মানুষ মানুষের জন্য
আমি আর আপনিই বাংলাদেশ
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/01/15/photo-1484483511.jpg)
আজকাল কী যে হয়েছে কথা বলি বেশি। প্রয়োজনের থেকে অপ্রয়োজনীয় বেশি। ধরুন রিকশায় উঠেছি। তো শুরু হয়ে গেল কথা।
ভাই বাড়ি কোথায়?
থাকেন কোথায়?
কে কে আছে সংসারে?
ইনকাম কেমন?
রিকশার চালক কিংবা সিএনজিচালিত গাড়ির ড্রাইভারদের এ ধরনের কথার উত্তর দিতে বেশ উৎসাহী দেখি। আমি খুব কম মানুষ পেয়েছি যারা এসব উত্তর দিতে অনীহা দেখিয়েছে। এই যে সরলতা আমি মুগ্ধ হই। নিজেকে ঝালাই করি। আচ্ছা, আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞাসা করত, ইনকাম কেমন? আমি কি এত সহজে বলে দিতাম? যেমন করে রিকশার চালক কিংবা সিএনজিচালিত গাড়ির ড্রাইভার বলে। আপা দিন শেষে ৫০০/৭০০ টাকা থাকে।
অপরিচিত তো নয়ই পরিবারের সদস্যরাই যখন জানতে চায় আমার রোজগার কত? আমি কেন তা সহজ করে বলতে পারি না? কেন পারি না? আমার ইনকাম কি তবে স্বচ্ছ না! নাকি অনেক বেশি রোজগার বলে অনিরাপত্তা? নাকি ভাগাভাগি হওয়ার ভয়! আচ্ছা একজন রিকশাচালকের যে গৌরব আছে তার ইনকাম নিয়ে আমার কি তা আছে?
আমিও তো আমার কাজকে ভালোবাসি। পরিশ্রম করি। সৎভাবেই আয় করি তবে?
রিকশাচালকদের বেশির ভাগই পরিবার ছাড়া একা থাকে। মাস শেষে, কেউ বা সপ্তাহ শেষে বাড়িতে টাকা পাঠায়। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানের জন্য বরাদ্দ থাকে ইনকামের বড় অংশ। অল্প আয় করেও পরিবারের প্রধান হিসেবে সবার দায়িত্ব পালন করতে পারার জন্যই কি তবে ওর এই গৌরব? যা অনেক বেশি রোজগার করার পরও আমার নেই। আর তাই শ্রদ্ধায় আমার মাথা সবসময় নিচু হয় খেটে খাওয়া এই মানুষদের জন্য।
ওরা শুধু নিজের জন্য নয়। পরিবারের সবার জন্য ওদের সংগ্রাম। তাই সংকোচহীন। সাহসী। লুকোচুরি কেবল আমার। আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের। কারণ আমাদের রোজগারের সামান্যতম অংশও মা-বাবা, ভাইবোনের জন্য বরাদ্দ নয়।পরিবারের সবার জন্য চিন্তা করার মতো বুকের ছাতি বড় নয়, তাই লুকিয়ে থাকা এবং লুকিয়ে রাখা। চোরের মতো বসবাস।
আচ্ছা বলুন তো আপনার মা/ স্বামী/ স্ত্রী কিংবা পরিবারের অন্য সদস্য কি জানেন আপনি কত রোজগার করেন?
আমি জানি বেশির ভাগ মানুষেরই উত্তর হবে অবশ্যই না।
তাহলে যদি প্রশ্ন করি কেন জানেন না?
উত্তর কী হবে তবে?
ওই যে, খুব সামান্যতম বরাদ্দ পরিবারের জন্য/মায়ের জন্য তাই লজ্জা। মায়ের প্রাপ্য যে আর একটু বেশি তা আপনি জানেন বলেই তো এই লুকোচুরি? আচ্ছা যতটা আপনার মা করেছেন, ভাই করেছেন, বোন করেছেন আপনার জন্য আপনি তার তিল পরিমাণও করেন কী? করেছেন কী?
করতে চান না বলেই কী লুকিয়ে রাখেন নিজের সামর্থকে?
লুকোচুরি ঝেরে ফেলুন। আপনাকে ঘিরে আপনার পরিবারের ভালোবাসার অধিকারের দাবিটুকু মিটিয়ে দিন। ভেঙে দিন সংকীর্ণতা। চলুন গৌরব করে বাঁচি। মাথা উঁচু করে বাঁচি। সবাইকে নিয়ে বাঁচি।
এই পৃথিবীতে সবার রোজগার সমান হয় না। আপনার স্বকীয়তাকে তাই গৌরবে জানান দিন। নায্য পাওনা বুঝিয়ে দিন নিজের সীমার মধ্যে।
আচ্ছা যে রিকশায় চড়েন আপনি প্রতিনিয়ত, তার নায্য পাওনা দেন কি সবদিন? চলুন আজ একটা চমকে দেওয়া কাজ করি। কী? ভাবছেন তো!
আজ যে রিকশায় চড়ে যাবেন আপনি মধ্য পথে আচমকা বিরতি নিন। পেট ভরে খাইয়ে দিন রিকশাচালকের চাহিদা অনুযায়ী। তারপর গন্ত্যব্যে যেতে যেতে খোশ গল্প করুন। নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া পরিশোধ করে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যান। আজীবন হিরো হয়ে থাকবেন এই রিকশাওয়ালার কাছে বাকি জীবন দেখা না হলেও। অন্যের স্বপ্ন পূরণের মধ্যে গৌরব আছে, সুখ আছে।
চলুন অন্তত আজকের জন্য বলি যার যতটুকু নায্য পাওনা তা পরিশোধ করব। চলুন আজ দেনা মুক্ত থাকি। হাত বাড়িয়ে তুলি আমার আপনার থেকে পিছিয়েপড়া আর একজন মানুষকে ভালোবাসায়। আজ সবাইকে নিয়ে ভালো থাকি। আপনি আর আমি ভালো থাকলেই আমাদের পরিবার ভালো থাকবে। পরিবার ধরে সমাজ। তারপর দেশ। প্রিয় বাংলাদেশ।
লেখক : তরুণ উদ্যোক্তা, লাকী আইডিয়াবিডি ডটকম।