ্চনা, ডেমশা, পশ্চিম ডেমশা, এওচিয়া, কেওচিয়া, ছদাহা, বাজালিয়া, পুরানগড়, ধর্মপুর, কালিয়াইশ ও সাতকানিয়া পৌরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড পানির নিচে রয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।