সাত খুন
স্বর্ণকমল বনাম জলসাঘর
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/01/18/photo-1484736250.jpg)
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম দিকে শিমরাইল মোড় থেকে যে সড়কটি উত্তরে ডেমরার দিকে গেছে, ওটা ধরে কয়েক মিনিট এগোলে পূর্ব দিকে চোখে পড়ে খেজুর গাছ দিয়ে ঘেরা বেশ বড়সড় একটি বাড়ি। নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত নূর হোসেনের নিবাস ছিল এটি। বাড়িটির শখানেক গজ দূরে একটি বিশাল জলাশয়ে একসময়ে মাছ চাষ করা হতো। ওই জলাশয়ের ওপরে একটা বেশ বড় ঘরকে স্থানীয়রা ‘জলসাঘর’ নামে ডাকে। কী কাজের জন্য ব্যবহার করা হতো এই ঘর? উত্তরটা জানা নেই অনেকের। তবে স্থানীয়দের কারো কারো ধারণা, নূর হোসেনের ‘জলসাঘর’ ব্যবহার করা হয় আয়েশী আর গোপনীয় বিভিন্ন কাজে। ভিআইপিরা এখানে এসে নূর হোসেনের সঙ্গে দেখা করত।
বছর তিনেক আগেও এই জায়গা ছিল জমজমাট। জলাশয়ের ওপরে নির্মিত বাড়িটি সারাক্ষণ পাহারা দিত নূর হোসেনের লোকজন। খুলনার এরশাদ শিকদারের কথা এখনো মনে আছে অনেকের। কুখ্যাত সেই খুনির বিরুদ্ধে যত হত্যার অভিযোগ ছিল, তার চেয়ে কম ছিল না বিভিন্ন পদ্ধতিতে মানুষকে নির্যাতনের অভিযোগ। আর এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল তার বিভিন্ন আস্তানার কথা। নূর হোসেনের জলসাঘর কি এমন কোনো আস্তানা? এমন প্রশ্ন অনেকের। যাই হোক, নূর হোসেনের এই করুণ দশার পর জলসাঘরের সেই জৌলুস নেই ঠিকই, কিন্তু এখনো অক্ষত তার ‘জলসাঘর’। যেমন করে টিকে আছে এরশাদ শিকদারের স্বর্ণকমল, কুকর্মের সাক্ষী হয়ে।
টিনের নীল রঙের জলসাঘরের পরিণতি কী হয়, সেটা জানতে আগ্রহী অনেকেই। জলসাঘরে যাওয়ার জন্য কয়েকটি নৌকা রাখা থাকত। সন্ধ্যার পরেই নৌকায় চড়ে নূর হোসেন ও তার সহযোগীরা যেত ঘরটিতে। রাতভর চলত উল্লাস আর আমোদ-প্রমোদ। মদ-জুয়ার আসরও বসত সেখানে। প্রায়ই বিশেষ অতিথির সঙ্গে এ ঘরে বসেই কথা বলত নূর হোসেন।
যখন ঘরটিতে আসর বসত, এলাকার অনেকে দিনের বেলায় পুকুরে গোসল করার নামে কাছে যেত। ওপরে না উঠলেও ঘরের চারদিক থেকে, পানির নিচ থেকে দেশি-বিদেশি অনেক বোতল কুড়াত। পরে সেগুলো বিক্রি করত তারা। বোতলগুলো অনেক দাম দিয়ে কিনত অনেকে।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সাত খুনের পর পলাতক হয় নূর হোসেন। এরপর পরিত্যক্ত হয় ঘরটি। ঘরে থাকা আসবাব সরিয়ে নেওয়া হয়। নূর হোসেনের সহযোগীরা সরে পড়ার পর ধীরে ধীরে স্থানীয় মানুষ যেতে শুরু করে সেখানে। জলসাঘরের পাশেই দত্ত বাবুর মালিকানাধীন বিশাল বালুর মাঠ। এসব এলাকায় অবাধে চলত নূর হোসেনের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
লেখক : সংবাদদাতা, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।