এত কিছুর পরও বাবুর অস্বীকার
মানিকগঞ্জে এক গৃহবধূকে (২৬) ধর্ষণের পর ভিডিও করেন আওয়ামী লীগ নেতার এক ছেলে। পরে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন। এরপর ওই নারীকে বিয়ে করলেও এখন তাঁকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিচ্ছেন না।
এই অভিযোগ করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ওই নারী।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মুরসালিন বাবু (২৯)। তিনি সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছেলে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ওই নারীর সঙ্গে এক ব্যক্তির বিয়ে হয়। এর দুই বছর পর ওই নারী একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। এর প্রায় দেড় বছর পর তাঁর স্বামী জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে চলে যান। বিদেশ যাওয়ার পর থেকেই ওই নারীর সঙ্গে স্বামী খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন। তিনি ঠিকমতো ওই নারীকে সংসারের খরচপাতিও দিতেন না।
এর মধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতার ছেলে মুরসালিন বাবু ওই নারীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। ওই নারী প্রস্তাবে রাজি না হলে বাবু বিভিন্ন সময় তাঁকে উক্ত্যক্ত করতেন।
মুরসালিন বাবু এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় একপর্যায়ে তাঁর সঙ্গে ওই নারীর প্রেমের সম্পর্ক হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় চার বছর আগে মুরসালিন একদিন তাঁর বাড়িতে ওই নারীকে যেতে বলেন। ওই নারী তাঁর কথায় ওই বাড়িতে গেলে মুরসালিন বাবু তাঁর অজান্তে খাবারে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে অচেতন করে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। বাবু ওই সময় মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও করে রাখেন।
কয়েকদিন পর মুরসালিন বাবু পুনরায় ওই নারীকে তাঁর বাড়িতে ডেকে ওই মোবাইলের ভিডিও দেখান ও তাঁকে বিয়ে করতে বলেন। যদি ওই নারী আগের স্বামীকে তালাক দিয়ে তাঁকে বিয়ে না করে তাহলে ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে বলে হুমকি দেন। এর পর নিরুপায় হয়ে তাঁর প্রস্তাবে রাজি হলে ২০১৬ সালের ৭ জুন ঢাকার একটি কাজী অফিসে চার লাখ টাকা দেনমোহরে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মুরসালিন বাবু সৌদি আরব চলে যান। এর পর বাবু ওই নারীকেও সৌদি আরব নিয়ে যান। পরে ৪০ দিন রেখে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেন।
দেশে আসার পর মুরসালিন বাবু ওই নারীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকেন। এর পর সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ওই নারী একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁর লোকজন দিয়ে তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। ওই নারী যদি আইনের আশ্রয় নেন তাহলে তাঁর আগের ঘরের সন্তান ও পরিবারের লোকদের মেরে লাশ গুম করে ফেলবে বলে হুমকি দেন। এর পর ওই নারী নিরুপায় হয়ে আইনি সহায়তা পেতে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘মুরসালিনের অপকর্মের বর্ণনা দিয়ে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
বিয়ের বিষয় অস্বীকার করে মুরসালিন বাবু জানান, তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।