হ্যাপি বার্থ ডে এনটিভি
আজ থেকে প্রায় ১৮ বছর আগে ২০০৩ সালে এনটিভি পরিবারে যোগ দিয়েছিলাম। আমার পজিশন ছিল অনুষ্ঠান বিভাগে অনুষ্ঠান কমিউনিকেশন নির্বাহী। তারপর অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছি দীর্ঘদিন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠান বিভাগে দক্ষতা ও সততার সাথে কাজ করেছি। আমি খুব স্মৃতিকাতর একজন মানুষ। এনটিভির জন্মদিন উপলক্ষে কিছু স্মৃতি মনে পড়ছে। তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা প্রয়োজন। আমাদের অনুষ্ঠানপ্রধান ছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ। যাঁকে বলা যেতে পারে এনটিভির প্রাণ। নান্দনিকতাবোধ ও প্রশাসনিক দক্ষতার অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়ে তিনি আমাদের এনটিভির অনুষ্ঠানের মান ও জনপ্রিয়তাকে সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর সহকর্মী হিসেবে আমাদের অনুষ্ঠান বিভাগের সবাই শিখে গিয়েছিলাম একটি পরিপূর্ণ সুন্দর অনুষ্ঠান নির্মাণের জন্য কোন বিষয় বর্জন করা ও সংযোজন করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠান বিভাগের মহাব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম, তাঁর অনন্য ব্যক্তিত্ব ও সহানুভূতিপূর্ণ হৃদয় ছিল কর্মক্ষেত্রে সবার জন্য আশীর্বাদ। দীর্ঘ ১৩ বছর এনটিভিতে দায়িত্ব পালন করেছি। কোনওদিন আমাদের বিভাগের কেউ কোনও অযাচিত চাপ অনুভব করিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কারও কাছ থেকে। চেয়ারম্যান মহোদয় থেকে যখন যে কোনও নির্দেশ আসত, আমরা আন্তরিকভাবে সময়মতো সেগুলো পালন করতাম। কোম্পানির ভালোর জন্য দর্শকের জন্য সুরুচিপূর্ণ অনুষ্ঠান নির্মাণের জন্য আমাদের অবারিত স্বাধীনতা দিয়েছিল এনটিভি কর্তৃপক্ষ। আর সেইসঙ্গে জবাবদিহিতার বিষয়টিও আমরা আমাদের কাজের সময় মাথায় রাখতাম। যাতে কোনও প্রকারে স্বাধীনতার অপব্যবহারে এনটিভির আসল গন্তব্য বিঘ্নিত না হয়। সে কারণে নিজেরা সচেতন থেকেছি, অন্যদেরও পরামর্শ দিয়েছি। যে কারণে আমাদের এনটিভি সত্যিকার অর্থে একটি মানসম্পন্ন ব্যবসায়িকভাবে সফল ও জনপ্রিয় গণমাধ্যমে রূপ লাভ করেছিল, যা আজ আরও স্থায়িত্ব অর্জন করেছে।
২০০৭ সালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এনটিভিতে আগুন লেগেছিল। আমাদের স্বপ্ন পুড়তে পারেনি সে আগুন। অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, একতার অভূতপূর্ব সমন্বয়ে সে বার খুব দ্রুততর সময়ের মধ্যে এনটিভি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। দর্শক, শুভাকাঙ্ক্ষী সবার মধ্যে এনটিভির জন্য অপূর্ব ভালোবাসার প্রকাশ দেখে বুঝেছিলাম, পরিশ্রম বৃথা যায়নি। বিজ্ঞাপনদাতা, দর্শক তাঁদের আস্থা ছিল যে আমরা হারিয়ে যেতে পারি না—যত ঝড় বয়ে যাক না কেন। আমাদের মধ্যে এ রকম আত্মিক মেলবন্ধন তৈরি হয়েছিল, যে বন্ধন আজও বহমান। আজ এনটিভিতে চাকরি করছি না। প্রায় পাঁচ বছর আগে কানাডায় স্থায়ীভাবে চলে এসেছিলাম। কিন্তু আজও এনটিভির প্রতি গভীর টান ও নৈকট্য অটুট। যাঁদের কলিগ হিসেবে ছিলাম একসময়, আজও তাঁদের হৃদয়ের আবেগ উষ্ণতা সমানভাবে প্রকাশিত হয়; আমি অনুভব করি।
পরিশেষে, প্রয়াত মোস্তফা কামাল সৈয়দ ও প্রয়াত মুহাম্মদ মুজাক্কের—এ দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলি; শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান মহোদয় আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী এ দুজন অমূল্য রত্নকে এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগে শুরু থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুভার দিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে একদল প্রশিক্ষিত, সৃজনশীল তরুণ প্রজন্মের মানুষের সম্মিলন ঘটেছিল এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগে। তাঁদের যৌথ শ্রম, মেধায় বাংলাদেশের টেলিভিশন দর্শকের কাছে সর্বকালের সেরা বেশ কিছু অনুষ্ঠান চিরকালীন ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আউটসোর্স থেকেও এমন কিছু নির্মাতা ও প্রযোজক এনটিভির জন্য কাজ করেছেন, যাঁদের অবদান বিস্মৃত হওয়ার নয়। কত কত বিখ্যাত নির্মাতা আজকের এ সময়ে, যাঁদের প্রথম কাজটি, প্রথম অভিষেক এনটিভির পর্দায়। তাঁদের প্রতিও আজ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাঁরা আজও এনটিভির পাশে রয়েছেন, থাকবেন। ১৮ বছর পূর্ণ করে ১৯ বছরের তারুণ্যে ভরপুর আমার প্রিয় এনটিভিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। হ্যাপি বার্থ ডে এনটিভি। এনটিভির বন্ধুদের প্রতি অন্তরের গভীর থেকে আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি।
লেখক : সাবেক প্রোগ্রাম ম্যানেজার, অনুষ্ঠান বিভাগ, এনটিভি। টরন্টো, কানাডা থেকে