ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বের সবচেয়ে শান্তির দেশ হিসেবে পরিচিত সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে শুরু হয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ৪৭তম সম্মেলন-২০১৭। প্রতিবছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনে যোগ দিতে সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যানের বিশেষ আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন সেখানে রয়েছেন।
চার দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় তিন হাজার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতা, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক নেতা, বাছাইকৃত বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য একত্র হয়েছেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম হলো জেনেভার কলোগনি-ভিত্তিক সুইজারল্যান্ডের একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশন। এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে সুইস সরকার কর্তৃক স্বীকৃত। সংস্থাটির আদর্শ ও উদ্দেশ্য হলো ব্যবসা, রাজনৈতিক, শিক্ষাগত এবং সমাজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সূচকের অবস্থার উন্নতির মাধ্যমে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও শিল্প খাতের এজেন্ডাগুলো বাস্তব রূপ দেওয়া। সম্মেলনের একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, ৪৭ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। ডব্লিউইএফের নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াবের আমন্ত্রণে ১৮ জানুয়ারি বুধবার থেকে অনুষ্ঠেয় মূলপর্বে বাংলাদেশ, সুইডেন, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, শ্রীলঙ্কা, পেরু, জর্ডান, মিসর, কাতারসহ ৪৫টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং ডব্লিউটিও, ইউনেস্কো, ইউএনডিপি, আঙ্কটাড, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিরা যোগদান করেছেন। এ ছাড়া জি-২০ দেশগুলোসহ ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদল এবং জাতিসংঘের নবনির্বাচিত মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস এ সভায় অংশ নিয়েছেন।
আমাদের দেশের বর্তমান নেতৃত্বের সৌভাগ্য যে, এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ হাই র্যাংকিং অর্থনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশেষ আমন্ত্রণে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। এ সুযোগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন ইস্যু নিয়ে কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে মিলিত হওয়ারও সুযোগ পাচ্ছেন। এরই মধ্যে সেশন শুরুর আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াব। তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ডরিস লিউথার্ডসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় করেছেন। তা ছাড়া শেখ হাসিনা পরিবেশের অংশ হিসেবে একই ভেন্যুতে পাশাপাশি ‘শ্যাপিং নিউ ওয়াটার ইকোনমি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় যোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের আগে এসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর একজন সফরসঙ্গী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেখানে আরো যাঁরা বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্ল্যানারি সেশনে অংশ নেবেন, তাঁরা হলেন—দক্ষিণ আফ্রিকা ও মরিশাসের প্রেসিডেন্ট এবং নরওয়ে, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও পেরুর প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ। এসব সম্মেলনে যোগদানের একটি বিশেষ সুবিধা হলো, সেখানে গিয়ে নিজের সমস্যা যেমন আলোচনা করা যায়, ঠিক তেমনি নিজের দেশের সঙ্গে অন্যান্য উন্নত দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে সহজ হয়। প্রকারান্তরে বাংলাদেশেরই লাভ হয়। কারণ যেসব দেশ এখনো বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকৌশল সম্পর্কে এতটা অবগত নয়, তাদের সেগুলো জানাতে পারলে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হয়। তা ছাড়া বাংলাদেশের নেতৃত্ব সম্পর্কে বহির্বিশ্বে ধারণা ভালো হয়। এগুলোও এক ধরনের অর্থনৈতিক কূটনীতি, যা দেশের জন্য দীর্ঘস্থায়ী কল্যাণ বয়ে আনে। এখন বিশ্ব চলে অর্থনৈতিক কূটনীতির ভিত্তিতে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেখানেই ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয় জড়িয়ে রয়েছে, সেখানেই কোনো না কোনোভাবে চীন চলে আসে। কারণ, তাদের যে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করতে না পারলে অলস হিসেবে পড়ে থাকবে, যা তাদের অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক। অন্যদিকে বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক হারে বিদেশি বিনিয়োগ। কাজেই বৈশ্বিক এসব ফোরামে দেনদরবার করে বিনিয়োগ বাড়ানেই হলো আমাদের সাফল্য। আর ডব্লিউইএফ সম্মেলনেও এর ব্যতিক্রম হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। তাই এর সাফল্য কামনা করছি এবং ২১ জানুয়ারি-২০১৭ সম্মেলন শেষে প্রধানমন্ত্রী যেন আমাদের জন্য ভালো কিছু খবর নিয়ে নিরাপদে দেশে ফিরতে পারেন, সে প্রত্যাশাই রইল।
লেখক : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।